দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর: বৃহস্পতিবার খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উত্সব শুভ বড়দিন৷এই দিনে খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টি-কর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এই ধরায় আগমন ঘটেছিল৷
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উত্সব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবেন৷বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটির দিন৷ দিনটি উপলৰে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন৷
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ৷ আবহমানকাল থেকে এদেশের মানুষ ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ৷ দেশে বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে নিজ নিজ অবস’ান থেকে অবদান রাখতে হবে৷বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে এ পূণ্যদিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ জাতি, ধর্মনির্বিশেষে সকলকে মানবতার মহান ব্রতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান৷ বড়দিন উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিম্নোক্ত বাণী দিয়েছেন৷
বাণীতে তিনি বলেন, শুভ বড়দিন উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ তাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করি৷ সত্য, ন্যায় ও করুণার পথ প্রদর্শক মহান যীশুখৃষ্ট এদিনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন৷ বিশ্বের সকল খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীর কাছে তাই এ দিনটি অত্যন্ত মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ৷
সকল ধর্মের মর্মবাণী শান্তি ও মানব কল্যাণ৷ যুগে যুগে মহামানবগণ মানুষের সত্ পথে চলার দিশারী হয়েছিলেন৷ মানুষকে অনুপ্রাণীত করেছিলেন ন্যায় ও কল্যাণের পথে চলতে৷ মহান যীশুখৃষ্টও একই ভাবে তাঁদের অনুসারীদের সত্কর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে গেছেন৷শুভ বড় দিন একটি সার্বজনীন ধর্মর্ীয় উত্সব৷ আর প্রতিটি ধর্মীয় উত্সবের অনত্মর্লোক হচ্ছে সমপ্রীতি, সহাবস্থান ও শুভেচ্ছা৷
মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য দেশ, সমাজ ও মানুষের কল্যাণে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাওয়া৷ হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার হরে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরণের অন্যায় অবিচার প্রতিরোধে ব্রতী হওয়া সকলের কর্তব্য৷ মহামানবদের জীবন দর্শন যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই মানবকল্যাণে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব৷ আর তাহলেই স্রষ্টার সন্তষ্টি অর্জনে আমরা সক্ষম হবো৷
দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন৷ দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসবে৷ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন৷ পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেককে গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটতে দেখা গেছে৷
রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় (পবিত্র জপমালার গির্জা) বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে৷ গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর ব্যবস’া করা হয়েছে৷ প্রচুর জরি লাগিয়ে গির্জার ভেতর রঙিন করা হয়েছে৷ ভেতরে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি৷
বড় দিন উপলৰে গির্জার মূল ফটকের বাইরে বসে মেলা৷ মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সানত্মা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হতে দেখা যায়৷ বুধবার রাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে৷ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন৷