মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর. Mirza Fakhrul Islam Alamgir

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৪ :  বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভার দিন গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷গাজীপুর জেলা প্রশাসন শুক্রবার দুপুর থেকে জেলায় সব ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধের পর তাত্‍ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি৷শুক্রবার রেবলা ১১টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন৷ সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গাজীপুরে জনসভা করার জন্য আমরা অবশ্যই যাবো৷ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে নিশ্চিত করা৷মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরও ২০-দলীয় জোটের পূর্বঘোষিত জনসভাস্থল দুই দিন ধরে ছাত্রলীগ দখল করে নিয়েছে৷ এটাকে নৈরাজ্য অভিহিত করে তিনি বলেন, পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রলীগ মাঠ দখল করে নিয়েছে৷

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা থেকে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য গণতন্ত্রের সব পথকে রুদ্ধ করে দিতে চাচ্ছে৷ এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, এই ভয়াবহ পথ থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন৷ নইলে জাতিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে৷বকশিবাজারের ঘটনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবী উন নবী খানসহ দলের নেতা-কর্মীদের বাসায় তল্লাশীর প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল৷

তিনি বলেন, সেদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা দেশবাসী দেখেছে৷ বন্দুক, পিস্তল নিয়ে ছাত্রলীগ আক্রমণ করেছে৷ ২০০৬ সালের লগি-বৈঠার মতো, সাপ মারার মতো পিটিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা৷ কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনি বলেছেন ছাত্রলীগের কেউ ছিল না৷ তাঁরা যখন এভাবে সরাসরি অসত্য বক্তব্য দেন, তখন বুঝতে অসুবিধা থাকে না দেশের শাসনব্যবস্থা কোন জায়গায় দাঁড়িয়েছে৷ মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার বেলা ২টায় গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভাষণ দেয়ার কথা ছিল৷ এ জনসভা বানচাল করতেই সরকার পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷ফখরুল দাবি করেন, তারা জনসভার জন্য আগেই অনুমতি নিয়েছিলেন৷ সব নিয়ম মেনেই তা করা হয়েছিল৷

কিন্তু সরকারবিরোধী দলকে জনসভা করতে দেবে না সেজন্য গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরে স্থানীয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ যা কিছু করছে, তা সাজানো নাটকের বিভিন্ন পর্ব ছিল৷ সরকার শুধু ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে নয়, গোটা গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জেলা সফরের অংশ হিসেবে বেশ কিছু দিন আগেই গাজীপুরের বদরে আলম কলেজ মাঠে জনসভার কথা জানিয়েছিল বিএনপি৷ এর আগে সকালে গাজীপুরে ২০ দলের জনসভা হবেই এ নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ করে সহযোগিতা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ বিএনপি চেয়ারপাসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন৷

ওই সময় তিনি বলেন, গাজীপুরের জনসমাবেশ হবেই, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে৷ জনসভার অনুমতির জন্য প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে৷গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মুক্তি দাবি করে ফখরুল বলেন, মামলা হামলা করে আন্দোলন দমানো যাবে না৷ প্রসঙ্গত, শনিবার গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে জেলা বিএনপি এ সমাবেশের ডাক দেয়৷ ২০ দলীয় জোটের সব নেতাকর্মীর ওই সমাবেশে অংশ নেয়ার কথা৷একইস্থানে পাল্টা জনসভার ডাক দিয়ে ছাত্রলীগ বলেছে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে, অন্যথায় তাকে বিএনপি রেথকে বহিষ্কার করতে হবে৷ বাংলাদেশের কোথাও খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানায় আওয়ামী লীগ৷

এদিকে, একই স্থানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ অনড় থাকায় যে কোনো সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ গাজীপুর জেলা শাসন শুক্রবার দুপুর থেকে জেলায় সব ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাত্‍ক্ষণিক বলেন, শনিবার বেলা ২টায় গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেশনেত্রী বেগমখালেদা জিয়ার ভাষণ দেওয়া কথা৷এই জনসভা বানচাল করতেই সরকার পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷ ফখরুল দাবি করেন, তারা জনসভার জন্য আগেই অনুমতি নিয়েছিলেন৷ সব নিয়ম মেনেই তা করা হয়েছিল৷

কিন্তু সরকার বিরোধী দলকে জনসভা করতে দেবে না৷ সেজন্য গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুরে স্থানীয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ যা কিছু করছে, তা সাজানো নাটকের বিভিন্ন পর্ব ছিল৷ সরকার শুধু ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে নয়, গোটা গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জেলা সফরের অংশ হিসেবে বেশ কিছু দিন আগেই গাজীপুরের বদরে আলম কলেজ মাঠে জনসভার কথা জানিয়েছিল বিএনপি৷ এরপর তারেক রহমানের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ওই জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে একই মাঠে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ৷ মঙ্গলবার রাতে সেখানে বিএনপির লাগানো ব্যানার- ফেস্টুন ভাংচুর করে তাতে আগুন দেওয়া হয়৷ মাঠ দখলে নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকেই সেখানে দফায় দফায় মিছিল করতে থাকে৷ মাঠের ভেতরে সামিয়ানা টাঙিয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশের ব্যানার ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়৷

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলেজ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় পাঁচ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ এরপর দুপুরে ১৪৪ ধারা জারির কথা জানান জেলার পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ৷তিনি বলেন, যেহেতু তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেন নাই, সেহেতু আমরা কাউকেই অ্যালাও করছি না৷ এর প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, সরকার যে বিরোধী দলকে গণতন্ত্রের জন্য নূ্যনতম স্পেস দিতে চায় না, তার বড় প্রমাণ গাজীপুরের জনসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি৷ ঢাকায় আমাদের কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না৷ ঢাকার বাইরে আমরা যা একটু করতাম, সেক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি করল৷ এই অবস্থায় বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি জানতে চাইলে দলের মুখপাত্র বলেন, দলের চেয়ারপারসনসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেই আমরা পরবর্তী করণীয় জানাব৷এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য মির্জা ফখরুল দুপুরের পর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসায় যান বলে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান৷গাজীপুরে সভা সমাবেশে নিষেজ্ঞা জারি হওয়ার পর করণীয় ঠিক করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের জরুরি বৈঠকে ডাকা হয়েছে৷দলের যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভী জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক হবে৷ বৈঠকের পর রাত ৮টায় সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান তিনি৷