দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ জানুয়ারি: হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে আইনের আওতায় আনা যুক্তিযুক্ত ুতবে আইন নিজ গতিতে চলবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের তৃতীয় দিনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা বলেন৷সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম জানতে চান- চলমান হরতাল-অবরোধে ৩০ জনকে হত্যা করা হয়েছে,৬০০ এর বেশি যানবাহন পোড়ানো হয়েছে৷ বিএনপি চেয়ারপারসনের হুকুমে এসব ঘটেছে৷ হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে আইনের আওতায় আনা হবে কি না?
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া মানুষ হত্যায় নেমেছেন? দিনমজুর, খেটে খাওয়া, ট্রেন-বাস যাত্রী সাধারণ মানুষের ওপর কেন এ আক্রমণ, তা আমার বোধগম্য নয়৷ উনি ঘরবাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে হুকুম দিচ্ছেন৷ তার হুকুমেই এভাবেই মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে৷কাজেই হুকুমের আসামি হিসেবে তাকে আইনের আওতায় আনা, এটা হচ্ছে যুক্তিযুক্ত৷ আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে৷ তবে এটা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাছাই করে দেখবে এবং তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে৷
বিরোধীজোট আন্দোলনে জনসমর্থন না পেয়ে নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী৷তিনি বলেন, সরকার যখন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তখন বিএনপি-জামাত জোট নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে তা ব্যহত করতে চাইছে৷
চট্টগ্রাম ১৬ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের কোনো সমর্থন না পেয়ে বিএনপি-জামাত আরো নাশকতামূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে৷এছাড়া পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী নিয়োগ করে সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনের চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে জনগনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান৷
সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে ভীত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কোনো সমর্থন না পেয়ে তারা (বিএনপি-জামায়াত) আরও নাশকতামূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে৷ তারা বিবেক বর্জিতভাবে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করছে, কোথাও যাত্রীবাহী গাড়িতে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে৷
বুধবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর (চট্টগ্রাম-১৬) তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন-১ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগুন দিয়ে নারী, শিশুসহ নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করছে৷ সমপ্রতি একজন গর্ভবতী মহিলা তাদের নাশকতার শিকার হয়েছেন, তার শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে গেছে এবং গর্ভের শিশুটি মারা গেছে৷ তাদের এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ১৯৭১ সালের পাক সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে৷ এটা কোন রাজনীতি? প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, এরকম কাজে যারা লিপ্ত তারা কী মানুষ? জনগণের জানমাল রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব সরকারের৷ এজন্য পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনী নিয়োগ করে সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনের চেষ্টা চলছে৷এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসীদের যেখানে পাবেন ধরে পুলিশে সোপর্দ করুন৷ আপনারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নাশকতার পূর্ব তথ্য সরবরাহ করে জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সহায়তা করুন৷ সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সর্বদা তত্পর রয়েছে৷
মীর মোস্তাক আহমেদ রবির তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন ৭ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে সহিংস তাণ্ডব চালিয়ে নৃশংসভাবে বহু মানুষ হত্যা করেছে, পুলিশ মেরেছে এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করেছে৷ তারই ধারাবাহিকতায় সে সময় সাতক্ষীরা জেলাতেও জামাত-শিবির ও বিএনপির তাণ্ডবে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৬জন নিহত হয়েছে এবং ৫৫ জন আহত হয়েছে৷ আহতদের সরকারিভাবে চিকিত্সা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে৷ নিহতদের স্বজনদের ও আহতদের মধ্যে ৮৩জনকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে৷
নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের তৃতীয় কার্যদিবস শুরু হয়৷ বুধবার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়৷
অধিবেশনের শুরুতেই ছিল প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্ব৷ এরপর অন্যান্য মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব৷ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নোত্তর ছিল৷এরপরেই ছিল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা৷ এতে সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা অংশ নেন৷
এর আগে সোমবার (বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম এ অধিবেশন শুরু হয়৷বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর গঠিত দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি৷ গত ৩০ নভেম্বর শেষ হয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন৷বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জনের ফলে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলের আসনে জাতীয় পার্টি৷ যদিও শুরু থেকেই বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা চলে আসছে৷ এক সাথে বিরোধী দল ও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ায় সংসদ অধিবেশনকে সমালোচনামুখর করতে পারছে না জাতীয় পার্টি৷