দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ২৪ ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ শেখ হাসিনা সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, বুধবার থেকে মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর অর্পিত হলো৷ ফলে এই দায়িত্ব পালনের জন্য আপনাকে সর্বদাই সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে৷
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে সেনা সদস্যদের জীবনে প্রথম ও প্রধান ব্রত৷তিনি সেনা সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদেরকে নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের সেবা করতে হবে৷ এ কাজে কখনোই পিছ পা হবে না৷ আপনাদের জন্য আমার দোয়া ও শুভ কামনা রইল৷প্রধানমন্ত্রী বুধবার চট্ট্র্রগমের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত ৭১তম বিএমএ লংকোর্স এবং ৪২তম বিশেষ কোর্সের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণে এ কথা বলেন৷ প্রধানমন্ত্রী এর আগে একটি খোলা জীপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন৷
প্রধানমন্ত্রী প্রশিক্ষণে সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য সোর্ড অব অনার বিজয়ী ক্যাডেটকে আনত্মরিক অভিনন্দন জানান ও পদক বিতরণ করেন৷ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷অনুষ্ঠানে মন্ত্রিবর্গ, উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ’ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন৷
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পেঁৗছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ড লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ারদী, জিওসি, ২৪ ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার, চট্টগ্রাম এরিয়া, জেনারেল সাবি্বর আহমেদ এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার তাঁকে অভ্যর্থনা জানান৷শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশে ও বিদেশে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তাদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সকল মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে৷
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের যেকোন এলাকার জনগণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শানত্মি ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে জানে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা দেশের জনগণের একটি অবিচিছন্ন অংশ৷ আপনারা গণমানুষের সুখ-দুঃখ এবং হাসি-কান্নার সমঅংশীদার৷শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় দেশের যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অসহায় মানুষের পাশে থাকে৷
তিনি বলেন, পাশাপাশি এই বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শানত্মি প্রতিষ্ঠায়, সড়ক, ফ্লাইওভার এবং অবকাঠামো নির্মাণ, জলাবদ্ধতা দূরিকরণ ও ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে, হাতিরঝিল প্রকল্প বাসত্মবায়নে, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্ট তৈরিতে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছিল৷ সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সকলের গর্ব ও অহংকার৷
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে এখন একটি প্রতিশ্রম্নতিশীল ও শানত্মিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে৷ আমাদের দেশ এখন জাতিসংঘ শানত্মি মিশনে সর্বোচচসংখ্যক সৈন্য পাঠিয়ে বিশ্বে শানত্মি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রৰায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে নতুন সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী আধুনিকায়ন ও সহয়োপযোগী করতে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদকালে তাঁর সরকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, সশস্ত্র বাহিনী মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ পিস সাপোর্ট অপারেশনের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, এনসিও একাডেমি, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার ও ট্রাস্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪-এর আলোকে ফোর্সেস গোল-২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে৷ এই লক্ষ্য বাসত্মবায়নের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই সিলেটে একটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন গঠন করা হয়েছে৷তিনি বলেন, পাশাপাশি এরিয়া সদর দফতরসহ ৬টি নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ এ ছাড়া রামুতে একটি নতুন ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন গঠনের প্রসত্মাব অনুমোদন করা হয়েছে৷ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এ ধরনের একটি ডিভিশন গঠন করা হবে৷ পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হবে৷
শেখ হাসিনা বলেন, শুধুমাত্র নতুন স্থাপনাই প্রতিষ্ঠা করা নয়- বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে আরো আধুনিক ও সময়োপযোগী করতে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জামও ক্রঢ করা হয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার রাশিয়ার সাথে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷ এটি সামরিক বাহিনীর সৰমতাকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে এবং জাতিসংঘে আমাদের সেনা সদস্যদের মনোবলকে উজ্জীবিত করবে৷
শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি চীন, সার্বিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷তিনি বলেন, আমরা সেনা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নতুন ট্যাংক, এপিসি, মাল্টি-ব্যারেল রকেট লাঞ্চারসহ বহু অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংযোজন করেছি৷প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে (বিএমএ) একটি সর্বাধুনিক ও আনত্মর্জাতিক মানের একাডেমিতে রূপানত্মর করতে তাঁর সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেঙ্ নির্মাণ করছে৷
তিনি বলেন, ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের জন্য সকল প্রকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে৷ এতে বিএমএ’র প্রশিৰণ ও প্রশাসনিক কর্মকাঙ্ েগতিশীলতার সৃষ্টি হবে৷ এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি কোর্স চালু হতে যাচেছ৷ ক্যাডেটদের কমিশন লাভের মেয়াদকাল ২ বছর থেকে ৩ বছরে উন্নীত করা হচেছ৷ একটি উচচ প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে এ উদ্যোগ যুগানত্মকারী ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হবে বলে তিনি আশা করছেন৷
প্রধানমন্ত্রী সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত তরম্নণ সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের জীবনে আজকের এ দিনটি অত্যনত্ম আনন্দের এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন৷ আজ আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত কর্মকর্তা হিসেবে বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করছেন৷বুধবার১৪ জন নারী ক্যাডেটসহ মোট ১৫৯ জন ক্যাডেট ৭১তম বিএমএ লং কোর্স এবং ৪২ বিএমএ বিশেষ কোর্স থেকে ৪ জন ক্যাডেটসহ ১৭ জন ক্যাডেট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন৷
ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার মো. খালেদ হোসেন সকল বিষযে শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য সোর্ড অব অনার, জুনিয়র আন্ডার অফিসার এম এম জিয়াউল ইসলাম চীফ অব আর্মি স্টাল গোল্ড মেডেল পদক লাভ করেন৷বিভিন্ন আনত্মঃকোম্পানী প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে রউফ চৌধুরী বিএমএ কালার লাভ করেন৷পরে ক্যাডেটরা শপথবাক্য পাঠ করেন এবং তাদের স্ব স্ব পিতা-মাতা ও অভিভাবক তাদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন৷