দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর: বর্তমান বাস্তবতায় দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তৃণমূল থেকে শুরু করার তাগিদ দিলেন বিশিষ্টজনেরা৷ তাদের মতে তৃণমূল থেকে এ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সফল হবে না বলেও বলেও জানান তারা৷ সামপ্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান বক্তারা৷
শনিবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন)৫ম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের তারা এ মন্তব্য করেন৷ সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন-পুলিশের সাবেক আইজিপি শাহজাহান, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রমূখ৷
সম্মেলনে শুরুতেই তাদের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে প্রস্তাবিত সনদ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার৷ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তৃণমূল পর্যায়ে সুজনের আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, দেশে গণভোটের ব্যবস্থা থাকলে হরতাল ডাকার প্রয়োজন হতো না৷গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন হয় না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্রের জন্য আকুতি চলছে৷
তিনি আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ভোটারদের রায় নেয়া দরকার৷ গণভোটের মাধ্যমে ভোটাররা যদি এ ব্যবস্থা চান তাহলে তা সবার মেনে নেয়া দরকার৷ দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে গণভোট অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান৷ তিনি বলেন, গণভোটের ব্যবস্থা থাকলে হরতালের প্রয়োজন হতো না৷ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ভোটারদের বিষয়৷
ড. আকবর আলি বলেনন, দেশে গণতন্ত্রের জন্য আকুতি আন্দোলন চলছে৷ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই৷ গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন হয় না৷সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশে বর্তমানে দলীয়করণ চলছে৷ বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমত সহিষ্ণুতা নেই৷ গাজীপুরের ব্যাপারে এটা আমরা দেখতে পেয়েছি৷
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়া হয়েছে৷ নির্বাচন বয়কট করে কখনো কোনো রাজনৈতিক দল লাভবান হয়নি৷
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন বয়কট করেছিল তাদের উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগ্য কি-না৷ তারা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে এসব বিষয়ে আলোচনা করা৷ কিন্তু তারা সেটা করেনি৷ ফলে দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে৷শামসুল হুদা বলেন, বর্তমানে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিষয়ে আংশিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়৷ ফলে এ বিষয়ে আজ বিতর্ক অনেক সৃষ্টি হয়েছে৷ দেশে এখন গণতন্ত্রের নামে নির্বাচিত অটোক্রেসি চলছে৷ যখন যেদলই ক্ষমতায় থাকুন না কেন বিরোধী দল সরকারকে সাহায্য করেনি৷ তাই দেশে গণতন্ত্র ভালভাবে চলতে পারে না৷
দশম সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় যোগ্য লোকের অভাব ছিলএ কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক দুর্নীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷তিনি বলেন, বর্তমানে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিষয়ে আংশিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়৷ ফলে এ বিষয়ে বিতর্ক অনেক সৃষ্টি হয়েছে৷ দেশে এখন গণতন্ত্রের নামে নির্বাচিত অটোক্রেসি চলছে৷ যখন যেদলই ক্ষমতায় থাকুন না কেন বিরোধী দল সরকারকে সাহায্য করেনি৷ তাই দেশে গণতন্ত্র ভালভাবে চলতে পারে না৷
শামসুল হুদা আরো বলেন, আমরা কিন্তু পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছিলাম তাদের চেয়ে ভাল থাকা বা করার জন্য৷ কিন্তু আমরা তা পারিনি৷ আমাদের দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বিতর্কিত৷নির্বাচন বয়কট করে কখনও কোনো রাজনৈতিক দল লাভবান হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন বয়কট করেছিল তাদের উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগ্য কি-না৷ তারা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে এসব বিষয়ে আলোচনা করা৷ কিন্তু তারা সেটা করেনি৷ ফলে দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে৷বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রশংসা করে শামসুল হুদা বলেন, আমাদের দেশের অনেকেই পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে পছন্দ করি৷ কিন্তু সেখানের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক শক্তিশালী৷ বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন৷ নির্বাচন কমিশনই ঠিক করে দেয় তাদের দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হওয়ার জন্য কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হবে৷ সব রাজনৈতিক দল তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়৷
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের সুশাসন দেখতে আমি প্রতিদিন পত্রিকাগুলোর অর্থনৈতিক পাতার খবর আগে পড়ি৷ তবে এটা সত্য আমাদের দেশের অর্থনীতির অনেক সূচক এখন ইতিবাচক৷ এটা অর্থনীতির একদিন৷ তবে অন্যদিক হলো বাংলাদেশের দুর্নীতি ও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না৷ এমনকি মানুষের জন্ম ও মৃতু্য সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতেও আজ ঘুষ দিতে হচ্ছে৷ এ দেশের তৃণমূল পর্যায়ে ঘুষ এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যেখানে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হলেও মানুষের দৈনন্দিন সেবার কোনো উন্নতি হচ্ছে না৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে সম্পর্কে সরকারের মন্তব্য প্রসঙ্গে শামসুল হুদা বলেন, টিআইবি’র প্রতিবেদনে দেশের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা খুবই সামান্য৷ মূল চিত্র আরও অনেক ভয়াবহ৷ তৃতীয় শ্রেণিতে তৃতীয় থেকে দশম হলে কিন্তু কোনো উন্নয়ন বলা যায় না৷ কারণ আপনি তৃতীয় শ্রেণির পর্যায়েই থাকছেন৷
