15-01-15-PM_Rajbari-3

দৈনিকবার্তা-রাজবাড়ি, ১৫ জানুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় যে কোনো অশুভ শক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে আমাদের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে৷বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪-২০১৫ সালের শীতকালীন মহড়ার এবং জেলার সোনকান্দিতে গড়াই নদীর তীরে এ্যাসাল্ট রিভার ক্রসিং অপারেশনের সমাপনি অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের দরবারে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সেবাদানের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমর্থন ও আস্থা ছাড়া একজন সৈনিক যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারে না৷ তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রধান শক্তি হচ্ছে জনগণ৷ শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রৰায় একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করেন৷

15-01-15-PM_Rajbari-7

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনী জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া উপস্থিত ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন৷অনুষ্ঠানে মন্ত্রিবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের ক’টনীতিকগণ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন৷

শেখ হাসিনা ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের মহড়া দেখেন এবং তাদের সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে নদীর অপর পাড়ে শত্রম্নদের অবস্থানের ওপর হামলা দেখে সনত্মোষ প্রকাশ করেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ফুটে উঠেছে৷ আমি নিশ্চিত, আমাদের সেনাবাহিনী যে কোন অশুভ শক্তির মোকাবেলা করতে প্রস্থত এবং দেশের অখন্ডতা রক্ষায় সক্ষম৷হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণ বিশ্বাস করতেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন৷ এ জন্য বঙ্গবন্ধু স্বাধীনাতর পরই সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর জন্য উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে মিলিটারি একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি প্রথম বিএমএ শর্ট কোর্সের ‘রাষ্ট্রপতি কুজকাওয়াজে’ সালাম গ্রহণ করেন৷শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬ মেয়াদে সামরিক বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক কার্যক্রম বাসত্মবায়ন করেছে৷ ওই সময় সেনাবাহিনীতে একটি কম্পোজিট বিগ্রেড, স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনসহ একাধিক আর্টিলারী রেজিমেন্ট, রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, পদাতিক সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্ড ও ডিভ অর্ডন্যান্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ এছাড়া ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ এবং মিলিটারী ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয়৷

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ রাজবাড়ী এবং বরিশাল-পটুয়াখালীর লেবুখালীতে সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে৷ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও সহায়তায় একটি কম্পোজিট বিগ্রেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনীর জন্য এসপি গান, এটিজিডবিস্নউ, উইপেন লোকেটিং রাডার, এমবিআরএল এবং এমবিটি ২০০০ ট্যাংকসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হয়েছে৷

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও ডিজিটালাইজ করা হচেছ৷ সেনাবাহিনী প্রতিটি সত্মরে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়েছে৷ ২০১২ সালে আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট অর্গানাইজেশন গঠিত হয়েছে৷ একইভাবে বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাসত্মবায়িত হচ্ছে৷শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাগত কর্মকান্ডের পাশাপাশি দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অর্পিত দায়িত্বও পালন করছে৷ গত নির্বাচনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করেছে৷ ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে সেনাবাহিনী দেশে বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ এছাড়া তারা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে৷

২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলায় সেনাবাহিনী বিশেষ করে ৫৫ পদাতিক ডিভিশন দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে৷ এছাড়া দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প বাসত্মবায়নের মাধ্যমে এই ডিভিশন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণই হচ্ছে দেশের শক্তি৷ সেনাবাহিনী হচেছ জনগণের অবিচেছদ্য অংশ৷ এজন্য সকলের দায়িত্ব হচেছ সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন৷ এক্ষেত্রে জনগণের আস্থা অর্জন অত্যনত্ম জরুরি৷

15-01-15-PM_Rajbari-12

প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী কল্যাণ তহবিলের আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার ট্রাস্ট ব্যাংক ও হোটেল রেডিসন প্রতিষ্ঠা করেছে৷তিনি বলেন, বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে সেনা সদস্যদের রসদ বৃদ্ধি করে বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর সমান করা হয়েছে৷ অস’ায়ী কর্তব্য পালনে জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের দৈনিক ভাতা, ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার দায়িত্ব পালনের দৈনিক ভাতা এবং এলপিআর-এর সময়কাল ৪ মাস থেকে ৬ মাস বৃদ্ধির প্রসত্মাব অনুমোদন করা হয়েছে৷ একইভাবে অবসরপ্রাপ্ত মৃত সেনা সদস্যদের পারিবারিক পেনশনের হার ও চিকিত্‍সা ভাতা বৃদ্ধি এবং জেসিওদের প্রথম শ্রেণী ও সার্জেন্টদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, দেশকে এগিয়ে নিয়েছে৷ বাংলাদেশ আজ আর পরমুখাপেক্ষী দেশ নয়, বরং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷তিনি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের আমলে দেশের অর্জিত অগ্রগতির উলেস্নখ করে বলেন, বিদু্যত্‍ উত্‍পাদন সক্ষমতা ১৩ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে৷ ১৪টি বৃহত্‍ সেতু, ৪ হাজার ৫০৭টি মাঝারি ও ছোট সেতু, ১৩ হাজার ৭৫১ কালভার্ট ও ২১ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মিত এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরম্ন হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার চালু হয়েছে৷ বছরের প্রথম দিনেই সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যনত্ম শিৰাথর্ীদের মাঝে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই বিতরণ করা হয়েছে৷

তিনি শীতকালীন প্রশিক্ষণ চলাকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিত্‍সা সহায়তা ও অন্যান্য জনহিতকর কাজের জন্য ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের প্রশংসা করে আশাবাদ প্রকাশ করেন জনগণের অকৃতিম ভালবাসা ও আস্থা অর্জনে এ ধরনের মহতী উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে৷ শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সুশৃংখল বাহিনী হিসেবে জানে৷ জাতিসংঘ শানত্মিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর অবদান আজ সর্বজন স্বীকৃত ও বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত৷ শানত্মিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষে৷এর আগে প্রধানমন্ত্রী ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের শীতকালীন মহড়া প্রত্যক্ষ করেন৷ এতে প্রায় ৮ হাজার সেনা, ২৬৫ প্যারা কমান্ডার, দু’টি ফাইটার জেট,দুটি কাডের্া প্লেন ও ৪টি হেলিকপ্টার অংশগ্রহণ করে৷পরে প্রধানমন্ত্রী গরীবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন৷