দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ জানুয়ারি: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হয়েছে৷ আদালত ১৫ জানুয়ারি মামলার বাদীর বাকি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য তারিখ ধার্য করেছেন৷ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বুধবার এ তারিখ ধার্য করেন৷ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এ আজ খালেদা জিয়ার হাজির হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু তিনি আদালতে হাজির হননি৷ তাঁর অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হয়৷বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এজলাসে ওঠেন বিচারক৷ খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা পৃথক দুটি আবেদন করেন৷ একটি আবেদন করা হয় খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে পারবেন না মর্মে৷ অন্যটি সাক্ষ্য কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে সময়ের আবেদন৷
বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা জানান, খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ৷ তা ছাড়া তিনি অসুস্থ৷ এ কারণে তিনি আজ আদালতে আসতে পারছেন না৷বিএনপির চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতির ব্যাপারে করা আবেদনটি মঞ্জুর করেন আদালত৷ তবে মামলার সাক্ষ্য নেওয়া পেছাতে করা আবেদন নামঞ্জুর করে সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশ দেন আদালত৷ সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবির জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে আবার আবেদন জানানো হয়৷ এ আবেদনও নামঞ্জুর করে সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশ দেন আদালত৷ পরে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়৷ এ পর্যায়ে মামলার বাদী হারুন অর রশিদ সাক্ষ্য দেন৷ এতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আপত্তি তোলেন৷ তাঁরা আদালতকে বলেন, এজাহার দেখে বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারেন না৷ এই আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন৷ সাক্ষ্য কার্যক্রম মুলতবি রাখার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আরেকটি আবেদন করেন৷ আদালত আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন৷বিএনপির লাগাতার অবরোধের মধ্যেই বুধবার ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে জিয়া এতিমখানা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি চলে৷
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদার আইনজীবীরা সময়ের আবেদনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেও বিচারক আবু আহমেদ জমাদার তা নাকচ করে এতিমখানা দুর্নীতি মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের অসমাপ্ত সাক্ষ্য চালিয়ে যেতে বলেন৷ বুধবারও তার জবানবন্দি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় ১৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য শোনার পরবর্তী দিন রেখে আদালত মুলতবি করা হয়৷ বুধবার সকালে এজলাস বসার পর খালেদার পক্ষে সাক্ষ্য পেছানোর আবেদন করেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও মহসিন মিয়া৷তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে গত ৩ জানুয়ারি থেকে তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷ তাছাড়া তিনি অসুস্থ৷এ কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে আদালতে আসা সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে তারা সময় চান৷
এ দুই মামলায় খালেদা জিয়ার প্রধান তিন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সানাউল্লাহ মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, ভাংচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলার বিষয়টি তুলে ধরে মাসুদ তালুকদার আদালতকে বলেন, তারা যাতে শুনানিতে আসতে না পারেন সেজন্যই সরকার তাদের মামলায় জড়িয়েছে৷ অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, খালেদা জিয়া ইচ্ছা করলেই আসতে পারতেন, তার আইনজীবীরা অজুহাত দিচ্ছেন৷শুনানি শেষে বিচারক সময়ের আবেদন নাকচ করে বুধবারের জন্য খালেদাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন এবং তার অনুপস্থিতিতেই সাক্ষ্য চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন৷
সময়ের আবেদনটি পুনর্বিবেচার আবেদন করা হলে বিচারক তাও নাকচ করে দেন বলে খালেদার অন্যতম আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ জানান৷শুনানি শেষে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারি বাদী তার অবশিষ্ট সাক্ষ্য দেবেন৷ ওইদিন তিনি বক্তব্য শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছি৷ সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর খালেদা এ দুই মামলায় আদালতে হাজির হন৷ ওইদিন তার হাজিরাকে ঘিরে ওই এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷এ আদালতের নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ওইদিনই প্রথম এ মামলার বিচারে বসেন৷
দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশের ফাঁকা গুলি, টিয়ার শেল ও লাঠিপেটার মধ্যেই আদালতে উপস্থিত হয়ে খালেদা সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করে শুনানি ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেন৷ খালেদার আইনজীবীদের একের পর এক আবেদনের মধ্যে মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ এর আগের চারটি ধার্য তারিখেও সাক্ষ্য শেষ করতে পারেননি৷গতবছর ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যে খালেদার অনুপস্থিতিতেই এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেছিলেন তিনি৷ গতবছর ১৯ মার্চ এ দুটি মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করেন এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়৷
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি৷মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি৷ সালিমুল ও শরফুদ্দিন জামিনে রয়েছেন৷ কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক৷দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন এই মামলায় খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন৷খালেদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী হারুন-অর-রশিদ৷ এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে৷
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডবি্লউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক৷ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে৷