দৈনিকবার্তা=ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি: অসামপ্রদায়িক চেতনার বিকাশে শৈশব থেকেই ছেলে- মেয়েদের পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ৷এক্ষেত্রে কাজ করার জন্য শিশু-কিশোর সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দেশের বৃহত্তম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর আসরের দু’দিনব্যাপী ‘জাতীয় সম্মেলন- ২০১৫’ উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান৷
এর আগে, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আবদুল হামিদ৷
জানা যায়, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন সারাদেশের ৪০টি ওেজলা ও আঞ্চলিক কমিটি এবং প্রায় ৪০০টি শাখা আসরের ১০০০ প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক ও ২০০০ শিশু-কিশোর ভাই-বোনসহ অভিভাবক-শুভানুধ্যায়ী, পৃষ্ঠপোষক ও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরা৷ এছাড়াও অংশ নিচ্ছেন সর্বভারতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘সব পেয়েছি’র আসরের ছয় জন সংগঠক৷শনিবার সন্ধ্যায় সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ বিশেষ অতিথি থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ এবং শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী৷ সমাপনী অনুষ্ঠানে শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার স্মৃতিপদক প্রদান করা হবে শিল্পী মুর্তজা বশিরকে৷
শিশুদের সার্বিক কল্যাণে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ৷ একইসঙ্গে তিনি জাতির আগামী দিনের কর্ণধার শিশু-কিশোরদের সুনাগরিকের গুণাবলী অর্জন করে দেশপ্রেমিক ও চরিত্রবান, অসামপ্রদায়িক, বিজ্ঞান মনস্ক ও সংস্কৃতিবান হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন৷প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই৷ সোনার মানুষ বলতে তিনি সত্, যোগ্য, চরিত্রবান ও মেধাবীদের বুঝিয়েছেন৷
নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা তাদের আচার-আচরণ, চিন্তা-কর্ম এবং জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি৷তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ৷ হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে হিন্দু-মুসলিম- বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধমের্র জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে৷ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি আমাদের সুমহান ঐতিহ্য৷
মূল্যবান এ ঐতিহ্যকে লালন করতে শিশু-কিশোরদের মাঝে শৈশব থেকে অসামপ্রদায়িক চেতনা, নিজস্ব সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার বীজ বুনতে হবে যাতে করে তাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা, দেশপ্রেম ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে৷
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী অবস্থার কথা তুলে ধরে শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে আবদুল হামিদ বলেন, তোমাদের এ বয়সে আমরা ছিলাম পরাধীন দেশের নাগরিক৷ আমাদের না ছিল কথা বলার স্বাধীনতা, না ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা৷ সংস্কৃতি চর্চাও ছিল রীতিমতো কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ৷ তোমরা আজ তা থেকে মুক্ত৷তোমাদের চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা আজ সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত৷ তোমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক৷ তাই তোমাদের সামনে আজ অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত৷পাঠ্য বইয়ের বাইরেও ছবি আঁকা, আবৃত্তি, নাচ, গান, অভিনয়, গল্প বলাসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের চর্চা করতে শিশুদের উত্সাহিত করেন রাষ্ট্রপতি৷তাদের তথ্য-প্রযুক্তিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে সারা বিশ্ব আজ হাতের নাগালে এসেছে৷ এ যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ৷ ছোঁয়া দিলেই জ্ঞানের দৈত্য এসে হাজির৷
কম্পিউটারে একটা ক্লিকে বিশ্বের সব তথ্য মুহূর্তে তোমাদের সামনে হাজির হচ্ছে৷ তোমরা তা থেকে সহজেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবে৷ আমাদের সময় এ ছিল কল্পনাতীত, অবিশ্বাস্য৷ এ দিক থেকেও তোমরা সৌভাগ্যবান৷ আমি চাই, তোমরা এ প্রযুক্তিকে ভাল কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে৷
শিশুদের গ্রামে যাওয়ার উপদেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরা যারা আজ শহরে বড় হচ্ছো, তোমাদের অনেকেরই দাদা-নানার বাড়ি কিন্তু গ্রামে৷ ছুটি পেলে তোমরা অবশ্যই গ্রামে তাদের কাছে ছুটে যাবে৷ দেখবে তোমাদের পেয়ে তারা কত আনন্দিত হয়৷গ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের স্বাদ নিতে শিশুদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই সব না দেখলে তোমরা বঞ্চিত হবে গ্রামবাংলার প্রকৃত রূপ থেকে, বাংলার প্রাণ থেকে৷ কারণ এগুলোই আমাদের শিকড়, বেঁচে থাকার মূল উপজীব্য৷
খেলাঘর আসরের কার্যক্রমের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর শিশু-কিশোরদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অসামপ্রদায়িক চেতনা, নিজস্ব সংস্কৃতি, সুকুমার বৃত্তির চর্চা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ত করছে৷সংগঠনের সভাপতি পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সামসুজ্জামান খান, খেলাঘরের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন অধিকারী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া বক্তব্য দেন৷