দৈনিকবার্তা-বাগেরহাট, ২৪ ডিসেম্বর: সুন্দরবনের সার্বিক প্রাণবৈচিত্র্য ও বনজীবীদের ওপর তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনার বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে জানতে এখনো বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল৷ দলটি ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করবে৷ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে দিক নির্দেশনাসহ ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে দলটি৷ পরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তা প্রচারমাধ্যমকে জানানো হবে৷বুধবার সকালে সুন্দরবনে পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এলাকায় চলন্ত লঞ্চে বসে প্রেস ব্রিফিং করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এমেলিয়া ওয়ালস্ট্রম৷ সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাংকারডুবির ঘটনায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে এসেছে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ একটি দল৷ এমেলিয়া বলেন, তাঁদের দলটি নদীতে ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস তেলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, বনের ওপর এর প্রভাব স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কেমন হতে পারে, সুন্দরবনের বন্য ও জলজ প্রাণিবৈচিত্র্য এবং উদ্ভিদের ওপর এর প্রভাব কী হতে পারে, এই বনসংলগ্ন লোকালয়ের অধিবাসীসহ বনজীবীদের ওপর এই দুর্ঘটনার কী প্রভাব পড়তে পার্তেতা খুঁজে দেখার চেষ্টা করছে৷
বিশেষজ্ঞ দলটি ছয় ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে দলের প্রধান জানান, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর দলগুলোর প্রাপ্ত তথ্য এক করে ও পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করা হবে৷ এ কাজে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করবেন৷এদিকে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিক আলম মেহেদী এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজিবুর দুপুরে বাগেরহাটের মংলায় যাচ্ছেন৷ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক শুকুর আলী জানান, নৌ-পরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী রহমান দুপুরে মংলা আসছেন৷ তিনি মংলা-কুমারখালী-ঘষিয়াখালী নৌপথে বিআইডবি্লউটিএর চলমান খননকাজ পরিদর্শন করবেন৷ পরে তিনি জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে দেখা করতে সুন্দরবনে যেতে পারেন৷ জেলা প্রশাসক বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজিবুর রহমান বিকেলে শ্যালা নদীর ট্যাংকার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলবেন৷
বিকেলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের এবং সন্ধ্যায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের মতবিনিময় সভা করার কথা রয়েছে৷ উভয় সভা মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে৷এ্যামেলিয়া ওয়ালস্ট্রম বলেন, সুন্দরবনের দুর্ঘটনাস্থল শ্যালা নদী ও এর আশপাশে এক সপ্তাহ (২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত) কাজ করবে প্রতিনিধি দল৷ আশা করছি ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরবন বিষয়ে সরকারকে একটি প্রাথমিক সুপারিশ দিতে পারবো৷ তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সুন্দরবনে তেলের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করতে৷ আমাদের ২৫ সদস্যের এ বিশেষজ্ঞ দলে ১১ জন আন্তর্জাতিক এবং ১৪ জন জতীয় পর্যবেক্ষক রয়েছেন৷ এরা সবাই তেল দুষণ রোধ, বন, বন্য প্রাণী সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অভিজ্ঞ এবং এ দেশের বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক৷ আমাদের দলে সদ্যরা মোট ৬টি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করছে৷এর মধ্যে একটি গ্রুপ দেখছে- যে তেল ছড়িয়ে পড়েছে তার বিস্তৃতি কতখানি, ২য় গ্রুপটি দেখছে তেলের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব, ৩য় গ্রুপটি দেখছে পানিতে প্রাণীজ ও উদ্ভিদের ওপর তেলের প্রভাব, ৪র্থ গ্রুপটি দেখছে বন্য প্রাণীর ওপর প্রভাব, ৫ম গ্রুপটি দেখছে বন সংলগ্ন মানুষের জীবন-জীবিকা এবং ৬ষ্ঠ গ্রুপটি ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমের উপর তেলের প্রভাব দেখছে৷ পাশাপাশি বিভিন্ন নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ প্রতিনিধি দলের প্রধান আরো বলেন, আসলে মাত্র ৭-১০ দিনে এ ধরনের একটি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা সম্ভব নয়৷ পরবর্তিতে এর একটি ফলোআপ আকারে আসবে, সে সময়ে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি ও করণীয় ব্যাপারে তুলে ধরা হবে৷তিনি বলেন, অনেকে মনে করছেন জাতিসংঘের একটি দল এসেছে তারা এখনই ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরবেন৷ কিন্তু এটি আসলে তা নয়৷ এটি খুব কঠিন একটি কাজ৷ আমাদের এ সাত দিনে কাজ একটি প্রাথমিক বিশ্লেষণ, যা সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সহায়তা করবে৷
সুন্দরবনে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও জীব বৈচিত্রের ওপর এর প্রভাব পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলটি সোমবার বিকেলে বাগেরহাটের মংলায় আসে৷ ওই দিন রাত থেকে তারা এমএল ফ্লোটিং হোম (গ.খ. ঋখঙঞওঘএ ঐঙগঊ) নামে লঞ্চটিতে সুন্দরবনে অবস্থান করছেন৷মঙ্গলবার সকাল থেকে দলটি ৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ করছেন৷