দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি: জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির উদ্দেশে বলেন, আর কত লাশ চান? মানুষের জীবন কেড়ে নেবেন না৷ গুলি ফোটাবেন না৷ যুবকদের হাতে বোমা তুলে দেবেন না৷
শনিবার বিকেলে জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে আয়োজিত শান্তি সমাবেশ থেকে এ কথা বলেন এরশাদ৷ সারাদেশে জ্বালাও- পোড়াও, দমন-পীড়নের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় পার্টি৷
এরশাদ বলেন, একটি দল জনগণকে জিম্মি করে রাজনীতি করতে চায়৷ তাদের কারণে কল-কারখানা বন্ধ হচ্ছে৷ মানুষ অনাহারে আছে৷ সরকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ৷ এজন্য সরকারকে একদিন জবাবদিহি করতে হবে৷সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, এ দুই দলের কেউই প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করতে পারবে না৷ তাদের পরিত্যাগ করুন৷ শান্তির জন্য পরিবর্তন আনতেই হবে, আনতেই হবে, আনতেই হবে৷
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একে অপরকে প্রতিরোধের ঘোষণার মধ্যে ওই দুই দলেরই বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে বলেন এরশাদ৷ দুই দলকে প্রত্যাখান করে নতুন রাজনীতি গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি৷এরশাদ বলেন, ঘরে বসে থাকলে চলবে না৷ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷ রাস্তায় নামতে হবে৷ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে থাকা বিএনপির মধ্যে সংলাপেরও তাগিদ দেন তিনি৷সমাবেশে এরশাদ বলেন, একটি দল মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করতে চায়৷ তাদের কারণে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ মানুষ অনাহারে রয়েছে৷
সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ সরকারকে এ ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি করতে হবে৷এরশাদ জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, অন্যায়কে সহ্য করা বড় অপরাধ৷ আমরা বসে থেকে অপরাধী হতে পরি না৷ রাস্তায় নামতে হবে৷ এদের ঘৃণা করতে হবে৷জাতি আজ মহাদুর্যোগে পতিত হয়েছে৷ এ দুর্যোগ রাজনৈতিক দুর্যোগ৷ মানুষই এ দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে৷ এ দুর্যোগ থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় প্লার্টফর্ম তৈরির আহ্বান জানান তিনি৷
এরশাদ বলেন, মানুষের রক্ত নিয়ে হেলি খেলা হচ্ছে৷ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে৷ নারী, শিশু কেউ রক্ষা পাচ্ছে না৷ বাসের হেলপার ঘুমিয়ে ছিলো, তাকেও পুড়িয়ে মারা হয়েছে৷ কারও প্রতি মায়া মমতা নেই৷
বিএনপির উদ্দেশ্যে এরশাদ প্রশ্ন তোলেন, নতুন বছরে জনগণকে কি উপহার দিয়েছেন! মানুষের ভাগ্য পরিবর্তানের কথা বলেন৷ অথচ ২৮ জন মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন৷ ২৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে৷ এই কী তার নমুনা! ভাগ্য পরিবর্তনের কথা বলে মানুষকে পুড়িয়ে মারেন, এই কী রাজনীতি!
জনগণের উদ্দেশ্যে এরশাদ আরও বলেন, শান্তি চাইলে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে আসুন৷ একমাত্র জাতীয় পার্টি শান্তি আনতে পারে৷ এ দু’দল প্রতিহিংসার রাজনীতি ছাড়তে পারবে না৷ এদের পরিত্যাগ করুন৷তিনি বলেন, আমরা বলি জনগণই ক্ষমতার উত্স৷ অথচ তাদেরকেই পুড়িয়ে মারছি৷ এ কোন রাজনীতি৷ জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলছি৷ মানুষ এ দু’দলের অপরাজনীতি থেকে বাঁচতে চায়৷ আমরাও চাই দু’দলমুক্ত রাজনীতি৷
এরশাদ বলেন, কথা দিচ্ছি আমি আমার ফিরে এলে সন্ত্রাস বন্ধ হবে৷ সংঘাতের রাজনীতি বন্ধ হবে৷ উন্নয়ন ফিরে আসবে৷জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক সন্ত্রাস চলছে৷ এর দায় সরকারকেই নিতে হবে৷ জাতীয় পার্টি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না৷ জাতীয় পার্টি ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী৷শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা৷
তিনি বলেন, মিছিল-মিটিং করার স্বাধীনতা দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই৷ সেইসঙ্গে জ্বালাও-পোড়াও চলতে দেওয়া যাবে না৷ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পাটির্র মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ হান্নান এমপি, সুনীল শুভরায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূইয়া৷