দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি: শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, তৈরি পোশাকের পর বাংলাদেশের বিকাশমান চামড়া শিল্পের রফতানি ব্যাহত করতে আনত্মর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে৷ এর মোকাবেলায় তিনি হাজারিবাগ থেকে সাভারের পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরিতে দ্রম্নত ট্যানারি স্থানানত্মরের জন্য ট্যানারি মালিকদের প্রতি আহবান জানান৷ তিনি বলেন, সরকার জাতীয় স্বার্থে নির্ধারিত সময়সীমা আগামী মার্চের পর হাজারিবাগে একটি ট্যানারি স্থাপনাও রাখার সুযোগ দেবে না৷শনিবার রাজধানীর ফার্স হোটেলে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য: তৈরি পোশাকের পরবতর্ী সম্ভাবনাময় শিল্প’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন৷
বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরম্নল ইসলাম৷ বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ এ. সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মন্ডল, বাংলাদেশ ফিনিসড্ লেদার, লেদার গুড্স অ্যান্ড ফুট ওয়্যার অ্যাঙ্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু তাহের প্রমূখ বক্তব্য রাখেন৷
শিল্পমন্ত্রী বলেন,বর্তমানে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে সিইটিপির নির্মাণ কাজের ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে৷ শিল্প নগরীতে বরাদ্দ ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে ১৫২টির লে-আউট পস্নান জমা পড়েছে৷ অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ট্যানারির মালিকরা পস্নট নির্মাণ শুরম্ন করেছেন৷ তবে আগামী মার্চের মধ্যে যেসব মালিকরা তাদের শিল্প ইউনিট সাভারে স্থানানত্মর করবে না তাদের হাজারিবাগে কোন স্থাপনা রাখার সুযোগ দেয়া হবে না৷তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়ন করতে পারলে কারখানার মালিক যেমন ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন, তেমিন জাতীয় স্বার্থও সংরক্ষিত হবে৷
আমু বলেন,পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়ন বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার৷ এ অঙ্গীকার পূরণে সরকার হাজারিবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের লক্ষ্যে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে কেন্দ্রিয় বর্জ্য শোধনাগারসহ চামড়া শিল্পনগরি গড়ে তোলার পাশাপাশি ট্যানারি স্থানানত্মরে মালিকদের আড়াই শ’ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ সহায়তা দিচ্ছে ৷ তিনি এ সহায়তা গ্রহণ করে দ্রুত সাভারের শিল্পনগরিতে স্থাপনা নির্মাণ ও ট্যানারি স্থানানত্মরের জন্য মালিকদের পরামর্শ দেন৷ এর মাধ্যমে চামড়া শিল্প মালিকরা পরিবেশবান্ধব পণ্য উত্পাদন করে রফতানি বৃদ্ধিতে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, সাভারে সিইটিপির নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে৷ বুড়িগঙ্গাকে দূষনের হাত থেকে বাঁচাতে হাজারিবাগে কোন ট্যানারি রাখা যাবে না৷ একইসাথে হাজারিবাগের সব ট্যানারি সাভারে স্থানানত্মরিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশী চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের কদর রয়েছে৷ এখন এই খাতে পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্পায়ন সম্ভব হলে রফতানি কয়েকগুন বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিশ্বে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার রয়েছে৷বাংলাদেশ বিশ্ব চাহিদার শতকরা একভাগেরও কম পূরণে সক্ষম হচ্ছে৷ পণ্য বৈচিত্রকরণ, পরিবেশবান্ধব পণ্য উত্পাদন ও সবুজ প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়িয়ে চামড়া শিল্পখাতে রফতানি কয়েকগুণ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে৷ পরিকল্পিত চামড়া শিল্প গড়ে তুললে, এখাত তৈরি পোশাক পরবতর্ী বৃহত্ রফতানি শিল্পখাত হিসেবে গড়ে ওঠবে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন৷
বক্তারা আরো বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে হলে, রফতানি পণ্য বৈচিত্রকরণ ও পণ্যের গুণগত মানোন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে৷ এর পাশাপাশি রপ্তানি গনত্মব্যও বৈচিত্রকরণের প্রচেস্টা চালাতে হবে৷ চামড়া শিল্পখাতের দক্ষ জনবল ও বাংলাদেশে উত্পাদিত গুণগতমানের চামড়া ব্যবহার করে আগামী এক দশকের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রফতানি সম্ভব হবে বলে তারা অভিমত দেন৷
উল্লেখ্য, চামড়া শিল্প একটি দেশিয় কাঁচামালনির্ভর একশ’ ভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পখাত৷ এ শিল্পের সাথে ২২০টিরও বেশি ট্যানারি, সাড়ে ৩ হাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং ১১০টি বৃহত্ শিল্প জড়িত৷ এসব কারখানায় বছরে ২৫ কোটি বর্গফুটেরও বেশি চামড়া উত্পাদিত হয়৷ এ খাতে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ কর্মরত রয়েছেন৷