দৈনিকবার্তা- মৌলভীবাজার, ২৮জানুয়ারি : হাজার হাজার অতিথি পাখির কিচির মিচিরে মুখরিত এখন মৌভীবাজার জেলা শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের বাইক্কা বিল। স্থানীয় ভাবে পরিচিত বেগুণি কালেমের সংখ্যা এই বিলে চোখে পড়ার মত। তবে এবার শুধু বাইক্কা বিলই নয়। বাইক্কা বিলের আশপাশে হাইল হাওড়ের অন্যান্য বিলগুলোতেও পাখি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আইপ্যাক (ইন্টিগ্রেটেড প্রোটেস্টেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট) সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত হাইল হাওড়ের অতীতে ১৭৫ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। এর মধ্যে ৯৫ প্রজাতিউ হচ্ছে জলচর। কিন্তু বিল সেচে মাছ ধরা, অবাধে পাখি নিধন, নির্বিচারে জলজ উদ্ধিদ আহরণ সহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হাইল হাওড়ে ও পাখি ও মাছের সংখ্যা কমে যায়। হাওড়ে পাখি ও মাছের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ভূমি মন্ত্রনালয় প্রায় ২৫০ একর বাইক্কা বিলকে জলাভূমির অভয়াশ্রম ঘোষণা করে।
বেসরকারি সংগঠন ম্যাচ (ম্যানেজমেন্ট অব অ্যাকুয়াটিক সিস্টেম থ্রো কমিউনিটি হ্যাজবেনট্রি) প্রকল্প বাইক্কা বিলে গড়ে তুলে স্থায়ী অভয়াশ্রম। এখানে মাছ ধরা, জলজ উদ্ভিদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এতে সুফলও পাওয়া গেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে বিলুপ্তপ্রায় ও বিপন্ন নানা জাতের মাছ বিলে বংশ বিস্তার করছে। সেই মাছ বর্ষায় হাওড়ের বিস্তীর্ণ জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাওরে মাছের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে শাপলা, পদ্ম, মাখনা, সিংরাইসহ নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ। আর বাইক্কা বিল নিরাপদ স্থান ও পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় অতিথি পাখি এখানে ফিরে আসতে থাকে। এবছরও অসংখ্য পাখি এসেছে। পাখির মধ্যে হাঁসজাতীয় পাখিই বেশি। তবে প্রতক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন লাল ঠোঁট ও বেগুনি রঙের স্থানীয় বাসিন্দাবলে পরিচিত পাখি বেগুনি কালেমের সংখ্যা অনেক। এরা বিলের পাড় ঘেঁষে কচুরিপানা ও ঘাসের উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও কিছু পাখি এসেছে যা এই বিলে আগে দেখা যায়নি।
বাইক্কা বিল ব্যবস্থাপনের সঙ্গে জড়িত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিরাশ মিয়া জানান, সব ধরনের প্রচুর পাখি এসেছে। এলাকাবাসী ও আইপ্যাক সূত্রে জানা গেছে, এবার শুধু বাইক্কা বিল নয়, হাইল হাওরের আশপাশের বিল এলাকাতেও পরিবেশ ফিরে আসায় পাখিরা ছড়িয়ে পড়েছে। এটা ভালো লক্ষণ। বিল এলাকায় বেড়েছে মেছো বাঘসহ বিভিন্ন রকমের বন্য প্রাণী। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পাখিশুমারিতে বাইক্কা বিলে প্রায় ১২ হাজার পাখি গণনা করা হয়েছিল। প্রায় ৪০ প্রজাতির পাখি এসেছিল। এ বছর এখনও পাখি গণনা হয়নি।
আইপ্যাকের ক্লাস্টার পরিচালক বলেন, পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় হাইল হাওরের পাখি কমে গিয়েছিল। অভয়াশ্রম করার পর বিলে মাছ বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পাখিও বেড়েছে। বাইক্কা বিল দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে হাওর থেকে পাখি ও মাছ হারিয়ে যায়নি। হাওরে পরিবেশ ফিরে এলে মাছ, পাখি, জলজ উদ্ভিদ ফিরে আসবে। ক্লাস্টার পরিচালক বলেন, অনেকেই মনে করে-পাখি মাছ খেয়ে ফেলে। এ ধারণা ঠিক নয়। খুব কম পাখিই শুধু মাছ খেয়ে থাকে। বেশির ভাগ পাখিই জলজ উদ্ভিদ, বীজ, কচুরিপানা ও শস্যদানা খেয়ে থাকে। বাইক্কা বিলে কালেম পাখির সংখ্যা অনেক। এরা স্থানীয় বাসিন্দা। কিন্তু বর্ষায় বিল এলাকায় থাকে না, অন্য কোথাও চলে যায়।