দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি: সহিংসতার রাজনীতি পরিহার করার আহবান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)৷পাশাপাশি রাজনীতিকে কলুসিত না করার জন্য দেশের প্রদান দুই রাজৗনতিক দলের প্রতি আহবান জানিয়েছে অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি৷
টিআইবির নিবাহর্ী পরিচালক ড. ইফতেখাররুজ্জামান বলেছেন, আমরা সহিংসতার রাজনীতি চাই না ৷ মানুষের জীবন ও গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হোক এমন কর্মসূচি আমরা চাই না৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, ড্রাগ (ওষুধ) প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়াতে সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বাসত্মবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ বেশকিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে৷বিশেষ করে ভেজাল ও নকল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রতিককালে মাঠর্পযায়ে জনবল বাড়ানো, ওষুধ পরীক্ষাগার পুনঃস্থাপন ও এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ এ ছাড়া ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণে বিভিন্ন সময়ে জোরদার অভিযান পরিচালনায় বর্তমান সরকার আশাতীত সফলতা অর্জন করেছে৷ এসব সত্ত্বেও এ খাতে নানা অনিয়ম ও দুনর্ীতি রয়েছে বলে টিআইবি জানিয়েছে৷
বৃহস্পতিবার দুুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টিআইবি’র পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়৷টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এডভোকেট সুলতানা কামাল ও নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন৷
সংস্থার উপ-নির্বাহী পরচিালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ এন্ড পলিসি বিভাগের পরচিালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷ এতে গবেষণা প্রতিবদেন উপস্থাপন করনে সংস্থার রিসার্চ এন্ড পলিসি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহনূর রহমান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মনি৷
টিআইবি দাবি করেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন র্কাযক্রমে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পাঁচশ’ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যনত্ম অবৈধভাবে অর্থ লেন-দেন হয়ে থাকে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তররে আওতাধীন পাঁচ শ্রেণীর ওষুধ কোম্পানীর (অ্যালোপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমওিপ্যাথি ও হারবাল) মধ্যে শুধুমাত্র অ্যালোপ্যাথি ওষুধের বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি গবেষণায় আনা হয়েছে৷
এতে বলা হয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সুশাসন সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রে সুশাসনের বিভিন্ন নির্দেশককে (আইনের শাসন, স্ব”ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ, সংবেদনশীলতা, দৰতার ঘাটতি ও দুনর্ীতি) ভিত্তি করে এসব তথ্য সংগৃহীত ও বিম্লেষণ করা হয়েছে৷এডভোকেট সুলতানা কামাল বলনে, ব্যবসায়ীরা প্রতিটি ব্যবসায় বেশী মুনাফার লোভে অসদুপায় অবলম্বন করেন৷ এতে করে ব্যবসার সাথে জড়িত ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোও দুনর্ীতিতে জড়িয়ে পড়ে৷ ফলে সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রসত্ম হয়৷
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিদেশে রফতানি করার জন্য উত্পাদিত ওষুধের মান ঠিক থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশে উত্পাদিত ওষুধের মান সঠিক থাকে না৷ এ সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র পক্ষ থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১২-দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়৷যুগোপযোগী ওষুধ নীতি তৈরি, সমন্বিত আইন প্রণয়ন ও আইনের র্কাযকর বাসত্মবায়ন, জনবল ও দক্ষতা বাড়ানো, দুনর্ীতির অভিযোগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদনত্ম করে জড়িতদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি নিশ্চিত করতেই এ সুপারিশমালা উত্থাপন করা হয়েছে বলে টিআইবি উল্লেখ করে৷
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে প্রায় প্রতিটি ধাপে অনৈতিকভাবে অর্থ লেনদেন হচ্ছে৷ ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদান, ওষুধ নিবন্ধন, নমুনা পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানী নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কায্র্ক্রম চলে ঘুষ বাণিজ্যের ওপর৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর প্রতিবেদনে এসব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিদপ্তরে বিভিন্ন কাজে পাঁচ শত থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায় হয়ে থাকে৷এছাড়া অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার ঘাটতি, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন না করা ও ওষুধ প্রশাসনের সেবা কার্যক্রমের প্রতিটি পর্যায়ে যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে এ অধিদপ্তরে৷প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভেজাল ও নকল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সামপ্রতিককালে মাঠ পর্যায়ে জনবল বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণসহ বেশকিছু ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ তারপরও এ খাতটিতে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি বিদ্যমান রয়েছে ৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্রাগ লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদান, প্রকল্প হস্তান্তর বা স্থানান্তর, রেসিপি অনুমোদন, ওষুধ নিবন্ধন, নমুনা পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানী নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে পাঁচ শত থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে৷
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আওতাধীন ৫ শ্রেণির ওষুধ কোম্পানির মধ্যে (অ্যালোপ্যাথি, ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি ও হারবাল) অ্যালোপ্যাথি ওষুধের বাজার তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, অনিয়ম ও দুর্নীতি গবেষণায় আওতাভুক্ত করা হয় এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সুশাসন আলোচনার ক্ষেত্রে সুশাসনের বিভিন্ন নির্দেশকের (আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ, সংবেদনশীলতা, সেবার ঘাটতি ও দুর্নীতি) ওপর ভিত্তি করে তথ্য সংগৃহীত ও বিশ্লেষিত হয়৷প্রতিবেদন অনুযায়ী জনবলের স্বল্পতায় ওষুধ প্রশাসন প্রতি বছর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ওষুধের বাজার তদারকি এবং প্রতিবছর প্রায় ৭০ শতাংশ ওষুধের মান পরীক্ষা করতে ব্যর্থ হয়৷ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সক্ষমতা এ খাতের ব্যাপক কর্মপরিধি, ভৌগলিক আওতা এবং ওষুধের বাজারের ক্রমবর্ধমান বিস্তৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷ বিদ্যমান আইনি কাঠামো ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথেষ্ট নয় এবং এ ক্ষেত্রে আইনের কার্যকর প্রয়োগেরও ঘাটতি বিদ্যমান৷
এছাড়া ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে ওষুধ পড্রশাসন অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে৷ অপরদিকে অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সময়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সদিচ্ছার ঘাটতিও লক্ষ্য করা যায়৷ এসকল সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কারণে ওষুধের বাজার তদারকি ও পরিবীক্ষণে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হচ্ছে৷
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, সুশাসনের সবচেয়ে বড় শর্ত দায়িত্বশীলতা৷ কিন্তু ঔষধ প্রশাসনে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি রয়েছে৷ অতি মুনাফা লাভের আশায় ওষুধ কোম্পানিগুলো নীতি নৈতিকতার মানদণ্ডের তোয়াক্কা করছে না৷ নির্বাহী বিভাগগুলোও এর সাথে সংশ্লিষ্ট৷
দৈনন্দিন খাবারের পাশাপাশি দৈনন্দিন ওষুধ নির্ভরশীলতা বেড়েছে৷ বিষাক্ত খাবার কিনতে আমরা যেমন বাধ্য হচ্ছি তেমনি ওষুধের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে৷ ওষুধে যে পরিমাণ উপাদান থাকা উচিত্ তা থাকে না৷ এটিও সুশাসনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ৷
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রভাবশালী ওষুধ কোম্পানি আছে যারা বিদেশেও ওষুধ রপ্তানি করে৷ এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়৷কিন্তু রপ্তানীর জন্য যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য সে মানের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় না৷ যার ফলে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকতে বাধ্য হই৷ এমনকি ঝুঁকি নিরসনের কোন প্রকার মানদণ্ড তারা অনুসরণ করেন না যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ এ বিষয়ে সরকারের আশু কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি৷প্রতিবেদনে উপস্থাপিত জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনের সাথে সম্পর্কিত এ অধিদপ্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় টিআইবি’র বেশকিছু সুপারিশ করে৷