দৈনিকবার্তা-ঢাকা ১০ জানুয়ারি: অর্থ নয়, ডাক্তারদের সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহবার জানিয়েছে দেশে নতুন ১১টি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ প্রধানমন্ত্রী নতুন স্থাপিত এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদ্যমান মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার মান বজায় রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন৷
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে আরো সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷ এছাড়া ইতোমধ্যে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে৷ এর সঙ্গে শিগগিরই আরো ৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ চালু হবে৷ এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের শিৰার মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এখান থেকে যেন রোগী-মারা কোন চিকিত্সক বের না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাতে চাই৷
শিক্ষা কার্যক্রম চালু ১১টি এ নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে- সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, জামালপুর মেডিকেল কলেজ, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, যশোর সেনাবাহিনী মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সেনাবাহিনী মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা সেনাবাহিনী মেডিকেল কলেজ ও বগুড়া সেনাবাহিনী মেডিকেল কলেজ৷
প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নব প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন৷অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম৷ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম৷স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন৷নতুন এ ১১টিসহ দেশে মোট সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা হল ৩৮৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পাঠ্যক্রম ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ থাকতে হবে৷ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণদের ভাল ডাক্তার হতে হবে৷ আপনাদের এসব কলেজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং পাশাপাশি এটি নিশ্চিত করতে হবে যেন এখান থেকে কেউ ‘রোগী-মারা’ চিকিত্সক হয়ে বের না হয়৷
দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে যেসব মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে সেগুলোতে শিক্ষার মান ঠিক রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও প্রচুর মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দিয়েছি৷ আমরা আরো ৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ দিচ্ছি৷
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো, এই মেডিকেল কলেজগুলোর মান যেন ঠিক থাকে৷ রোগী মারা ডাক্তার যেন না হয়-এদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷মেডিকেল কলেজগুলোয় যথাযথভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে কি না তা নিবিড়ভাবে পরিবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী৷ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রতি ঠিকমতো লেখাপড়া করে সত্যিকারভাবে মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্য নিয়ে বের হওয়ার জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী৷উদ্বোধনের পর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১১টি জেলায় মেডিকেল কলেজগুলোর কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী৷
নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া ১১টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে ছয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং পাঁচটি সেনাবাহিনীর অধীনে৷এর ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯টিতে এবং সেনা সদরের অধীনে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়টিতে৷ এছাড়া দেশে আরো ৬৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, চিকিত্সা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার৷ মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরবে-এটা স্বাধীন বাংলাদেশে হতে পারে না৷
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সারা বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডাক্তারদের সংখ্যা এত সীমিত যে, ডাক্তারদের ওপর অনেক চাপ পড়ে৷ এজন্য দরকার আরো মেডিকেল কলেজ৷
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়৷ আরো দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে৷ পর্যায়ক্রমে সাতটি বিভাগীয় শহরেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে৷পরবর্তীতে আরো একটি বিভাগ সৃষ্টি করার ইচ্ছা তার সরকারের রয়েছে বলেও জানান তিনি৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় করবে সরকার৷৬৪ জেলায় যে পরিমাণ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রয়োজন সে পরিমাণ নেই৷ বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ; এই দিকটা খুবই অবহেলিত৷ আমরা এটা অবহেলিত রাখতে চাই না৷