দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ : সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনায় সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করেছে বিএনপির তদন্ত দল৷ দলটির সদস্যদের ধারণা, এ ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে৷ তাঁরা মনে করেন, এটি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ৷ দেশে সুশাসন না থাকলে এ ধরনের দুর্যোগ হয়৷ দুঃশাসনের অবসান না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ আরও ঘটতে পারে৷ সুন্দরবন ঘুরে এসে শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত দলের প্রধান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন৷
তদন্ত দল বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় সুন্দরবনের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক তাপবিদু্যত্ কেন্দ্র, জাহাজভাঙা শিল্প বা কোনো লাল শ্রেণীর শিল্প স্থাপন না করাসহ ছয়টি সুপারিশ করেছে৷ উল্লেখযোগ্য অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে শ্যালা নদী ও সুন্দরবনের মাঝ দিয়ে সব ধরনের নৌচলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে৷ অবিলম্বে ঘষিয়াখালী-মংলা চ্যানেল চালু করতে হবে৷ ট্যাংকারডুবির জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে ও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে৷ সুন্দবরন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা৷
হাফিজ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল ২২ ডিসেম্বর শ্যালা নদীসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে৷ আজ সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়৷ হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ট্যাংকারডুবির ৪৮ ঘন্টা পরও সরকার কোনো উদ্ধারকার্যক্রম ও জরুরিভিত্তিতে তেল অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷ এতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবনের ওপর মহাবিপর্যয় নেমে আসে৷ ঘটনার তিন দিন পর নৌমন্ত্রী শাজাহান খান তেল নিঃসরণে সুন্দরবনের তেমন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন৷ আর ঘটনার ছয় দিন পর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনের তেলের দূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন৷
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ডুবে যাওয়া ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’-এর কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না৷ এটি অবৈধ রুটে বেআইনিভাবে তেল পরিবহন করছিল৷ সাউদার্ন স্টার ছিল বালু ও পাথরবাহী কার্গো৷ এর মালিক সরকারের একজন মন্ত্রীর শ্যালক৷ তিনি বলেন, তদন্তকালে সুন্দরবন এলাকায় তাঁরা কোনো প্রাণের স্পন্দন পাননি৷ সেখানে থাকা ইরাবতি ডলফিন দেখা যায়নি৷ মাছ নেই৷ শ্বাসমূলীয় বন তেলে কালো হয়ে গেছে৷ তেলের সংস্পর্শে সেখানকার পাখিরাও প্রজননক্ষমতা হারাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, সুন্দরবনে কয়লাভিত্তিক তাপবিদু্যত্ কেন্দ্রটি পশ্চিমবঙ্গে হতে পারত৷ কিন্তু ভারত সেখানে না করে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে৷ সেখানে বিদু্যত্ কেন্দ্র হলে বাংলাদেশ নিজেই জলবায়ু দূষণকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হবে৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গ্রিন ফান্ডের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা হরাবে৷সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তদন্ত দলের সদস্য নজরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷