১৪৪ ধারা জারিদৈনিকবার্তা-গাজীপুর,২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ : শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভাস্থল গাজীপুর ভাওয়াল বদরে সরকারি কলেজ মাঠে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উলি্লখিত স্থানে কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কোনো প্রকার মিছিল-মিটিং ও জনসভা করা যাবে না৷

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠসহ পুরো জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন৷ শুক্রবার বেলা দুইটায় জনসভা স্থলে এসে সাংবাদিকদের এ ঘোষণার কথা জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ৷ তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে৷ তবে সমাবেশ করা না-করার বিষয়ে দুই পক্ষই রাতে বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান জানাবে৷ ছাত্রলীগ গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়৷ খালেদা জিয়াকে প্রতিহত করার হুমকিও দিয়েছে তারা৷ অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যে কোনো মূল্যে সমাবেশ করা হবে৷

হারুন অর রশীদ বলেন, যেহেতু বিএনপি ও ছাত্রলীগ একই স্থানে জনসভা করার ঘোষণা এবং প্রাণপণ চেষ্টা করছে, সেহেতু আমরা মনে করছি এখানে আইনশুঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে৷ এখানে কোনো পক্ষকেই জনসভা করতে দেওয়া হবে না৷ তাই জেলা প্রশাসনের সবার সঙ্গে কথা বলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷পুলিশ সুপার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়ার কারণে ছাত্রলীগ তারেক রহমানের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করা পর্যন্ত বিএনপিকে কোথাও সমাবেশ করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ এ কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় ওই দিন জেলার কোথাও কোনো ধরনের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না৷ ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি প্রচার শুরু হয়েছে৷

সমাবেশ করবেন কি না, জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ এখনো পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনিত হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না৷ তিনি জানান, ২৮, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীগের ব্যনারে আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে৷ সন্ধ্যায় আমরা সভা করে বিস্তারিত আপনাদের জানাব৷ গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম জানান, তাঁরা কেন্দ্রীয় নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন৷ সমাবেশ করা বা না-করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি৷তবে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমাবেশের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও গাজীপুর জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷ কারণ সেখানে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বক্তব্য দেবেন৷ আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই৷

তিনি জানান, সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুর জেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী দিলরুবা খানমের নেতৃত্বে এবং বেলা একটার দিকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে জনসভাস্থলের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পৃথক দুটি মিছিল হয়৷ মিছিল দুটি সমাবেশ স্থলে ঢুকতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে শুধু বদরে আলম সরকারি কলেজ নয়, গাজীপুরের কোনো জায়গায়ই খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না৷ তিনি বলেন, যেহেতু তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেন নাই, সেহেতু আমরা কাউকেই অ্যালাও করছি না৷ এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষকেই আমরা সমাবেশ করতে দেব না৷শুক্রবার সকালে জেলা সার্কিট হাউসে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এক সভার পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নূরুল ইসলামও সাংবাদিকদের একই ইংগিত দিয়েছিলেন৷

কাওকেই জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লন্ডন থেকে একটি তীর্যক মন্তব্য আসার পরই (ছাত্রলীগের) এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে৷ তাদের সহযোগিতা চাচ্ছি, যে একটি সুরাহা হয়ে গেলে গাজীপুরবাসী পরিত্রাণ পায়৷ তা যদি না হয় তখন তো আমাদের আইন অনুযায়ী যে পন্থ রয়েছে সে পন্থায় যেতে হবে৷ জনজীবনে বিঘ্ন ঘটে এরকম কোনো কিছু আমরা অ্যালাও করব না৷পাল্টা-পাল্টি সমাবেশের এরকম ঘোষণায় উত্তেজনা থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণত ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা, সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়৷ গাজীপুরেও যে তেমন ঘোষণা আসতে পারে, সে গুঞ্জন বৃহস্পতিবার থেকেই ছিল৷

জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ঘন্টাখানেক আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন,গাজীপুরে জনসভার অনুমতির সব প্রক্রিয়া তারা পালন করেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসনও তাদের আশ্বস্ত করেছেন৷তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কাল জনসভা হবেই৷ অবশ্যই আমরা কাল গাজীপুর যাবে৷ এখন বিরোধী দলের জনসভা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই৷

বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জেলা সফরের অংশ হিসেবে বেশ কিছু দিন আগেই গাজীপুরে জনসভার কথা জানিয়েছিল বিএনপি৷এরপর তারেক রহমানের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার মা খালেদার জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে বদরে আলম কলেজ মাঠে একই দিন সমাবেশের কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ৷ মঙ্গলবার রাতে কলেজ মাঠে এলাকায় বিএনপির লাগানো ব্যানার- ফেস্টুন ভাংচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ মাঠ দখলে নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে দফায় দফায় মিছিল চালিয়ে যায়৷ মাঠের ভেতরে সামিয়ানা টাঙিয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশের ব্যানার ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়৷

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কলেজ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় পাঁচ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল করিম রেজা জানান৷  তিনি জানান, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গী থেকে গাজীপুর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বশির উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি কর্মী ইজ্জত আলী ও রনি মিয়াকে পুলিশ আটক করে৷ একই অভিযোগে জয়দেবপুর থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধ ও বৃহস্পতিবার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ছয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল করিম রেজা৷গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হকের অভিযোগ, ভাওয়াল কলেজ মাঠে বিএনপির জনসভা ভণ্ডুল করতেই গত তিন দিন ধরে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে পুলিশ নেতা-কর্মীকে আটক করছে৷

অন্যদিকে ছাত্রলীগের গাজীপুর মহনগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুল ইসলাম দীপ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে৷ তা না হলে গাজীপুরের কোথাও তাদের জনসভা করতে দেওয়া হবে না৷  জেলার পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম, ভেবেছিলাম দুই পক্ষ সমঝোতায় আসবে৷যেহেতু তারা সমঝোতায় আসতে পারেননি এবং একই স্থানে সভা করার চেষ্টা করছেন, সে কারণে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে৷এটাতো আমরা পুলিশ প্রশাসন হতে দিতে পারি না৷ এ কারেণ সবার সাথে কথা বলে আমরা চিন্তা করেছি যে এখানে জনসভা করতে দেওয়া ঠিক হবে না৷ আগামীকাল এখানে কোনো সমাবেশ হবে না৷১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি মাইকিং করে এলাকায় জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি ৷

এদিকে, ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে খালেদার সমাবেশকে কেন্দ্র করে জারি হওয়া ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের দাবি করেছে গাজীপুর জেলা বিএনপি৷ শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টায় গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সালাউদ্দিন সরকারের টঙ্গীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান এ দাবিকরেন৷ প্রেস ব্রিফিংয়ে এম এ মান্নান জানান, সরকার ভয় পেয়ে খালেদা জিয়ার জনসভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করেছে৷ অবিলম্বে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি৷১৪৪ ধারা প্রত্যাহার না করা হলে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কঠিন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান এম এ মান্নান৷