1509246_10204693613113603_601429776002312001_n

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ জানুয়ারি: বাংলাদেশে হিন্দি ও উর্দু ছবির অবাধ প্রবেশ ঠেকানোর জন্য মঙ্গলবার এফডিসিতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে বুধবার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৯টি সংগঠনের সবাই কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে এফডিসি থেকে প্রেসক্লাব অভিমুখে একটি বিক্ষোভ মিছিল করবে।

শুক্রবার দেশের বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে হিন্দি চলচ্চিত্র ‘ওয়ান্টেড’। এই ছবির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে হিন্দি ও উর্দু ছবির দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। আর এ কারণেই গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও তারকারা। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এফডিসিতে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এতে পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এ থেকে জানা যায়, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে এফডিসি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি কাকরাইল হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, উপমহাদেশীয় ছবি অথবা হিন্দি ছবি আমদানির মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রকে শেষ করে দিতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খান বলেন, ‘একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য সে দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দেয়াই যথেষ্ঠ।বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্যই একটি মহল হিন্দি ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র বাংলাদেশে মুক্তি দেয়ার পাঁয়তারা করছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষর্ণ করছি। তিনি যদি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেন আমরা শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার তাই করব।’

প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্র এখন একটি বাজে সময় পার করছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশকে অনেক ভালোবাসেন এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তিনি বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার সবকিছুকেই ভালোবাসেন। আমি বিশ্বাস করি তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বাংলাদেশে কোন উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে না।’

অভিনেতা অমিত হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দি-উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র মুক্তি দিতে চায় তাদের নামের একটি তালিকা করে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের কাছে দেয়া উচিত। তাহলে সাধারণ মানুষ সহজেই এ কুলাঙ্গারদের চিনতে পারবে। যারা হিন্দি ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র মু্ক্তি দিতে চান তাদেরকে বলছি, যদি চলচ্চিত্রের মানুষের পেটে লাথি মারেন তাহলে আমরাও আপনাদের বুকে লাথি মারতে দ্বিধাবোধ করবো না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা জায়েদ খান, মিশা সওদাগর, মৌসুমী, নিরবসহ আরও অনেকে। এছাড়া চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজদের সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের পক্ষে। তাদের যুক্তি, মন্দা বাণিজ্যের কারণে দেশের বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হওয়ার পথে। তাই টিকে থাকার স্বার্থেই ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ভারতীয় ১২টি চলচ্চিত্র আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল। এর মধ্যে হিন্দি নয়টি ও বাংলা চলচ্চিত্র ছিল তিনটি। তবে হিন্দি কোনও চলচ্চিত্র মুক্তি না পেলেও ২০১১ সালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে দেখানো হয়েছিল ভারতীয় বাংলা ছবি ‘জোর’, ‘বদলা ও ‘সংগ্রাম’। তখন থেকেই চলচ্চিত্র অঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।