দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি: নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ চালিয়ে যাওয়া ২০ দল সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ অবরোধের দ্বাদশ দিন শনিবার জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়৷বিবৃতিতে বলা হয়, জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে হবে৷ এই মুহূর্তে এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করে সকলের অংশগ্রহণে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে হবে৷
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছে ২০ দল, যে কর্মসূচিতে সহিংসতায় ইতোমধ্যে প্রায় ২০ জনের মতো মানুষ নিহত হয়েছেন৷চলমান আন্দোলনে নিহত নেতা-কর্মীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছে বিরোধী জোট৷
সরকারের দমন-পীড়নের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের অবরোধ কর্মসূচির ওপর সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর কাপুরুষোচিত বর্বর হামলার নির্দশনগুলো দেখলে মনে হয়, সরকার মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷এজেন্টদের দিয়ে যানবাহনে আগুন লাগিয়ে পরিকল্পত নাশকতা করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানো ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রকাশ্যে বুকে গুলি করার নির্দেশ প্রদান থেকে বুঝা যায়, ভয়ংকর পরিস্থিতি এখন দেশে বিরাজমান৷
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কথিত বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে ২০ দল৷বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ জোটের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে তারা৷অবরোধে নাশকতা নিয়ে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক এবং বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ২০ দল
বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের বক্তব্যে জাতি স্তম্ভিত ও হতবাক হয়েছে৷ ওই দুজনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্যে জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে৷
বোমাবাজদের গুলি করতে বিজিবি সদস্যরা কুন্ঠিত হবে না বলে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন মেজর জেনারেল আজিজ৷ শহীদুল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, অবরোধ বেআইনি কর্মসূচি৷২০ দল বলেছে, বিজিবির হাতে মারণাস্ত্র জনগণের টাকায় কেনা৷ এটি কোনো দল ও ব্যক্তির প্রাইভেট বাহিনী নয়৷পুলিশের আইজি বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পর্কে যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে মনে হয়,একজন ছাত্রলীগের নেতা পুলিশের পোষাক পরে বক্তব্য দিয়েছেন৷ তার (আইজি) বক্তব্য চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ৷
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ‘অবৈধ’ সরকারের নির্দেশ না মানতেও আহ্বান জানিয়েছে ২০ দল৷ সেনাবাহিনী ও সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভাইয়ের কাছে একটি প্রশ্ন, তারা কি ৫ শতাংশ ভোটের অবৈধ সরকারের নির্দেশ শুনবে, না কি ৯৫ শতাংশ মানুষের পক্ষে থাকবে? এদেশের অত্যাচারীরা কোনোদিনই টিকতে পারেনি৷
২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্রমাগতভাবে মানুষের অধিকারগুলো সংকুচিত করেছে৷গণতন্ত্রে যে বিরোধী দলের বিশেষ একটি জায়গা আছে, সেটিকে তারা কখনই বিশ্বাস করেনি বলে অভিযোগ করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷
তিনি বলেন, গণতন্ত্রে স্বীকৃত বিরোধীদলের সব কর্মকাণ্ডকে বানচাল করতে তারা দমননীতি অবলম্বন করেছে৷তাদের দমননীতি অমানবিক, মধ্যযুগীয় এবং নাজি ফ্যাসিস্টদের সমতুল্য৷রিজভী বলেন, শুধুমাত্র কথা বলা, সভা,সমাবেশের অধিকারগুলোই তারা (আওয়ামী লীগ) হরণ করেনি বরং নাজিদের কায়দায় বিরোধীদলের নেতাদের অবরুদ্ধ, কারারুদ্ধ, মিথ্যা মামলাতে জড়ানো ছাড়াও অনেককে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে৷
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সমাজের নানাস্তরের মানুষসহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গুম, গুপ্তহত্যা ও ক্রসফায়ারের নির্মম শিকার হতে হয়েছে৷ ফলে, এই পৈশাচিক দুঃশাসনকে মোকাবেলা করার জন্য ২০ দলীয় জোট গঠন হওয়ার পর থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের হারানো অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷রিজভী বলেন, ২০ দলীয় জোটের অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকার অবৈধ একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করে আরো বেশি নির্দয় ও নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে৷
তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, বাক, ব্যক্তি ও সমাবেশের অধিকার আদায়, সবখানে নিরাপত্তাহীনতা থেকে দেশের মানুষের উদ্বেগ, উত্কন্ঠা দূরীভূত করতে গণমানুষের অবরোধ কর্মসূচির ওপর সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর কাপুরুষোচিত বর্বর হামলার নিদর্শনগুলো দেখলে মনে হয়, সরকার মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷
২০ জোটের পক্ষে রিজভী বলেন, ২০ দলীয় জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ১৪ দিন ধরে নিজ কার্যালয়ের ভেতর অবরুদ্ধ রেখে কার্যালয়ের চারদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ইট, বালু, কাঠের ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড করে রাখা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতা এবং দেশব্যাপী শত সহস্য নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রাখা, হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, এজেন্টদের দিয়ে যানবাহনে আগুন লাগিয়ে পরিকল্পিত নাশকতা করে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপানো, প্রকাশ্যে বুকে গুলি করার নির্দেশ ইত্যাদি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি এখন এ দেশে বিরাজমান৷
বিরোধীদলের আন্দোলনে দমনে সরকার নির্মম আচরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর এই নিষ্ঠুর কর্মযজ্ঞে নামানো হয়েছে দলীয় চেতনায় উজ্জীবিত বেশকিছু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের৷ আর এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, বেসামাল দলীয় ক্যাডারদের৷
উদাহরণ দিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন,যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে যৌথবাহিনী আওয়ামী প্রতিহিংসার চেতনা নিয়ে ছাত্রদলের এক নেতাকে হত্যা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে আগুন দিয়ে ছারখার করে দিয়েছে৷একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ৩ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ করার পর থেকে সারাদেশে চালানো হচ্ছে হিংস্র তাণ্ডব, রক্ত ঝরানো হচ্ছে বিভিন্ন জনপদে৷দেশের সরকারের দুঃশাসন চরম আকার ধারণ করেছে জানিয়ে বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন,দেশের প্রখ্যাত কুটনীতিক,বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী রিয়াজ রহমানও এই দুঃশাসনের ছোবল থেকে রেহাই পাননি৷ ক্ষমতাসীনদের মদদপুষ্ট দুষ্কৃতিকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে৷
বিরোধীদলের আন্দোলন দমনে সরকার আরো কঠোর হবে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যৌথবাহিনীর পাশাপাশি এখন নাকি সেনাবাহিনীও নামবে৷
২০ দলীয় জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, এই অবৈধ সরকারের অগ্রহণযোগ্য ও নিষ্ঠুর দুবর্্যবহারের কবলে গোটা জাতি আজ অপমাণিত৷ বৃহস্পতিবার বিজিবি মহাপরিচালক এবং শুক্রবার মহাপুলিশ পরিদর্শকের বক্তব্য জাতিকে স্তম্ভিত ও হতবাক করেছে৷ঔদ্ধতপূর্ণ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত এই বক্তব্য জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বলে বলে রিজভী অভিযোগ করেন৷
বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী ২০দলীয় জোটের পক্ষে বিজিবির মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও টওতিবাদ জানান৷বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ২০ দলীয় জোটের সব পর্যায়ের আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়৷বিবৃতিতে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিও জানানো হয়৷