দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ভোটারবিহীন সরকার মনে করছে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করলেই বোধহয় ২০ দলের আন্দোলনে ভাটা পড়বে, কিন্তু তারা ভুলে গেছে কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারের পরও আন্দোলনকারীরা যখন হরতাল অবরোধে অগ্রগামী তখন বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের পরিণতি হবে বর্তমান অবৈধ সরকারের জন্য রাজনৈতিক অন্তেষ্টিক্রিয়া৷শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রিজভী এসব কথা বলেন৷
রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রধান থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও শাসকদলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য-বিবৃতি শুনলে মনে হয় কে কত নিম্নরুচির ভাষা প্রয়োগ করতে পারে সেটারই প্রতিযোগিতা করছেন তারা৷ মহান জাতীয় সংসদকে যেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কার্যালয় কিংবা আওয়ামী মহাজোট সরকারের ক্লাব ঘরে পরিণত করা হয়েছে৷ সেখানে গানবাজনা থেকে শুরু করে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে গালিগালাজ এবং বর্তমান চলমান আন্দোলন দমানোর হুমকি-ধামকির প্রতিযোগিতা চলছে৷
রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার ও বিচার করার জন্য তারা তারস্বরে চিত্কার জুড়ে দিয়েছে৷প্রধানমন্ত্রীর ভাই শেখ সেলিম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে নাকি প্রকাশ্যে রাস্তায় ধরে এনে বিচার করা হবে৷ সেখ সেলিমের এ ধরনের বক্তব্য কেবল শেখ হাসিনাকে খুশি করা৷ কারণ এই শেখ সেলিমই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছিলেন৷ নিজের অপরাধ ঢাকা দেয়ার জন্যই বোনকে খুশি করতে এখন বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গলা ছেড়ে গালিগালাজ করছেন৷
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তা ও বিএনপির অস্তিত্ব প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র জ্বালা৷ সেটি বুঝতে পেরেই শেখ সেলিম দিনরাত বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য চিত্কার করে যাচ্ছেন৷ তবে বড় কোনো বিপদ ঘটে গেলে শেখ সেলিম যে শেখ হাসিনারও বিচার চাইবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করতে আইনি প্রক্রিয়া দেখা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, এখন একদলীয় রাষ্ট্র, একদলীয় জাতীয় সংসদ, একদলীয় নির্বাচন, একদলীয় জনপ্রশাসন এবং একদলীয় বিচার ব্যবস্থা বিরাজমান৷ সুতরাং সমগ্র রাষ্ট্রটিকেই আওয়ামীকরণ করা হয়েছে৷ এই ব্যবস্থায় আইনি প্রক্রিয়ার অর্থ হচ্ছেপ্রধানমন্ত্রীর জারিকৃত ফরমানের ধারাবাহিক বাস্তবায়ন৷ অর্থাত্ গ্রেফতার থেকে শুরু করে বিচারের রায় পর্যন্ত৷ কিন্তু জনগণও যে বিচারক আওয়ামী লীগ যেন সেটা ভুলে না যায়৷ আওয়ামী নেতারা ভুলে গেছে দেশের মালিক জনগণ, কোনো ভোটারবিহীন সরকার বা সংসদ নয়৷ অসভ্য আস্ফালনকারীরা নিশ্চয় জনগণের স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না৷
রিজভী অভিযোগ করেন, গত ছয় বছর ধরে বিএনপিকে ধ্বংস করতে এমন কোনো বেপরোয়া নিষ্ঠুরতা নেই যা এই অবৈধ সরকার করেনি৷ আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য কর্মসূচি ছিল বিএনপিসহ আন্দোলনরত বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম করা কিংবা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে ক্ষতবিক্ষত লাশ অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেয়া৷ আওয়ামী শাসন আর মরণের বার্তা যেন সমার্থক৷ জনগণের কন্ঠনালী কেটে গণতন্ত্রকে কবরস্থ করার ঐতিহ্য এদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই৷ সেজন্য নতুন রূপে নয়, আসল রূপেই বাকশালকে চূড়ান্ত রূপে দাঁড় করানো হয়েছে৷ আর এজন্যই বেগম জিয়াকে বন্দী করার নানা ফন্দি আঁটা থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র সরকারের সকল বার্তা প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ আর বাকস্বাধীনতার আইনগত অধিকারকে তো আগেই শূলে চড়ানো হয়েছে৷
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারকরা আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের বুকে গুলি করতে বলেছেন৷ গোয়েন্দা পুলিশরা বন্দুকযুদ্ধের গল্প বানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাহবা পাচ্ছেন৷ আন্দোলন ঠেকাতে প্রতিরোধ কমিটির নামে বেসামাল সশস্ত্র ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ এতকিছুর পরেও মৃতু্য তোরণ দুয়ারে দুয়ারে গণতন্ত্র ও স্বাধীন জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা অবরোধ-হরতালে নির্ভীক অগ্রবাহিনী হিসেবে অংশগ্রহণ করছে৷