106009_1

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ৩ জানুয়ারি: স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ জনসাধারণের ক্ষতির চেষ্টা করলে প্রশাসনের কিছু করার রয়েছে৷ তবে ৫ জানুয়ারিতে বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি পুলিশের ওপর নির্ভর করছে৷

শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চল চত্বরে বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন৷প্রস্তুতি ও পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান৷

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামী ৯ জানুয়ারী থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা৷ মুসলি্লদের সুবিধার্থে ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি এবং ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি দুই পর্বে এবারও ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে৷মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মুসলিম গণজমায়েত সফলভাবে সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন৷

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ইজতেমা সফল করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য বিভাগ তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে৷আশা করছি গতবারের মতো এবারো সফলভাবে ইজেতমা সম্পন্ন হবে৷ইজতেমায় সার্বিক প্রস্তুতি ও সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে ইজতেমার মুরুবি্ব বদিউর রহমান বলেন, দিনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া ও মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের মূল লক্ষ্যে৷

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, সিনিয়র স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোজাম্মেল হক, পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লার রহমান৷এসময় জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদসহ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমায় ধর্মপ্রাণ মুসলি্লদের সেবা দিতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ৷ এইদেশে মসজিদের সংখ্যা ও মুসলি্লদের সংখ্যা দেখে বলা যায় তাবলীগ জামায়াতের মেহনত বৃথা যায়নি৷বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জামায়াত বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ গাজীপুরের এলাকাবাসী সকলেরই পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ তাই আমরা পূবের্র অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এবারও ইজতেমায় আসা মুসলি্লদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি৷

স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, গাজীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা৷ ৩৯টি রুটের গাড়ি এ রাস্তা দিয়ে চলে৷ তাই যে কোনো সময় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হতে পারে৷ বিষয়টি মাথায় রেখে গাজীপুর পুলিশ, এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের জন্য কিছু রেকারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বিগত বছরগুলোতেও ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ আশা করছি এবারও সফল হবে৷ আমরা সার্বিকভাবে মুসলি্লদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি৷

রাজউককে উদ্দেশ্য করে জাহিদ আহসান বলেন, আমরা জানি আদালতের নির্দেশানুযায়ী ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশের জায়গাটি ইজতেমা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু রাজউক সেখানে একশ ফিটের রাস্তা করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে গত তিন বছরেও তা করেনি৷ দ্রুত তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান৷ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে বিভাগ ভিত্তিক পর্যালোচনা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দায়িত্ব প্রাপ্ত ইজতেমা প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান৷

তিনি বলেন, আমরা ইজতেমার সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বিভাগ ভিত্তিক কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি৷ তাদের প্রস্তুতির অগ্রগতি হচ্ছে৷ জনস্বাস্থ্য বিভাগ গতবারের তুলনায় ০.৭ শতাং বেশি পানির ব্যবস্থা রাখবে৷ টয়লেটের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ বিদু্যত্‍ বিভাগ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিস দেবে৷ পাশাপাশি ৪টি জেনারেটরের ব্যবস্থাও থাকবে৷

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রতিটি খিত্তায় দুইজন করে দায়িত্ব পালন করবেন৷ ৩টি ট্যাঙ্কার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে৷ কোনো অগি্ন দুর্ঘটনার ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি থাকবে৷ এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি পাম্প পানির যোগান দেবে৷

সড়ক ও জনপদের অধীনে রাস্তা সংস্কার ও পুল নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে৷ রাস্তার ধুলা দূর করতে এলজিইডির ওয়াটার ট্যাংকার পানি ছিটাবে৷গাজীপুর সিভিল সার্ভিসের ৩টি টিম ২৪ঘন্টা কাজ করবে৷ ১৪টি অ্যাম্বুল্যান্স সার্বক্ষণিক সেবা দেবে৷

ইজতেমায় সাউন্ড সিষ্টিমের দায়িত্বে থাকবে তথ্য অধিদপ্তর৷ যানবাহনের জন্য বিআরটিসির ৩০০ বাস প্রস্তুত থাকবে৷ বিদেশিদের জন্য থাকবে ৫টি বাস৷ রেলওয়ে প্রতিদিন ৫টি করে এবং ইজতেমার দিন ২২টি স্পেশাল সার্ভিস ছাড়বে৷ এছাড়া প্রত্যেক ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রা বিরতি করবে৷ইজতেমার মুসলি্লদের সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত তাকবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি)৷

বিদেশি অতিথিদের ভিসা ও আপ্যায়নের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কথা বলেন৷ তিনি বলেন, আমরা সাধারণত ৪৫ দিনের ভিসা দেবো৷ যারা চিল্লায় আসবেন তাদের ১৩০দিনের ভিসা দেবো৷ তবে, তা হবে তাবলীগের মুরবি্বদের সুপারিশ অনুযায়ী৷ তবে কোনো ধরণের জঙ্গি বা ক্ষতিকর গ্রুপের বলে সন্দেহ হলে আমরা ভিসা দেবো না৷

তিনি বলেন, বিশ্বের অনেকদেশে ইবোলা ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় আমরা নির্দেশ দিয়েছি বিদেশিদের ইবোলা ভাইরাস পরীক্ষা করে একটি সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য৷ সার্টিফিকেট দেখে ভিসা দেওয়া হবে৷
আইন-শৃঙ্খলা প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন আর রশিদ৷ তিনি বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা পাঁচ স্তরের নিরাপত্ত ব্যবস্থা নিয়েছি৷ ইজতেমা এলাকাকে ট্রাফিক জোনসহ পাঁচটি জোনে ভাগ করে প্রতি জোনে দুইজন এএসপিকে দায়িত্ব পালন করবেন৷