1421397241_0_75175

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, গোটা পৃথিবী আজ টাকার পেছনে ছুটছে৷ আমরা সবাই টাকার পিছনে ছুটছি৷ টাকা দিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব কিছুই কেনা যায়৷ তবে টাকা দিয়ে আনন্দ কেনা যায় না৷ মানুষের মহত্ত্ব, আত্মত্যাগ কেনা যায় না৷ যারা ১৯৭১ সালে জীবন দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে তাদের আত্মত্যাগ টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়৷ তবে বই পড়লে সহজেই আনন্দ উপলব্ধি করা যায়৷ শুক্রবার সকালে রাজধানী রমনা পার্কের বটমূলে এক পুরস্কার বিতরণী উত্‍সবে তিনি এসব কথা বলেন৷এর আগে সকালে তিনি আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে বেলুন উড়িয়ে পুরস্কার বিতরণী উত্‍সব-১৫ এর উদ্বোধন করনে৷

গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগরীর বইপড়া কর্মসূচির এই পুরস্কার বিতরণী উত্‍সবে তিনি আরও বলেন, মানুষের হাজার বছরের জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে বই তার পৃষ্ঠায় ধারণ করে আছে৷ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের আত্মার আলো এর ভেতর জ্বলছে৷ আমাদের যদি ওপরে উঠতে হয়, জাতি হিসেবে আমরা যদি শ্রেষ্ঠ হতে চাই তবে আমাদের বই পড়ার সংস্কৃতিকে আরও গভীর ও সর্বত্রগামী করতে হবে৷ এটি করতে পারলে জাতীয় জীবনে আলোকিত মানুষের পরিমাণ বাড়বে, আমরা উচ্চতর জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাব৷

আলোকিত মানুষ গড়ার সমৃদ্ধ স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র গত ৩৬ বছর ধরে সারা দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে বইপড়া কর্মসূচি পরিচালনা করছে৷ এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে রমনার বটমূলে বসেছিল পুরস্কারপ্রাপ্তদের মিলনমেলা৷ হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের নিজগুণে আলোকিত করেছিল রমনার সবুজ প্রাঙ্গণ৷ তাদের এই আলো যদি দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সারাদেশই আলোকিত হবে৷ এমনই প্রত্যাশা ছিল পুরস্কার বিতরণী উত্‍সবে আমন্ত্রিত অতিথিদের৷

অনুষ্ঠানে বইপড়া কর্মসূচি-২০১৪ এর আওতায় মোট ৬০৯২ জন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়৷ ঢাকা মহানগরীর ৯৩টি স্কুলের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়৷তিন পর্বের এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশে বিকল্পধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথিকৃত্‍ মাহবুব জামিল, বিশিষ্ট প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল, বিশিষ্ট কবি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার এবং গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস মার্কাস আডাকটুসুন৷

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিশ্বসাহ্যি কেন্দ্রের পরিচালক শরীফ মোঃ মাসুদ৷ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ডেপুটি টিম লিডার ( প্রোগ্রাম) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন৷

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস মার্কাস আডাকটুসুন বলেন, আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অনলাইন বইপড়া কর্মসূচির সাথে যুক্ত হয়েছি৷ এছাড়াও আমরা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরের পুরস্কার প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৬৫০০০ কপি বইসহ পুরস্কার বিতরণী উত্‍সব আয়োজনে সহযোগিতা করছি৷ গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কে প্রতিদিন ৫ কোটি গ্রাহক ফোন করে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন লাইনে বই পড়ে৷

তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ সবার কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া৷ ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছলে মানুষ সহজেই বিশ্বের সেরা সেরা বইগুলো পড়তে পারবে৷ তিনি ইন্টারনেটের ব্যবহার ও সেফটির উপরে গুরুত্ব আরোপ করেন৷

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, তারুণ্য আমাদের জাতির সম্পদ৷ এই সম্পদ নষ্ট হতে দেয়া যাবে না৷ অনেক তরুণ আজ নেশাগ্রস্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্যরা বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলছে৷ তারা সারা বিশ্বের সেরা বইগুলো পড়ার মাধ্যমে নিজে যোগ্য করে তুলছে৷ আমার বিশ্বাস এই তরুণরাই একদিন দেশকে আর্থ-সামাজিক ভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷তিনি আরও বলেন, বই পড়লে চিন্তাশক্তির প্রসার হবে এবং যারা বই পড়ে তারা যে যেই ক্ষেত্রেই থাকুক না কেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাবে৷

বিকল্পধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের পথিকৃত্‍ মাহবুব জামিল পুরস্কার নিতে আসা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ৷ তোমাদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে৷ ওই সম্ভাবনাকে প্রকাশিত করতে হলে বই পড়তে হবে, আলোকিত হতে হবে৷ পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ে জ্ঞানী মানুষ হয়ে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা আমাদের৷

বিশিষ্ট প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ভালো থাকতে চাইলে ভালো কিছু করতে হবে, সেজন্য ভালো মানুষ হতে হবে৷’ তিনি কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ভালো মানুষ হয়ে সকলের কল্যাণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান৷জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার যে আলোকিত মানুষের স্বপ্ন দেখেন, আমরা যে আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি৷ আজকে শিক্ষার্থীরা বইপড়ার মধ্য দিয়ে নিজেরা আলোকিত হয়ে তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে৷

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এই উত্‍সবে এসে আমি অবাক হয়েছি৷ অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শুধু বইপড়াকে ভালোবেসে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই উত্‍সবে উপস্থিত হয়েছে৷ এই জন্য তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান৷

শুক্রবার বিকালে উত্‍সবের দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিত্‍ কুমার বিশ্বাস, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান, শিশু সাহিত্যিক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আলী ইমাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারোয়ার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি মনসুর আহমেদ চৌধুরী এবং গ্রামীণফোনের ডেপুটি ডিরেক্টর ও হেড অব এঙ্ট্রানাল কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল৷

শনিবার অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট স্থপতি মুক্তিযোদ্ধা মোবাশ্বের হোসেন, লেখক নাট্যকার ও দৈনিক প্রথম আলোর উপ সম্পাদক আনিসুল হক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী শাহিন আনাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিবি) এর ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ, বিশ্বনন্দিত যাদু শিল্পী জুয়েল আইচ, এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ৷