দৈনিকবার্তা–যশোর,৩১ডিসেম্বর : উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিক, কৌশলগতভাবে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা হবে৷প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরো শক্তিশালী ও একটি দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে পাঁচটি নতুন এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, নয়টি বেসিক ট্রেনিং এবং ষোলটি কমবোট ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট সংযোজন করা হবে৷
প্রধানমন্ত্রী সকালে যশোরের বিএএফ একাডেমীতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন৷ এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন৷ তিনি অনুষ্ঠানে ফ্লাইট ক্যাডেটদের মধ্যে ট্রফি, সনদপত্র ও ফ্লাইং ব্যাচ হসত্মানত্মর করেন৷
প্রধানমন্ত্রী বিএএফ একাডেমীতে এসে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ান মার্শাল মোহম্মদ ইনামুল বারি ও বিএএফ একাডেমীর কমান্ড্যান্ট এয়ার কমোন্ডর এম সাঈদ হোসেন তাকে স্বাগত জানান৷অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রিবর্গ, সংসদ সদস্যগণ, নৌবাহিনী প্রধান, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ,স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ফ্লাইট গ্রাজুয়েট ক্যাডেটগণ উপস্থিত ছিলেন৷প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদ্যকমিশন প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার নিরাপত্তর জন্য তাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা উলেস্নখ করে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়নত্মীতে বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়ন করে একটি শক্তিশালী ও দক্ষ বাহিনী আমরা গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ৷তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এবং এই বাহিনীর সদস্যদের উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে৷ আমরা বিএএফ’র উন্নয়ন অব্যাবহত রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ৷
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকার পাঁচটি নতুন এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, নয়টি বেসিক ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট, তিনটি ট্রান্সপোর্ট ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট, দু’টি মেরিটাইম সার্স ও রেসকু্য হেলিকপ্টার ও ১৬ কমবোট ট্রেনিং এয়ারক্রাপ্ট ক্রয়ে চুক্তি স্বাৰর করেছে৷ তিনি বলেন, শিগগির এই সকল সামরিক যান বিমান বাহিনীতে সংযুক্ত হবে৷ শেখ হাসিনা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকরাই অসংখ্য বীরদের আত্মত্যাগে সমুজ্জ্বল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী৷ তাদের অনুসারি হিসেবে কষ্টার্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আপনাদের৷ সত্যিকার দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয় আপনাদেরকে এই মহান দায়িত্ব পালন অব্যাবহত রাখতে হবে৷
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাজে ও চিনত্মা-চেতনায় বাংলার আকাশ মুক্ত রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনের আহ্বান জানান৷ পাশাপাশি আপনাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগে ও সংগ্রামের ইতিহাস মনে রাখতে হবে৷শেখ হাসিনা সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে বিমান বাহিনীর ভবিষ্যত্ কর্ণধার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই বাহিনীর যৌগ্য উত্তরসুরি হিসেবে আপনাদেরকে গড়ে তুলতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহকমর্ী এবং অধীনস্থদের কল্যাণকে অত্যনত্ম গুরম্নত্ব ও সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে৷ আমাদের প্রত্যাশা, আপনারা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন৷প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবোজ্জল ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বিএএফ সদস্যরা প্রয়াজনীয় অস্ত্র ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দখলদার বাহিনীর বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ সে সময় তাদের কাছে শুধুমাত্র একটি এ্যালোটি হেলিকপ্টার ডিসি-৩ এবং একটি অটার জঙ্গি বিমান ছাড়া আর কিছু ছিল না৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সাহসী পাইলটরা বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশের মাধ্যমে প্রথম শক্রুদের স্থাপনার উপর প্রথম সফল অভিযান চালায়৷তিনি বলেন, বিএএফ শুধুমাত্র একটি এ্যালোটি হেলিকপ্টার ও একটি এয়ারক্রাপ্ট দিয়ে ৪০টির বেশি সফল অভিযান চালায়৷ আমাদের পাইলটদের এটি ছিল একটি অসাধারণ দক্ষতা৷ শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা সেক্টর কমান্ডারের মতো গুরম্নত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছে৷ জাতি বিমান বাহিনীর সদস্যদের এই সাহসী অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রাখবে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রৰায় অবশ্যই একটি শক্তিশালী, পেশাদার ও আধুনিক বিমান বাহিনী দরকার৷তিনি এ কথা বুঝতে পেরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্বল অর্থনীতি সত্ত্বেও স্বাধীনতার পরই একটি দৰ বিমান বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিমান বাহিনীর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিদেশ থেকে আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনি ক্ষমতায় এসেছে তখনি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিমান বাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে৷ তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান মিগ-২৯ এবং সি-৩০ পরিবহন বিমান ও উচচ ক্ষমতা সম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার সংযোজন করেছি৷শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর বিমান বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাসত্মবায়ন করা হয়েছে৷ তিনি বলেন,বিমান বাহিনীতে এফ-৭ বিজি-১ যুদ্ধ বিমান, এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স মিজাইল সংযোজন করা হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটি ও কঙ্বাজার বিমান ঘাঁটি একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে রূপানত্মরিত করা হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন,প্রথম বারের মতো বিমান বাহিনীতে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজন করা হয়েছে৷ জলসীমায় অর্থনৈতিক জোন নজরদারি করার জন্য কঙ্বাজার উচচ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি এয়ার ডিফেন্স রাডার স্থাপন করা হয়েছে৷তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় ওভারহল প্লান্ট স্থাপন করেছি৷ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে আনা জেট ট্রেইনার কে-৮ ডবিস্নউ বিমান ইতোমধ্যে প্রশিৰণ কার্যক্রম শুরম্ন করেছে৷ প্রশিৰণ ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য অত্যাধুনিক সুবিধাসহ বিমান বাহিনী একাডেমীতে বঙ্গবন্ধু কমপেস্নঙ্ নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচেছ৷ পাশাপাশি জাতীয় ২০১০ এর আলোকে বিমান বাহিনী একাডেমীর অফিসার ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ জানুয়ারি মাস থেকে তিন বছরে উন্নীত করা হবে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার তিন বাহিনীর সদস্যদের পদ মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে৷ চাকরির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে৷ জাতিসংঘ শানত্মি মিশনে বিমান বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচেছ৷ বিমান বাহিনীতে নতুন নতুন ইউনিট স্থাপনের ফলের জনবল বৃদ্ধি পাচেছ৷ পদোন্নতির পথ সুগম হচেছ৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনীর সদস্যরা জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচছ্বাসের ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচেছ৷ ২০৩০ এর আওতায় নতুন নতুন বিমান এবং হেলিকপ্টার যুক্ত হওয়ায় এ সকল কর্মকা- পরিচালনায় বিমান বাহিনীর সামর্থ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচেছ৷আজকের এই শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে মোট ৪২ জন ফ্লাইট ক্যাডেট অংশ নেন৷ এর মধ্যে ৭০ ফ্লাইট ক্যাডেট কোর্সের ২৭ জন এবং ১৪ এসএসসি ও এসপি এসএসসি থেকে ১৫ জন ফ্লাইট ক্যাডেট রয়েছেন৷ এদের মধ্যে ৬ জন নারী ক্যাডেটও রয়েছেন৷ এই মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজে নারী ফ্লাইট ক্যাডেটদের প্রাণবনত্ম কুচকাওয়াজ দেখে তিনি সনত্মোষ প্রকাশ করেন৷ ফ্লাইট ক্যাডেট উইং আন্ডার অফিসার ধ্রুবো সরকার সোর্ড অব অনার এবং কমান্ডেন্ট ট্রফি পান৷ ফ্লাইট ক্যাডেট সার্জেন্ট সঞ্জীত তরফদার চীফ অব এয়ার স্টাফ পান৷ ফ্লাইট ক্যাডেট মো: ইশতিয়াক নাফিজ চৌধুরী ফ্লাইয়িং একাডেমীতে সেরা পারফরমেন্সের জন্য লাভ করেন ‘ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি ‘ ট্রফি৷