দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জানুয়ারি: বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল৷ ব্রাসেলস থেকে পাঠানো এক বার্তায় কমিটির প্রধান জি ল্যাম্বার্ট বলেন, সরকার এবং বিরোধী পক্ষকে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে দ্রুত কার্যকর সংলাপ প্রয়োজন৷এ প্রতিনিধি দলের প্রধান জ্যঁ ল্যাম্বার্ট বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি চলছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক৷
তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলকেই জনগণের অবাধ চলাফেরা, সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে৷ সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে ল্যাম্বার্ট বলেন, সরকার ও বিরোধী দল- সবার কাছেই আমাদের এ প্রত্যাশা, যার অভাব আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি৷
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত যাতে আরও বিপদের মুখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে দলগুলোকে সত্যিকারের আন্তরিকতা ও দায়িত্ব নিয়ে প্রকৃত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট৷
নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে গত ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার জন্য গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হতে না পেরে সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷এই অবরোধের মধ্যে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে আগুন দেওয়া ও বোমাবাজির মতো নাশকতা এবং সহিংসতা ঘটছে, যাতে এ পর্যন্ত মৃতু্য হয়েছে অন্তত ৩০ জনের৷
বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উদ্বেগ জানালেও খালেদা জিয়া অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷
অন্যদিকে অবরোধ নাশকতার জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে হুকুমের আসামি করা যুক্তিযুক্ত৷ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে জি ল্যাম্বার্ট বলেন, মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার, সমাবেশ, ব্যক্তি, বাক এবং চলাচলের স্বাধীনতাকে সকল পক্ষের নিশ্চিত করা উচিত৷
দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে ভবিষ্যত্ বিপদমুখিতা থেকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক কমিটি৷বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্যে ইউরোপিয়ান কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ওভারসিজ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ইউকে৷
সংগঠনের চেয়ারম্যান আতা উল্লাহ ফারুকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ২০ জানুয়ারি মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান কমিশন ইউকের নিজস্ব কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করে৷
স্মারকলিপিতে দেশে গুম, খুন, ক্রসফায়ার ও রাজনৈতিক নির্যাতন, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি এবং গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থান তুলে ধরা হয়৷
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের মানবাধিকার গণতন্ত্র খুবই নাজুক ও হতাশাজনক; তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে সংলাপের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব আরেকটি নতুন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা উচিত৷
স্মারকলিপিতে বলা হয়, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অবাধ চলাচল বন্ধ করার জন্য পুলিশ কর্ডন এবং ইট-বালু, ময়লার ট্রাক দিয়ে তার কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে৷ রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে অনেক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা৷ মানবিক মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাষ্ট্রীয় টাকায় কেনা বুলেট দিয়ে রাজপথে মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে৷ যাত্রীবাহী গাড়িতে পেট্রলবোমার আঘাতে সাধারণ মানুষের জীবনহানি ঘটছে৷ বিষয়টি অনাকাক্ষিত এবং খুবই বেদনাদায়ক৷
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে রাজপথে প্রতিবাদী মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি শুধু নয়, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে গুম এবং ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মত কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ বিচরালয়কে ব্যহার করা হচ্ছে গ্রেফতার করা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের রিমাণ্ডে নিয়ে নির্যাতনের সিঁড়ি হিসেবে৷
জাতিসংঘের ঘোষিত মানবাধিকার সনদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্বিচারে রাজপথে গুলি,ক্রসফায়ারে নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা এবং যাত্রীবাহী গাড়িতে পেট্রলবোমার আঘাতে সাধারণ মানুষের জীবনহানিগুলো আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি রাখে বলে এতে উল্লেখ করা হয়৷ স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন; সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএইচ সোহাগ, সদস্য মুজিবুর রহমান, ইমাদ উদ্দিন রানা, মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মদ তওফিক, লুত্ফুর রহমান, মাহবুব হাসান তোপা , হাসান আহমদ শিপন, নিহাদ আহমদ সুপ্ত প্রমুখ৷