81343_7888

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জানুয়ারি: অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয় ঘেরাও করার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ ও আরও কয়েকটি সংগঠন৷ তবে পুলিশ বাধা দেওয়ায় তারা কার্যালয় পর্যন্ত যেতে পারেনি৷ কার্যালয়ের কাছে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরে তারা অবস্থান নিয়ে প্রায় সোয়া দুই ঘন্টা বিক্ষোভ করে৷বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকেই সোয়া একটা পর্যন্ত ওই বিক্ষোভ চলে৷ এ সময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, খেটে খাওয়া নগরবাসী, গুলশান থানা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা চালায়৷

গুলশান ২ নম্বর সড়ক পুলিশ তাদের বাধা দিলে সংগঠনগুলোর কয়েক শ নেতা-কর্মী গোলচত্বরে অবস্থান নেন ও বিক্ষোভ করেন৷ বেলা পৌনে একটার দিকে খেটে খাওয়া নগরবাসী’র ব্যানারে প্রায় ৫০ জনের একটি দল খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের একেবারে কাছাকাছি চলে যায়৷ তাদের সবার হাতে কোদাল ও ঝুড়ি ছিল৷ ভাত চাই, কাপড় চাই’, খালেদা জিয়া কেন কর্মসূচি দিয়েছেন?’, মানি না মানব না’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তারা কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ কার্যালয়ের ভেতরে যেতে দেওয়ার জন্য তারা পুলিশকে অনুরোধ করেন৷ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চান৷ পুলিশ তাদের কার্যালয়ের কাছে আটকে দেয়৷

পুলিশের বাধার মুখে খেটে খাওয়া নগরবাসীর সদস্যরা কার্যালয়ের কাছে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে অবস্থান নেন৷ এ সময় তাঁরা পেটে লাথি মেরো না, তুলে নাও অবরোধ, আমার বাবাকে পুড়িয়ে মারা হলো কেন? বলে স্লোগান দিতে থাকে৷ একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয় লক্ষ্য করে কয়েকটি ডিম ছুড়ে মারা হয়৷

নিজেকে লেবার সরদার পরিচয় দিয়ে সুমন বলেন,তাঁর বাসা উত্তর বাড্ডায়৷দেড় মাস ধরে তাঁরা কোনো কাজ পাচ্ছেন না বলে জানান৷ ৬ জানুয়ারি অবরোধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র দুই থেকে তিন দিন কাজ পেয়েছেন বলে জানান সুমন৷ তিনি বলেন, খাওয়া তো দূরের কথা, বাসাভাড়া দিতে পারছি না৷ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে গুলশান অভিমুখে সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ৷এদিকে, অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত চালক সমিতি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে৷

প্রসঙ্গত: বুধবার দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘেরাও’ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করে সংগঠনটি৷

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, অনৈতিকভাবে ডাকা হরতাল ও লাগাতার অবরোধ ২১ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাহার না করলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পরিবহন শ্রমিক লীগ মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় ঘেরাও করবে৷লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সবাইকে ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেয়ারও আহ্বান জানানো হয়৷

বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস ঘেরাওয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধায় গুলশান-২ নম্বরে সমাবেশ করে অবরোধ তুলে নিতে খালেদা জিয়াকে শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগসহ কয়েকটি সংগঠন৷সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী সমাবেশে বলেন, খালেদা জিয়াকে শনিবারের মধ্যে অবরোধ-হরতাল তুলে নিতে হবে৷ অবরোধে গাড়িতে আগুন দিয়ে চালক-শ্রমিকদের হত্যার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে ২৫ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করবে পরিবহন শ্রমিকরা৷

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, ঢাকা জেলা হিউম্যান হলার সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন,ঢাকা জেলা ট্রাক ও কভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, গামেন্টর্স শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কয়েকশ কর্মী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হলে পুলিশ নর্থ রোডের কাছে তাদের আটকে দেয়৷

পরে তারা গুলশান-২ নম্বর গোল চত্বরে এসে সমাবেশ শুরু করে এবং হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়৷সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান সমাবেশে বলেন, খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে বসে অবৈধ অবরোধে জ্বালাও- পোড়াওয়ের হুকুম দিচ্ছেন৷ উনি এই পথ থেকে সরে না এলে পরিণতি ভয়াবহ হবে৷

সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের এই ঘোরাও কর্মসূচি ঘিরে সকালেই গুলশান-২ এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ পুলিশের পাশাপাশি জলকামানের একটি গাড়িও সেখানে প্রস্তুত রাখা হয়৷ এদিকে ঘেরাওয়ে অংশ নিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত গাড়ি চালক সমিতি, ওলামা লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা প্রেসক্লাব থেকে কাকরাইল হয়ে গুলশানের দিকে যাওয়ার পথে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে৷

এরপর নেতা-কর্মীরা সেখানেই বসে পড়েন এবং খালেদা জিয়া ও তার কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন৷গত ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে খালেদা জিয়া সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন৷ তার মধ্যেই পুলিশের দমন-পীড়নের অভিযোগে বুধ-বৃহস্পতি ঢাকায় হরতাল করছে বিএনপি ও শরিকরা৷

এই অবরোধ-হরতালে এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক যানবাহন ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের শিকার হয়েছে৷ নাশকতা ও সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন, যাদের মধ্যে অনেকেই পরিবহন চালক ও সাধারণ যাত্রী৷

২৪ জানুয়ারির মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা না হলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷দেশ পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী বলেন, ২৪ জানুয়ারির মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার করা না হলে ২৫ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে৷একই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মলীগের সভাপতি ফাতেমা জলিল সাথী ২৫ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহব্যাপী কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন৷ বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারার হুকুমের আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তিনি৷দের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড ও গার্মেন্টস শ্রমকি সমন্বয় পরিষদও ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়৷পুলিশি বাধার মুখে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে যেতে না পেরে বাইরে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল ও স্লোগান দেন তারা৷ তাদের কন্ঠে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে ধ্বণিত হয় ভাত দে কাপড় দে স্লোগান৷

বেঁধে দেওয়া সময়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা না করলে নিজেরাই তাকে কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে আসার হুমকি দেন ঘেরাওকারীরা৷ পরে পুলিশ তাদের গুলশান-২ নম্বর চত্বরের দিকে সরিয়ে দেয়৷ঘেরাওকারীদের অপর একটি দল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পুলিশ তাদের শান্তিনগরের কাছে আটকে দেয়৷প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কূটনৈতিকপাড়ায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ৷ তাই এখানে কোনো সভা সমাবেশ করতে

অন্যদিকে,বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর কাঁচাবাজারের সবজি ও ক্ষুদে ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকেরা বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন৷বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কয়েকশ সবজি বিক্রেতা ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা বস্তাভর্তি ও হাতে সবজি ও কাঁচামাল নিয়ে বিক্ষোভ করেন৷

এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন৷ তারা অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি দাবি জানান৷ নইলে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তারা৷এ বিষয়ে ভাটারা কাঁচাবাজারের শ্রমিক সর্দার মিলন বলেন, আমরা ২০০ শ্রমিক, সবজি বিক্রেতা ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা সবজি ও কাঁচামাল নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে এসেছি৷ আমাদের সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ আমরা এই সবজি খালেদা জিয়াকে দিতে চাই৷ তা না হলে অবরোধ তুলে নিক অথবা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিক৷ এ ভাবে চলতে পারে না৷ আমরা মারা যাচ্ছি, আমাদের কোনো কাজ নেই৷

তিনি বলেন, বিক্ষোভ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাঁচাবাজারের সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ শ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন না৷ তাই, তাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজি খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে দিতে এসেছেন৷তিনি আরো বলেন, এ ছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও অবরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন৷নতুনবাজারের কাঁচাবাজারের শ্রমিক সর্দার নাসিরুদ্দিন বলেন, আমাদের আয়- রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে৷ আমরা এ জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে এসেছি৷ হয় তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবেন, নাহলে অবরোধ তুলে নিতে হবে৷পরে পুলিশি বাধার মুখে আগত শ্রমিক, ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন৷এই সব শ্রমিক, ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও সবজি বিক্রেতারা বস্তায় ভরে সবজি, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, পেঁয়াজ, বেগুন ইত্যাদি মাথায় ও হাতে নিয়ে আসেন৷