ময়মনসিংহ

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ২৬ জানুয়ারি: ক্ষমতা বিকেন্দ্রীয়করণ জনগণের ক্ষমতায়ন ও তৃণমূল পর্যায়ে সেবা পেঁৗছে দিতে দেশে ময়মনসিংহের পাশাপাশি আরো দুটি বিভাগ গঠিত হতে পারে৷মন্ত্রিসভা সোমবার বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলো নিয়ে একটি এবং বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার সমন্বয়ে অপর একটি বিভাগ গঠনের সম্ভাব্যতা ও উপযোগিতা যাঁচাইয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে৷ একই সাথে বৃহত্তর ময়মনসিংহে একটি প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের প্রয়োজনীয় পদৰেপ নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷

সোমবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ নির্দেশ দেয়া হয়৷বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূইয়া সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, প্রশাসনিক সংস্কার সম্পর্কিত জাতীয় বাসত্মবায়ন কমিটির (নিকার) চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্মের আরো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সুপারিশের জন্য এখন একটি আনত্মঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করবে৷

তিনি বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী একমাত্র বলেছেন যে, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পর এখন নতুন বিভাগ, জেলা ও থানা গঠনের তেমন কোনো প্রয়োজন নেই৷ কিন্তু প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের ক্ষমতায়ন ও সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পেঁৗছে দিতে নতুন বিভাগ গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখছে সরকার৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে দেশের চা-শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ চা-বিল-২০১৫’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ এর মূল আইনটি যথাক্রমে ১৯৭৭ এবং ১৯৮৬ সালে সামরিক শাসনামলে অধ্যাদেশ আকারে জারি ও সংশোধিত হয়৷মন্ত্রিপরিষদ সামরিক শাসন আমলে জারিকৃত অধ্যাদেশ বাংলা ভাষায় সময়োপযোগী করা ও রূপানত্মরের পূর্ববতর্ী সিদ্ধানত্মের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই খসড়া প্রণয়ন করে৷প্রসত্মাবে এ আইনে অমান্যে সর্বাধিক ৬ মাস ও সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে৷

বৈঠকে চা-শ্রমিকদের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক কল্যাণ তহবিল আইন-২০১৩’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়৷ এতে বিদ্যমান কল্যাণ তহবিলে এক কোটি টাকা সীড মানি বৃদ্ধির প্রসত্মাব করা হয়েছে৷ এই অর্থ শ্রমিকদের সনত্মানদের শিৰা, বিবাহ ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় হবে৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভার সম্মতি পাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এখন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে৷ কয়টি জেলা ও কত আয়তন নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হবে তা নিকার বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে৷

সচিব বলেন, ময়মনসিংহ ছাড়াও বৃহত্তর ফরিদপুর এবং বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীকে নিয়ে আরও দুটি বিভাগ করার উপযোগিতা আছে কি না মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে তা দেখতে বলেছে মন্ত্রিসভা৷

ময়মনসিংহ বিভাগের কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ করা হবে৷ আগের দিনই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে ঢাকাকে ভেঙে তিনটি বিভাগ করার পক্ষে মত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷তিনি বলেন, মানুষকে সত্যিকারভাবে সেবা দিতে গেলে, উন্নয়ন করতে গেলে .সবচে ভাল হতো যদি আমরা ঢাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি৷

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রশাসনিক নতুন বিভাগ করতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, নতুন বিভাগ থানা বা জেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নিকার বৈঠকে৷ মন্ত্রিসভায় নির্দেশনা মূলক সিদ্ধান্ত হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে৷সচিব জানান, ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনে এখন একটি কমিটি করা হবে৷ এই কমিটি বিস্তারিত সব কিছু তৈরি করে নিকারের বৈঠকে তুলবে৷ কোন কোন জেলা নিয়ে বিভাগ হবে, সেখানে কোন কোন দপ্তর থাকবে তা নিকারেই চূড়ান্ত হবে৷

এদিকে, সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আল-সউদের মৃতু্যতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা৷ সোমবার সবিচালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা৷৯০ বছর বয়সে গত ২৩ জানুয়ারি মৃতু্যবরণ করেন আবদুল আজিজ৷আবদুল আজিজ বাংলাদেশের একজন পরম বন্ধু উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তার সময়ে বাংলাদেশের অবৈধ শ্রমিক বৈধ করা হয়েছে৷ এতে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে৷ সৌদি বাদশার মৃতু্যতে ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়৷ওই দিন দেশের সকল সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়৷বাংলাদেশের পক্ষে শোক ও সমবেদনা জানাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সৌদি আরবে গিয়ে সমবেদনা জানান৷

অন্যদিকে,ছোট ছেলের মৃতু্যতে খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে ফিরে আসায় লজ্জাবোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত দলের নেতারাও এসময় কথা বলতে পারতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃতু্যর দিন ২৪জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু খালেদা জিয়া দেখা দেননি৷সূত্র জানায়, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু গুলশান কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন৷মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আপনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, এতে সারা দেশের মানুষ আপনার প্রশংসা করেছে৷

মুজিবুল হক চুন্নুর এ কথা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যোগাযোগ করে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখলাম গেট বন্ধ৷ ছোট গেট দিয়ে ঢুকতে চেয়েছিলাম, ছোট গেটটিও তালাবদ্ধ৷ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একজন মা হয়ে আরেকজন মায়ের জন্য সমব্যথী হয়ে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলাম, ঢুকতে দিল না৷ এটা লজ্জার ব্যাপার৷ সামান্যতম সৌজন্যটুকু তো দেখলাম না৷ সেখানে বিএনপির অন্য নেতারাও তো ছিলেন, আমরা তাদের দেখিনি তা নয়৷ তারাও তো আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন৷

প্রধানমন্ত্রীর এ দেখা করতে যাওয়াকে রাজনীতিতে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও পুত্রশোকে কাতর খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল বলে দাবি করছে বিএনপি৷