বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ জানুয়ারি:  ঢাকায় ৫ জানুয়ারি যেকোনো মূল্যে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি৷ শুক্রবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷তিনি বলেন, দৃঢ়তার সঙ্গে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে আমরা বলতে চাই, ৫ জানুয়ারি আমরা কর্মসূচি করবই৷  আর এই কর্মসূচি করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আমরা বার বার অঙ্গীকার করছি, ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের জনসভা হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ৷আমরা এই জনসভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা চাই৷’সরকার কর্মসূচির অনুমতি না দিলে কী হবে- এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, অনুমতি না দিলে সেক্ষেত্রে আমাদের কর্মসূচি দিতেই হবে৷ এজন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে৷

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে পাষণ্ড রাজাকার এবং শেখ হাসিনার দোসর বলে আখ্যায়িত করেন বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ৷রিজভী বলেন, খালেদ জিয়া নাকি প্রতিহিংসার ফল ভোগ করছেন৷ চরম মিথ্যাবাদী এরশাদ এমন কথার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন৷  বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে৷ অথচ একাত্তরে যেসব বাঙালি সেনা অফিসার পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসার সময় ধরা পড়তেন, তাদের বিচারের জন্য যে ট্রাইবু্যনাল গঠন করা হয়েছিল- তার চেয়ারম্যান ছিলেন এরশাদ৷রিজভী অভিযোগ করেন, এরশাদ বিচারপতি সাত্তারকে অবৈধভাবে নিয়ে বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করেছিলেন৷ তারপর সেনবাহিনীতে থাকা বহু মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন৷

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং মঞ্জুর হত্যার মদতদাতাও এরশাদ ছিলেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এ মুখপাত্র৷তিনি বলেন, সেই এরশাদ আজ স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কথা বলছেন৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যারা জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলবে তারাই আওয়ামী লীগের বন্ধু হয়ে যাবে৷ সে যদি টিক্কা খানও হয়৷

৫ জানুয়ারির জনসভা শান্তিপূর্ণই হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে রিজভী বলেন, আমরা অতীতেও প্রমাণ করেছি আমাদের জনসভা শান্তিপূর্ণ হয়৷ সমাবেশ করার জন্য এরমধ্যে আমরা মাইক এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে চিঠি দিয়েছি৷ এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাইনি৷ এইতো দিচ্ছি-দেবো বলে সময় কাটাচ্ছে পুলিশ৷ এখন দেখার বিষয় সরকার শান্তি চায়, নাকি যুদ্ধাবস্থা তৈরি করতে চায়৷আমরা যে কোনো মূল্যে সমাবেশ করার চেষ্টা করবো৷ বাধা দিলে দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে৷  সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন ও শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ৷

প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, নাশকতার আশঙ্কা থাকলে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না৷ আসাদুজ্জামান খান জানুয়ারি বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান৷ তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি আসতে এখনো দুই-তিন দিন বাকি৷ বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে৷  শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন৷ হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) চার দিনব্যাপী অষ্টম হজ-ওমরাহ মেলার উদ্বোধন করতে প্রতিমন্ত্রী সেখানে যান৷

আসাদুজ্জামান খান বলেন, যদি কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা থাকে তাহলে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না৷ তবে যদি নাশকতার বিষয়টি না থাকে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বিষয় হয় তাহলে আমরা ব্যাপারটি ভেবে দেখব৷৫ জানুয়ারি বিএনপি যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ এটি আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি কি না সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷  রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাপলা চত্বর বা নয়াপল্টন এই তিন জায়গার যেকোনো একটিতে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ২২ ডিসেম্বর আবেদন করেছিল বিএনপি৷ তবে সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পায়নি দলটি৷বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস’আখ্যা দিয়ে বছর পূর্তিতে ওই দিনে সারাদেশে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি৷ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জনসভা করতে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে দলটি৷অন্যদিকে ওই দিনটি সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে সেদিন যে কোনো নাশকতা মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷পুলিশ বিএনপির জনসভা নিয়ে টালবাহানা করছে বলে আগের দিন অভিযোগ করেছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷  অন্যদিকে, নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি ঢাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার মধ্যেই মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ওইদিন কোনো অশুভ তত্‍পরতা বরদাশত করা হবে না৷হুমকি-ধামকি দিলেও ৫ জানুয়ারি বিএনপির কাগুজে বাঘদের খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ৷

এসময় হানিফ জানান, ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ সারাদেশে বিজয় র্যালি করবে৷ আর বিকেলে ঢাকার ১৬টি স্পটে গণতন্ত্রের বিজয়ে সমাবেশ করবে৷ এতে কেন্দ্রীয় নেতারা পৃথক পৃথকভাবে অংশ নেবেন৷তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের কড়া সমালোচনা করে বলেন, এদের জন্মই হয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে৷ সেসময় বিএনপি নেত্রী ও তার দোসররা দেশকে অকার্যকর বানানোর ষড়যন্ত্র করেছিলেন৷ কিন্তু গণতন্ত্রের বিজয়ের মাধ্যমে দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে৷ এ স্বীকৃতি বিশ্ব সমপ্রদায়ই দিচ্ছে বাংলাদেশকে৷সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের এ মুখপাত্র৷