দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮জানুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনে যে কোন ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দেশ সৃষ্টি করেনি৷ এ জন্য দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের কোন দরদ নেই৷তিনি বলেন, আমরা এদেশ সৃষ্টি করেছি৷ দেশের জন্য আমাদের দরদ আছে এবং লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের৷প্রধানমন্ত্রী বুধবার তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৫ উপলক্ষে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণকালে একথা বলেন৷
শেখ হাসিনা বলেন,উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে মৌলিক ব্যবধান রয়েছে৷ আমরা দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে চাই, কিন্তু এক্ষেত্রে বিএনপি দেশকে পরনির্ভরশীল করতে চায়৷ আমরা চাই দারিদ্র্য নিমর্ূল করতে-অথচ বিএনপি চায় দেশকে ভিক্ষুকে পরিণত করতে৷বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও জঙ্গী তত্পরতা দমনে দৃঢ় মানসিকতার সঙ্গে কাজ করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আপনাদের কাছে আমার একমাত্র প্রত্যাশা হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি- যাতে আমরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে আমি আপনাদের অনুমতি দিচ্ছি যে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ হত্যাকারী ঘাতকদের বিরম্নদ্ধে যখন যেখানে যে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা আপনারা নেবেন৷
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারম্যান তার সনত্মান হারানোর ব্যথা বুঝতে পারছেন৷ কিন্তু এটা দুভার্গ্য যে তিনি এখনো তার দলের লোকদের পেট্রোল বোমা হামলায় প্রতিদিন স্বজন হারানো মানুষের বেদনা ও আর্তনাদ বুঝতে পারছেন না৷বিএনপি জোটের অবরোধের মধ্যে দেশে চলমান নাশকতা যে কোনো উপায়ে দমন করতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেছেন, এখানে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নাই, কোনো চিন্তা নাই৷যা কিছু হোক সে দায়িত্ব আমি নেব৷নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি লাগাতার অবরোধের ২৩তম দিন বুধবার নিজের কার্যালয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ এল৷
পুলিশ সদর দপ্তর, মেট্রোপলিটন, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আপনাদের দিতেই হবে৷ আর সেটা দেওয়ার জন্য যত কঠিন কাজ হোক সেটা আপনারা নির্দ্বিধায় করে যাবেন; অন্তত এইটুকু লিবার্টি আমি আপনাদের দিচ্ছি৷ হরতাল-অবরোধে পেট্রোল বোমা হামলায় মানুষ হত্যার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এটা সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড৷ এই সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড দমনের জন্য যখন যেখানে যা করা প্রয়োজন আপনারা তাই করবেন৷ কারন মানুষ সেটা আশা করে৷তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে৷ তারা আশা করে কঠোর হস্তে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হবে৷
অবরোধের এই ২৩ দিনে নাশকতা ও সহিংসতায় অন্তত ৩৮ জনের মৃতু্য হয়েছে৷ যানবাহনে দেওয়া আগুন ও পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছে বহু মানুষ৷এর মধ্যে দুটি ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে, যিনি অবারোধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন৷ বিএনপির দাবি, সরকারের লোকেরাই নাশকতা করে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে৷ লিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আজ মানুষের ওপর যে জুলুম হচ্ছে, এই জুলুম যেন আর কেউ করতে না পারে৷ এবং যারা মানুষকে পোড়াবে বা মানুষের ওপর এভাবে আঘাত করবে তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার- সেটা আপনারা নেবেন৷
আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সংবিধান-গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব পালনে এ বাহিনীকে ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি৷পুলিশ সদস্যদের প্রতি আস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি, আপনারা যখন নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন তখন এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবেন৷ গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে নাশকতা দমনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে সন্ত্রাস ও নাশকতা মোকাবিলায় পুলিশের সঙ্গে জনগণকেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি৷সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ, সচেতন নাগরিক যারা, যারা শান্তি চায়- তাদেরকে এক করা৷ সেই সাথে সাথে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা রয়েছেন এবং র্যাব, আনসার-ভিডিপি, বিজিবি সকলকে সম্পৃক্ত করে এই সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড মোকাবিলা করতে হবে এবং যে কোনো উপায়ে দমন করতে হবে৷
বোমাবাজ ও নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে ইতোমধ্যে সরকার পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে৷ পুলিশের পক্ষ থেকে লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জুন মাসে বাজেট দেওয়ার পর পরিকল্পনা গ্রহণ করে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে এবং মূল কাজ হয় জানুয়ারি মাসে৷ দুর্ভাগ্য, এই জানুয়ারি মাসেই তাণ্ডব শুরু করে দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত৷ ফলে অর্থনীতির যে গতিশীলতা, উন্নয়নের যে গতিশীলতা ছিল- তা আজকে ব্যহত হয়ে যাচ্ছে৷বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, কত মায়ের কোল যে খালি হচ্ছে৷ আমি জানি না বিএনপি নেত্রী তিনি তার সন্তান হারিয়েছেন৷ তার নিজের ব্যাথা তিনি বোঝেন৷কিন্তু যাদেরকে পুড়িয়ে মারছেন; সেই সন্তানের পোড়া শরীর দেখে বা পোড়া লাশ দেখে সেই মায়ের মনে যে কি কষ্ট সেই কষ্টটা কি খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন? আমার একটা প্রশ্ন থাকল এখানে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম,সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে পুলিশ যে কোনো পদৰেপ নিলে দেশের মানুষ তা স্বাগত জানাবে৷সাধারণ জনগণ, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন না করার জন্য তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন৷নির্বাচন বর্জনের নামে তারা ধ্বংসযজ্ঞের পথ অনুসরণ করে এবং নিরীহ লোকদের হত্যা করে৷ তিনি বলেন, গত এক বছর দেশ ভালোভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে গেছে৷
তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি দেখে বিএনপি-জামায়াত পাগল হয়ে গেছে এবং সরকার উত্খাতের আন্দোলনের নামে তারা বেআইনী কার্যক্রম শুরম্ন করেছে৷ এ সময়ে তারা আরো ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা নিয়েছিলো৷ তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের অশুভ পরিকল্পনা ভন্ড করে দিয়েছে৷সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৪ বছরের মধ্যে দরিদ্রহার আরো ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার লৰ্যে সরকার কাজ করছে৷
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. এস মোজাম্মেল হক খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন৷ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শহিদুল ইসলাম ও ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান পুলিশ বিভাগের চাহিদার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন৷