দৈনিকবার্তা-টঙ্গী, ১১ জানুয়ারী: বিশ্ব মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মহাসমাবেশ ১ম পর্বের ৩ দিনব্যাপী ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা রোববার দুপুরে অশ্রুসিক্ত আমিন আমিন ধ্বনিতে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়৷ বেলা১১টা ১৭মিনিটে আখেরী মোনাজাত আরম্ভ হয়ে দীর্ঘ ৩০মিনিট ব্যাপী ১১টা ৪৭মিনিটে শেষ হয়৷ এই বছর সর্ব প্রথম আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী দিলিস্নর মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ৷ রাজধানীর অদূরে শিল্প নগরী টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব মুসলিম উম্মার ঐক্য শানত্মি সমৃদ্ধি কামনা করে শেষ হল এই পবিত্র মিলন মেলা৷ বৃহস্পতিবার থেকে আখেরী মোনাজাতের পূর্ব মুহুর্ত পর্যনত্ম ধর্মপ্রান লাখো লাখো মুসলি্ল ও তাবলীগ অনুসারিদের ঢল নামে৷ ইজতেমা উপলক্ষ্যে টঙ্গীকে নতুন করে সাজানো হয়েছে৷ তুরাগের ১৬০ একর জমির বিশাল চটের প্যান্ডেলের নিচে দেশ বিদেশের মুসলিস্ন ও তাবলিগ অনুসারি দলের সদস্যরা বিভিন্ন যানবাহনে করে দলে দলে টঙ্গীতে আসেন৷ বিশ্ব তাবলীগ জামায়াতের বার্ষিক মহাসম্মেলন হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা৷
সারা জাহানের মুসলমানদের সুখ,শানত্মি, কল্যান, অগ্রগতি, হেদায়েত, সমৃদ্ধি, ভ্রাতিত্ববোধ কামনা করে আখেরী মোনাজাত করা হয়৷ এতে বিশ্বের ৮২টি দেশের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার বিদেশী অতিথিসহ দেশ বিদেশের প্রায় ৪০ লক্ষ ধর্মপ্রান মানুষ মোনাজাতে শরীক হন বলে ধারনা করা হচেছ৷ তুরাগ পাড়ের ১৭টি প্রবেশ পথে সব ধরনের নাশকতা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলা হয়েছিল৷ ১ম পর্বে ৪০টি খিওার ভীতরে দেশ -বিদেশের ধর্মপ্রাণ তাবলীগ অনুসারী লাখো লাখো মুসলি্লরা তাবুর নিচে অবস্থান করেছে৷ বৃহস্পতিবার বাদ আছরের নামাজের পর আম’বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার অআনুষ্টানিক কার্যক্রম শুরম্ন করা হয়৷ ৫ ওয়াক্ত নামাজের পরে ময়দানের ভেতরে অবস্থানকারী মুসলি্লদের উদ্দেশ্যে ইজতেমার শীর্ষ মুরব্বীরা বয়ান করেন৷ পরবতর্ীতে বয়ান গুলো বাংলা, আরবি, ফারসী, মালে, ইংরেজী সহ মোট ৭টি ভাষায় তরজমা করা হয়৷
আখেরী মোনাজাতে যা বলেনঃ বেলা ১১টা ১৭ মিনিট থেকে মোনাজাত শুরম্ন হয়ে ১১টা ৪৭ মিনিট পর্যনত্ম ৩০ মিনিটব্যাপী আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন দিলিস্নর মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ৷ আরবিতে ১২ মিনিট ও উদ্দর্ুতে ১৮ মিনিট আখেরী মোনাজাতে বলেন এ আল্লাহ সারা দুনিয়ার মুসলমানদের কবুল কর৷ এ আল্লাহ সকল মুসলমানদের হেদায়েত নসিব কর৷ এ আলস্নাহ সারা বিশ্বে শানত্মি বর্ষিত কর৷ এ আল্লাহ সকল তাবলীগ ওয়ালাদের কবুল কর৷ এ আলস্নাহ সকল মুসলমানদের হেফাজত কর৷ এ আল্লাহ ইজতেমা আয়োজনকারীদের কবুল কর৷ তাদের বেহেসত্ম নসিব কর৷ এ আলস্নাহ সকলকে ঈমানদার বানাইয়ে দাও৷ এ আল্লাহ ইসলামের দাওয়াতকারীদের কবুল কর৷ এ আল্লাহ আমাদের সকলকে মাফ করে দাও৷ এ আলস্নাহ পৃথিবীর সকল নাসত্মিক্যবাদীদের হেদায়েদ দাও৷ এ আল্লাহ মোনাজাতে সকল হাত উঠানোওয়ালাদের কবুল কর৷ এ আলস্নাহ সকল হাত উঠানোওয়ালাদের মাফ করে দাও৷ এ আলস্নাহ সকল হাত উঠানোওয়ালাদের বেহেসত্ম নসিব কর৷ আমিন৷ ভিআইপিদের অংশগ্রহনঃ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর পরিবারসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বঙ্গভবনে দরবার হলে বসে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গনভবনে বসে আখেরী মোনজাতে শরীক হন৷ এসময় তার সাথে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ডাঃ দীপু মনি সহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও বাসভবনের কর্মকতর্াগন৷ গার্মেন্টস শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ মোসত্মফা সরকার জানান, বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অবরম্নদ্ধ অবস্থায় গুলশানে নিজ কাযর্ালয়ে বসে আখেরী মোনাজাতে শরীক হন৷ এ সময় তার সাথে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারন সম্পাদক শিরিন সুলতানা, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, হেলেন জেরিন, শওকত আরা উমর্ী, মাসুমা মিজর্া, শাহিনুর আক্তার, সুলতানা রাজিয়া শাওন, চেয়ারপার্সন সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান কর্ণেল(অবঃ) আব্দুল মজিদ, প্রেস উইংয়ের কর্মকতর্াগন ও কাযর্ালয়ের কর্মকতর্াগন৷ বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি তার বাসভবনে মোনাজাতে শরীক হন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে৷
আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে এসেছেন মন্ত্রী পরিষদের কয়েকজন সদস্য, বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সাংসদ জাহিদ হোসেন রাসেল, বাংলাদেশ ল্যান্ড বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাকির হোসেন, সামরিক-বেসামরিক কর্মকতর্াবৃন্দ ও ইসলামী দেশের কূটনীতিকগন৷ রাজধানীর উপকন্ঠে টঙ্গির তুরাগ নদের তীরে অনুষ্ঠিত বহু কািঙ্খত এই আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলি্ল মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত ও হেদায়েত প্রার্থনা করেছেন৷ নিজ নিজ গুনাহ্ মাফ ও আত্মশুদ্ধি চেয়েছেন৷ এ সময় মহান আল্লাহ পাকের অশেষ মহিমায় আবেগ-আপ্লত লাখো মুসলিস্নর কন্ঠে উচ্চারিত ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে তুরাগ তীর৷ অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে পড়েন অনেক মুসলি্ল৷ প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী এ মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামাতের দিল্লী মারকাজের শুরা সদস্য, ইসলামী চিনত্মাবিদ মাওলানা সাদ৷ আখেরি মোনাজাতকালে গোটা ইজতেমা ময়দানে যেন এক পুণ্যময় ভূমিতে পরিণত হয়৷ সকাল ১১টা ১৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয় এবং শেষ হয় ১১টা ৪৮ মিনিটে৷
প্রথম পর্বের তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে বহির্বিশ্বের প্রায় ১০ সহস্রাধিক মুসলি্লসহ লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলি্ল মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন৷ মোনাজাতের আগে মাওলানা সাদ ঈমান ও আমলের ওপর বিভিন্ন হেদায়েতী বয়ানে বলেন, দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের প্রতি আমাদের বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে৷ দুনিয়ার জিন্দেগীর চেয়ে আখেরাতের জিন্দেগী হলো স্থায়ী৷ তাই আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে আখেরাতের জিন্দেগীর দিকে ধাবিত হতে হবে৷ আল্লাহর কাছে কান্না-কাটি করে ক্ষমা চেয়ে পাপমুক্ত হতে হবে৷ মোনাজাতের সময় গোটা টঙ্গি এলাকা আলস্নাহ-আল্লাহ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে৷
বিশ্ব ইজতেমা প্রথম দফায় তিন দিনব্যাপী মুসলিম বিশ্বের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েতের শেষ দিনে রোববার ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে শামিল হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পাশর্্ববর্তী গাজীপুর, নরসিংদী, ৗৈভরব, সাভার, মানিকগঞ্জ, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, শ্রীপুর ও কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইজতেমা ময়দানে আসেন৷
গত ৯ জানুয়ারি থেকে ট্রেন,বাস, ট্রাক,মাইক্রোবাস, জীপ, কার এবং নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছান ধর্মপ্রাণ মুসলিস্নরা৷ এছাড়া আজ ভোর থেকেই রাজধানীর খিলখেতস্থ বিশ্বরোড থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলে যানবাহনের অভাবে সকাল থেকেই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ইজতেমা অভিমুখে ছুটতে থাকে কাফেলার পর কাফেলা৷ এতে তুরাগের তীরকে কেন্দ্র করে কয়েক বর্গকিলোমিটার জুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল মানব বলয় সৃষ্টি হয়৷ মোনাজাত শুরুর আগেই সকাল ১০টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় তুরাগ তীরের পুরো ইজতেমাস্থল ও চারপাশের বিসত্মীর্ণ এলাকা৷
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গিতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ এর আগে ১৯৬৬ সালে টঙ্গির পাগার এলাকায় ইজতেমা শুরম্ন হয়৷ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমান তুরাগ নদীর পারে ১৬০ একর জমি ইজতেমা ময়দানের জন্য বরাদ্দ দিয়ে যান৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ইজতেমা মাঠের পাকা সেনিটেশনসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছেন৷
বিএনপির অবরোধ উপেক্ষা করে প্রচন্ড হাড় কাপানো ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীতের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে আজ সকাল থেখে মুসল্লীদের ঢল নামে৷তিনি অশ্রম্নসিক্ত কান্না ভেজা কন্ঠে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শানত্মি সমৃদ্ধি মঙ্গল কামনা করে আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন৷ মোনাজাতে দেশ বিদেশের ৪০ লাখ মুসলস্নী অংশগ্রহণ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম ও মাওলানা জুবায়ের৷ হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গামেন্র্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধঃ আখেরী মোনাজাতের দিন টঙ্গী, উত্তরা ও আশেপাশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গামেন্র্টস কারখানা ও সকল শিল্প কারখানা বন্ধ ছিল৷১০ মুসলি্লর মৃতু্যঃ বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হয়ে ১ম পর্বে গত ৪দিনে ১০ জন মুসলিস্ন বিভিন্ন রোগজনিত কারনে মারা যায়৷ শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যনত্ম ৪জন মুসলি্ল মারা যায়৷ তারা হলেন গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানার মোঃ আব্দুস সোবহান(৬৫), চুয়াডাঙ্গা জেলার আলফাডাঙ্গা থানার মোঃ মকবুল হোসেন(৭৫), দামুরহুদা থানার তোয়াজ্জেল হোসেন(৫০) ও সিলেট জকিগঞ্জের মোঃ সাদেকুর রহমান(২০)৷ এছাড়াও যশোর থেকে বিশ্ব ইজতেমার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বাস ধামরাইয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হলে ৫জন মুসলিস্ন মারা যায়৷
ফ্রি খাবার ও পানির ব্যবস্থাঃ আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও উত্তরায় বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে ধর্মপ্রান মুসলি্লদের সেবায় এলাকাবাসী এগিয়ে এসেছে৷ রাসত্মায় কিংবা বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে আগত মুসল্রিদের ফ্রি ভাবে বিভিন্ন প্রকার খাবার যেমন বিস্কুট, কলা, রুটি, কেক, সরবত, ফিল্টার পানি, চা এমনকি রান্না করা খাবার মুসলিস্নদের ডেকে ডেকে আপ্যায়ন করছে৷ অনেকে আবার বাড়ী থেকে পাটি, চাদর বা পুরাতন পত্রিকা এনে মুসলি্লদের দিচ্ছে তারা যেন বসে আখেরী মোনাজাতে শরীক হতে পারেন৷ এ দৃশ্য দেখে টঙ্গী-উত্তরা এলাকাকে অতিথির নগরী মনে হয়েছে৷
রাসত্মা মেরামতঃ ইজতেমাস্থলে লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলি্লদের যাতায়াতের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে নতুন রাসত্মা তৈরী ও পুরাতন রাসত্মাগুলো সংস্কার এবং ফুটওভার ব্রীজগুলো মেরামত করে মানুষের চলাচলের জন্য উপযোগী করা হয়েছে৷ টঙ্গী বাজার, ষ্টেশন রোড ও আব্দুল্যাহপুর এলাকায় তিনটি ফুটওভার ব্রীজ থেকে হকার উচেছদ করা হয়েছে৷
যৌতুকবিহীন গনবিয়েঃ প্রতি বছরের ন্যায় ১য় পর্বে শনিবার বাদ আছর যৌতুকবিহীন ১২০টি গনবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ ইজতেমার মুরবি্ব মাওলানা গিয়াস উদ্দিন জানান, বিয়ের পর বিশেষ দোয়া করা হয় ও মঞ্চের পাশে মুসলি্লদের মাঝে খেজুর বিতরন করা হয়৷
তুরাগ নদীতে সেনাবাহিনীর পল্টুন ব্রীজ নিমর্াণ ঃ- ইজতেমায় আগত মুসলি্লদের যাতায়াতের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদীর উপর ৯টি ভাসমান পল্টুন সেতু নিমর্াণ করেছেন৷ উক্ত ভাসমান সেতু দিয়ে লাখ লাখ তাবলিগ জামাতের সাথীরা নদী পারাপার হচেছন৷
বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও পোষ্টারঃ ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের উভয়পাশের ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকায় ইজতেমায় আগত মুসলি্লদের স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন কোম্পানীর বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও পোষ্টার সাটানো হয়েছে৷ অযু গোসল ও খাবার পানি সরবরাহ ঃ- ইজতেমায় আগত মুসলি্লদের অযু, গোসল ও খাবারের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও টঙ্গী পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি গ্যালন সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
আইনশৃংখলা বাহিনীর ৭ হাজার সদস্যঃ এবার ইজতেমায় আগত দেশ-বিদেশী মুসলিস্নদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে৷ ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাব, পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ৭ হাজার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে৷ এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় সাড়ে ২ হাজার পুলিশ-র্যাব, গোয়েন্দা সদস্য সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন৷
বিদু্যত্ সরবরাহ ঃ- ইজতেমা ময়দানে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যত্ সরবরাহের জন্য টঙ্গী সুপার গ্রিড, টঙ্গী নিউ গ্রিডসহ ১৯টি ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে পুরো ময়দান এলাকায় ২৪ ঘন্টা বিদু্যত্ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে৷ এছাড়াও জরম্নরী প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ৪টি জেনারেটর এবং ৪টি ট্রলি ট্রান্সফর্মারের ব্যবস্থা রাখা হয়৷
অগি্ন নির্বাপক ব্যবস্থা ঃ- ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্যোগে পুরো ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকাকে ১১টি স্ট্র্যাটেজিক জোনে ভাগ করা হয়েছে৷ জরুরী প্রয়োজনে ৩টি ফায়ার ষ্টেশন, অগি্ননির্বাপনের জন্য ১২টি পাম্প ও ২০০ জন ফায়ার কর্মী নিয়োজিত রাখা হয়৷ প্রতিটি খিত্তায় ২জন করে ফায়ারম্যান মুসলিস্নদের সাথে ছিলেন৷ এছাড়াও সার্বক্ষনিক তুরাগ নদী এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছিল ডুবুরীদল৷
র্যাব ও পুলিশের পর্যবেক্ষণ ও ওয়াচ টাওয়ারঃ এবারের ইজতেমায় র্যাবের পক্ষ থেকে ৯টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও পুলিশের পক্ষ থেকে ১২ টি ওয়াচ টাওয়ার লাগানো হয়েছে৷ এ সকল টাওয়ার থেকে র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দূরবিন দিয়ে পুরোমাঠ তদারকি করেছেন৷ র্যাব ও পুলিশের জন্য ৮০টি শৌচাগার নিমর্াণ করা হয়েছে৷ সেই সাথে ১৭টি প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা৷ পুলিশ ও র্যাবের আলাদা আলাদা কন্টোল রুম ছিল৷
৬৪টি স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানঃ ইজতেমায় আসা লাখো লাখো মুসলি্লদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অতিরিক্ত আরও ৫০টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে৷ জরম্নরী স্থানানত্মরের জন্য ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে ২২টি এ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রয়েছে৷ ইজতেমা ময়দান এলাকায় অস্থায়ী ৬৪টি বেসরকারী মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছিল্৷ এছাড়াও ১টি ট্রামা সেন্টার খোলাসহ বার্ণ ইউনিট, এজমা ইউনিট খোলা হয়৷ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ২জন ডাক্তার ও ২জন প্যারামেডিঙ্রে সমন্বয়ে একটি চিকিত্সক দল পর্যায়াক্রমে সার্বক্ষণিক জরুরী চিকিত্সায় নিয়োজিত থাকে৷ এছাড়া প্রতিটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ১জন করে ডাক্তার রয়েছে৷
খাদ্যে ভেজাল রোধঃ এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসলিস্নদের ভেজাল খাদ্য সরবরাহ ও নিন্মমানের খাবার বাজারজাত এবং বিক্রি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে৷ এজন্য টঙ্গীতে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করবেন ৮জন অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ২২ টি ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করে৷ মোবাইল কোর্ট এর নামে বিভিন্ন খাবার হোটেল সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভেজাল খাদ্য বিক্রি করার দায়ে জরিমানা, কারাদন্ড দেয়া হয়েছে৷
ইজতেমা উপলক্ষ্যে ভিট ভাড়া ও চাঁদাবাজীঃ প্রতিবছর ইজতেমা আসলে টঙ্গীতে একশ্রেনীর লোক পৌরসভা থেকে জমি লিজের নামে অবৈধ দোকানপাট ও ব্যস্থা প্রতিষ্ঠান তৈরী করার জন্য চাঁদাবাজী করে থাকে৷ এ বছর ও সেটি করা হচেছ৷ টঙ্গী বাজার হোন্ডা রোড, মাছিমপুর কামারপাড়া সড়ক,সস্নুুইচ গেইট, আব্দুল্যাহপুর ও মন্নু স্কুলের বাউন্ডারির ভেতরে শতশত অবৈধ দোকান পাট ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজী করছে ৷সরকার দলীয় নেতাকমর্ী, সমর্থক ও রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই চাঁদাবাজীর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
ইজতেমা মাঠে শতশত ছাতা মাইকঃ ইজতেমা মাঠে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শতশত ছাতা মাইক লাগানো হয়েছিল৷ মাঠের ভেতরে অবস্থানরত লাখো লাখো মুসলি্লরা ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর বয়ান শুনেন৷ মাইক গুলো দেখতে চমত্কার ও শব্দ ভাল৷ আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিএনপির লাগাতার অবরোধ আর শীত উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলি্লর আসেন তুরাগ তীরে৷রের নামাজের পর থেকেই বিশেষ ট্রেন, বাসসহ বিভিন্নভাবে এসে ইজতেমা মাঠ ও তার আশপাশে অবস্থান নেন মুসলি্লরা৷ টঙ্গীর পথে শনিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে মোনাজাতে অংশ নিতে চার দিক থেকে মুসলি্লরা পায়ে হেটে ইজতেমাস্থলে পৌঁছান৷
মাঠে পৌঁছাতে না পেরে হাজারো মানুষ কামাড়পাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফজরের নামাজ পড়েন এবং আখেরি মোনাজাতের জন্য খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন৷সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই মুসলি্লদের ভিড় ইজতেমা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে৷এছাড়াও বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস- দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসলি্লরা অবস্থান নেন৷
পরে মোনাজাত শেষে মুসুলি্লরা বিশেষ ট্রেন, বাসসহ বিভিন্নভাবে বাড়ি যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন এবং অবরোধের কারণে বাস ট্রেন না পেয়ে চরম দূভোর্গ পোহাতে হয়ে মুসুলি্লদের৷ এছাড়া অনেকেই পায়ে হেটে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন৷আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরও ৩১ জেলার মুসলি্লদের জন্য তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা শুরম্ন হবে৷ ১৮ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে৷