16-01-15-Santinagar Bazar-1.jpgy

দৈনিকবার্তা=ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি: পরিবহন সঙ্কটে রাজধানীর কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত৷ হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে মাছ বাজারেও৷ শিং, বোয়াল, শোল, চিংড়িসহ অনেক মাছের দাম বেড়েছে ১শ’ টাকা পর্যন্ত৷ তবে স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের বাজার৷ প্রায় দুই সপ্তাহের টানা অবরোধে দেশে ভোগ্য পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা৷গত সপ্তাহের তুলনায় রাজধানীর কাঁচাবাজারে বেগুন, পটল, কাঁচামরিচসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত৷ আর দাম বাড়ার কারণ হিসেবে যানবাহন সংকটে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন বিক্রেতারা৷

এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতারা জানালেন, বাজারে এসে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের৷একই চিত্র মাছ বাজারের৷ বেশিরভাগ মাছের দামই বাড়তি৷ বাজারে ৭শ’ প্রাম ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২শ’ থেকে ২৩শ’ টাকায়৷ আর সপ্তাহ ব্যবধানে প্রায় ১শ’ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে শিং, চিংড়ি, শোল, বোয়াল, পাবদা৷ তবে রুই কাতল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই৷

মহাসড়কে পণ্য সরবরাহকারী যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম৷বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে অগি্নসংযোগ, ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে৷এ পরিস্থিতিতে রাজধানী বা রাজধানীর বাইরে সড়ক পথে কোনো পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দেশের অন্যতম বৃহত্‍ ভোগ্যপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিত্‍ সাহা৷তিনি বলেন, অবরোধের মধ্যে শুধু নদী পথে কিছু পণ্য সরবরাহ হচ্ছে৷ ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷

পণ্য সরবরাহ ঠিক না থাকায় মজুদ বাড়ার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদ বাবদও বেশি টাকা গুণতে হবে বলে জানান তিনি৷বিশ্বজিত্‍ সাহা বলেন, স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ২৮০০ থেকে ২৯০০ টন চিনি সরবরাহ করতেন তারা৷ এখন তা নেমে এসেছে ১২০০ টনে৷একইভাবে সয়াবিন ও পাম অয়েল মিলিয়ে প্রতিদিন ১২০০ টন সরবরাহের বিপরীতে বর্তমানে তা সর্বোচ্চ ৩০০ টন সরবরাহ হচ্ছে৷ ৫০০ টন আটার সরবরাহ নেমে এসেছে ১০০ টনে৷

একইভাবে সরবরাহ সমস্যার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী৷জয়পুরহাটের এই ব্যবসায়ী বলেন, চালের প্রধান প্রধান মোকামগুলো এখন অলস সময় কাটাচ্ছে৷ দেশের ১৭ হাজার চালকলের ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে৷ আর জয়পুরহাটের ৮০ শতাংশ মিল বন্ধ৷ সরবরাহ একদম নেই৷ কোনো ট্রাক চাল লোড করতে চাচ্ছে না৷ আবার ক্রেতারাও আসছেন না৷ আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে৷ ব্যবসা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷

গত ১০ দিনে চালের দামের কোনো হেরফের না হলেও বৃহস্পতিবার হঠাত্‍ করে ধানের দাম প্রতি মণে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানান লায়েক আলী৷চলমান অবরোধে দিনাজপুরে অন্তত পাঁচটি ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে৷ এরমধ্যে একটি আলু বহনকারী ট্রাকও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এই কয়দিনের অবরোধ ও হরতালে ৭০টি গাড়ি পোড়ানো ছাড়াও ৩৫০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েতউল্লাহ খন্দকার জানিয়েছেন৷

এ সময় সহিংসতায় ১৪ জন পরিবহন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানান তিনি৷আর তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন মালিকদের এই নেতা৷টিসিবির হিসেবে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্যতেল, ডাল, মুরগি, গরুর মাংস ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে৷

এছাড়া বেড়েছে দুধসহ বিভিন্ন শিশু খাদ্যের দাম৷ পাবনা-সিরাজগঞ্জ এলাকায় দুধ সংগ্রহ করতে পারছে না পাস্তুরিত তরল দুধ বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো৷ কমে গেছে দুধের সরবরাহ৷তবে রাজধানীতে এখনও সব্জির বাজার আগের মতোই রয়েছে৷ এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন৷ সিলেটে চলছে জ্বালানি তেলের সংকট৷ ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার খবর এসেছে৷

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সময়মত রপ্তানি পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না বলে সমপ্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ৷এজন্য চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে পোশাক শিল্পে ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বিজিএমইএ নেতারা বলেছেন৷ডিসকাউন্ট, এয়ার শিপমেন্ট ও অর্ডার বাতিল হওয়ায় এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম৷

এদিকে বৃহস্পতিবার ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টোয়াব এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত সংখ্যক পর্যটক পাচ্ছেন না তারা৷সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে চলতি বছর পর্যটন মৌসুমে তাদের ক্ষতির পরিমাণ ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন এই শিল্পের ব্যবসায়ীরা৷

টানা অবরোধে ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা৷ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় চাল সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷ শেষ হয়ে এসেছে মজুদও৷ সব মিলিয়ে অস্থির হয়ে উঠছে চালের বাজার৷ কয়েক দিনের ব্যবধানেই রাজধানীতে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ৩-৪ টাকা৷চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা বলছেন, প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন৷ বাদ যাচ্ছে না পণ্যবাহী ট্রাকও৷ ভাংচুরের পাশাপাশি এসব যানে অগি্নসংযোগের ঘটনাও ঘটছে৷ তাই ঝুঁকি নিয়ে রাজধানীতে চাল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না৷

বাবুবাজার ও বাদামতলী রাজধানীর প্রধান দুই চালের আড়ত৷ এ দুই বাজারে চালের দোকান রয়েছে দুই শতাধিক৷ দোকানিরা জানান, অবরোধের আগে মজুদ চালই এত দিন বিক্রি করছিলেন তারা৷ মজুদও এখন শেষ হওয়ার পথে৷ নতুন করে কোনো চাল বাজারে আসছে না বললেই চলে৷ স্বাভাবিক সময়ে বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকায় প্রতিদিন চালভর্তি ৬০-৭০টি ট্রাক এলেও এখন আসছে দু-তিনটি৷ এসব ট্রাককে ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ৷বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, অবরোধ শুরুর পর থেকেই চাল সরবরাহ প্রায় বন্ধ৷ মিলাররা চাল সরবরাহে প্রস্তুত থাকলেও অবরোধের কারণে তা আড়তে আনা সম্ভব হচ্ছে না৷ সহিংসতার কারণে কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না৷ এ অবস্থা দীর্ঘ হলে রাজধানীতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে চালের৷

মজুদ ফুরিয়ে আসায় রাজধানীতে এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম৷ পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা৷ খুচরায় বেড়েছে আরেকটু বেশি, কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা৷রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়৷ অবরোধের আগে একই মানের চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪৬-৪৭ টাকা৷ একইভাবে ৪৬-৫২ টাকার নাজিরশাইল ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকায়৷ এছাড়া অবরোধের আগে ৩৭-৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া লতা চালের দাম এখন ৪০-৪২ টাকা৷ আর ৩২-৩৩ টাকা দরের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকায়৷

বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী আবদুল করিম বলেন, অবরোধের কারণে কয়েক দিন ধরে চাল সরবরাহ প্রায় বন্ধ৷ এতে রাজধানীর বাজারগুলোয় চালের সংকট দেখা দিচ্ছে৷ এরই প্রভাব পড়েছে দামে৷ এ অবস্থা আরো কিছুদিন চললে দাম আরো বাড়বে৷

রাজধানীতে চাল সরবরাহ হয় মূলত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে৷ পাশাপাশি কুষ্টিয়া, যশোর ও ঝিনাইদহ থেকেও রাজধানীতে চাল আসে৷ রাজধানীর ঠিক বিপরীত চিত্র এসব এলাকার চালকলগুলোয়৷ সরবরাহ করতে না পারায় চালের বড় ধরনের মজুদ গড়ে উঠেছে মিলগুলোয়৷ পরিস্থিতির কারণে চাল উত্‍পাদন বন্ধও রেখেছে কোনো কোনো মিল৷নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, জেলার চালকলগুলোয় প্রতিদিন চাল উত্‍পাদন হয় গড়ে সাড়ে চার হাজার টন৷ রাজধানী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয় এ চাল৷ কিন্তু ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কারণে চাল সরবরাহ করতে পারছেন না মিলাররা৷ বাধ্য হয়ে অনেকেই উত্‍পাদন আপাতত বন্ধ রেখেছেন৷

নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা বলেন, টানা অবরোধের কারণে তাদের মোকামেই শুধু নয়, দেশের অন্যান্য মোকামেও চাল বিক্রি বন্ধ রয়েছে৷ সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন ভাংচুর ও অগি্নসংযোগের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ চাল পরিবহন করতে রাজি হচ্ছেন না৷ যাওবা যেতে রাজি হচ্ছেন, দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছেন৷ আগে প্রতি ট্রাক চাল ঢাকায় পাঠাতে ১৫-১৭ হাজার টাকা ভাড়া লাগলেও এখন গুনতে হচ্ছে ৩০-৩২ হাজার টাকা৷

চালের আরেক বড় জোগানদাতা উত্তরাঞ্চলের জেলা দিনাজপুর৷ অবরোধের কারণে ১০ দিন ধরে এ জেলা থেকে চাল সরবরাহ বন্ধ৷ দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হামিদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন জেলা থেকে ৬০-৬৫ ট্রাক চাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়৷ এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যায় ঢাকায়৷ কিন্তু অবরোধের কারণে পণ্যটি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে৷ তবে পুলিশ প্রহরায় চাল সরবরাহ করা যায় কিনা, সে চেষ্টা চলছে৷কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার বটতৈল, খাজানগর, দোস্তপাড়া, শান্তিমোড়, বল্লবপুর ও পোড়াদহসহ প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে চালকল৷ এ অঞ্চলে রাইস মিল রয়েছে ৩০০টি, অটো রাইস মিল ২০টি ও সেমি অটো রাইস প্রায় ৫০টি৷ এসব চালকলের উত্‍পাদিত চাল রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়৷ কিন্তু অবরোধের কারণে তা বন্ধ রয়েছে৷ বাধ্য হয়ে অধিকাংশ মিলই উত্‍পাদন কমিয়ে দিয়েছে৷ বন্ধও করে দিয়েছে মিলারদের কেউ কেউ৷

কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবুল বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১৫০ ট্রাক চাল খাজানগর থেকে সরবরাহ করা হতো৷ পরিবহন সংকটে কোনো চালই এখন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ বাধ্য হয়ে অনেক মিলই উত্‍পাদন বন্ধ রেখেছে৷ঢাকায় মোটা চালের বড় জোগান আসে বগুড়া থেকে৷ টানা অবরোধের কারণে তা বন্ধ রয়েছে৷ বাধ্য হয়ে বগুড়ার চালকল মালিকরাও উত্‍পাদন বন্ধ রেখেছেন৷ অবরোধের আগে উত্‍পাদিত বিপুল পরিমাণ চাল অবিক্রীত পড়ে আছে৷বগুড়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম আমিনুল হক বলেন, জেলায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত মিল রয়েছে ১ হাজার ৭০০টি৷ এর প্রায় ৮০ শতাংশের উত্‍পাদনই বন্ধ রয়েছে৷ এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলার চালকল মালিকরা৷

রাজধানীতে প্রায় সব ধরনের চালেই কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে৷ সরু (মিনিকেট, নাজিরশাইল) কেজিপ্রতি ৪৬ থেকে ৫৫ টাকা, মাঝারি (পারিজা, হাসকি, বি আর ২৮) ৩৬ থেকে ৪২ টাকা, গুটি, স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, মোটা ৩৩ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ এছাড়া খোলা আটা কেজিপ্রতি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, ময়দা ৩৬ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷লাগাতার অবরোধ আর মাঝে মাঝে হরতালের কারণে সবজি চাষীরা এখন দিশেহারা৷ সবজি বিক্রি করতে না পারায় উত্‍পাদনের খরচই ওঠছে না তাদের৷ অন্যদিকে রাজধানীতে সরবরাহ কম থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে৷

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি পণ্যের দাম পাঁচ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে৷ সবজিসহ চাল, মাছ, মাংসের দামও বেশ চড়া৷ সবমিলিয়ে কাঁচাবাজারগুলোতে যেন রীতিমত আগুন লেগেছে৷

শুক্রবার সকালে সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, অবরোধের আগে কেজি প্রতি কাঁচামরিচ ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হতো৷ শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়৷ কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে রসুন ( দেশি) বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়, পাঁচ থেকে আট টাকা বেড়ে পেঁয়াজ ( দেশি)বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিদেশি পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷কাপ্তান কাঁচাবাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন নয়ন হোসেন৷ তিনি জানান, সাধারণত শীত মৌসুমে কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম একটু কম থাকে৷ কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে৷ এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের বাজার করতে হিমশিম খেতে হবে৷

কাঁচাপণ্য বিক্রেতা লালন জানান, পণ্য কম তাই দাম বেশি৷ এছাড়া ক্রেতার সংখ্যাও কমে যায়৷ এ মৌসুমে এতো দামে সবজি কেউ কিনতেও চান না৷ সবমিলিয়ে তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না৷ কেজিপ্রতি সাদা আলু ১৮ থেকে ২৫ টাকা, লাল আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, কাঁচাপেপে ১৫ থেকে ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১৫ থেকে ৩০ টাকা, শশা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, সিম ২০ থেকে ৩৫ টাকা, মটরশুঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ২০ থেকে ৩০ টাকা, টমেটো ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, প্রতিটি ফুলকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ ৩০ থেকে ৪৫ টাকা এবং মুলা ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷

শুকনা মরিচ ( দেশি) ১৪০ থেকে ১৯০ টাকা, বিদেশি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, আদা (ভারত) ৯০ থেকে ১১০ টাকা, চায়না ৮০ থেকে ১০০ টাকা, হলুদ ( দেশি) ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷কেজিপ্রতি মসুরের (দেশি উন্নত) ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, সাধারণ ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, বিদেশি সাধারণ ৮৮ থেকে ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ আর সোয়াবিন তেল ( খোলা) এক লিটার ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, পাম তেল (সাধারণ ও সুপার) ৬৮ থেকে ৭২ টাকা, সয়াবিন ক্যান ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷

এদিকে মাছের বাজারেও দর চড়া৷ এক থেকে দুইকেজি ওজনের রুই ১৯০ থেকে ২৮০ টাকা, কাতল ১৯০ থেকে ২৭০ টাকা, পাংগাস ১১০ থেকে ১৫০ টাকা, সিলভার কার্প ১৩০ থেকে ১৯০ টাকা, কেজিপ্রতি তেলাপিয়া ১৩৫ থেকে ১৭০ টাকা, কৈ (চাষকৃত) ১৫০ থেকে ১৯০ টাকা, চিংড়ি (ছোট) ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷বিক্রেতারা সরবরাহ কমের অজুহাত দিয়ে জানান, অবরোধের কারণে কাঁচাপণ্য অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাদের৷ তাই খুচরা বাজারে দাম একটু বেশি৷