Gazipur-(3)-_15_January_2015-Fish_Mela-2[1]

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ১৫ জানুয়ারি: গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে একটা মাছকে ঘিরে বৃহস্পতিবার ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে৷ মাছের নাম বাঘাড়৷ বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ৮০ হাজার টাকা৷ ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় চুপাইর এলাকার জামাই নুরম্নল ইসলাম মাছটির দাম সবের্াচ্চ ৫৫ হাজার টাকা বলছেন৷ কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না৷ চলছে দর কষাকষি৷ যতনা ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উত্‍সুক জনতা ভীর জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য৷ পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের দ্বিতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য৷

গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলাকে ঘিরে আশে পাশের কয়েকজেলায় বৃহস্পতিবার দিনভর চলে আনন্দ-উত্‍সব৷ মূলত এটা জামাই মেলা৷ কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা৷ এ দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেৰায় থাকেন স্থানীয়রা৷ এক টিকেটে দুই ছবি! বলাটা খুব বেশি অযৌক্তিক হবে না, এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই৷ এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেচা৷ কারণ এটা জামাই মেলা হলেও, এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা৷ বিনিরাইল এবং এর আশপাশে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমসত্ম জামাইরা হচ্ছে অত্র মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণাথর্ী৷ তাছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগীতা৷ আর এই প্রতিযোগীতাটি হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যেতে পারে৷

কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রানত্ম থেকে লোকজন তো এসেছেনই৷ এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহত্‍ এই মাছের মেলায়৷ গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলৰেই কালীগঞ্জে এসেছেন৷ প্রতি বছর পৌষ-সংক্রানত্মিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা৷ এবারের মেলায় প্রায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন৷ মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে৷ মাছের মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও৷ বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ৰুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রানত্মি ও নবান্ন উত্‍সবে আয়োজন করা হতো৷ প্রায় ৪০ বছর যাবত্‍ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উত্‍সবে রূপ নিয়েছে৷

স্থানীয় জামালপুর ইউনিয়নের কলাপাটুয়া গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে৷ এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত৷ এলাকার জামাইরা বলেন, শশুরবাড়ীতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা৷ তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই৷ তাই স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন৷ সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়৷

বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় চুপাইর গ্রামের জামাই নুরম্নল ইসলামের সাথে তিনি জানান, এবার সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন শশুরবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷ মাছের মেলা সংলগ্ন মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের শাখাওয়াত্‍ হোসেন জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক৷ মেলায় বেচাকেনা যতই হউক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা৷