দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২৪ ডিসেম্বর: আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে একইস্থানে একই সময়ে ২০ দলীয় জোটের জনসভা ও ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশকে ঘিরে পুরো এলাকায় বিরাজ করছে উত্তেজনা৷ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে ২০ দলের জনসভা উপলক্ষে ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের পোস্টার ও ব্যানারে অগি্নসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে দুবর্ৃত্তরা৷ এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে কলেজ মাঠে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ ২০ দলের জনসভা ও ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে পাল্টাপাল্টি লিফলেট বিতরণ করেছে দুই দলই৷ যেকোন মূল্যেই ওখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগ৷ আর ছাত্রদল জানিয়েছে জনসভা সফল করতে যা দরকার তাই করা হবে৷পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে৷গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে আগামী ২৭ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জনসভা ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা৷ মাঠ দখলে রাখতে বুধবার দু’পক্ষের নেতাকর্মীরাই সমাবেশস্থল ভাওয়াল কলেজ মাঠে মিছিল করতে গেলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়৷ এতে কোনো পক্ষই মিছিল করতে পারেনি৷ এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্কন্ঠা বিরাজ করছে৷এদিকে কলেজ মাঠে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে কেউ কর্মসূচি পালন করতে পারবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে আহুত জনসভায় ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার৷
অপরদিকে ওই জনসভা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা৷ এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ওই জনসভা স্থলে বিএনপির টাঙানো ব্যানার ও পোস্টারে অগি্নসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা৷এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দুই দলের নেতাকর্মীরাই ভাওয়াল কলেজ মাঠে মিছিল করতে গেলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়৷ এদিকে জনসভা সফল করতে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন,’আজকে পরিস্থিতি যেভাবে পরিকল্পিতভাবে সংঘাতের দিকে ঢেলে দেয়া হচ্ছে , তা আমরা চাইনি৷ কিন্তু তাই বলে আমরা আত্মরক্ষা করতে পারব না এমনটি কোথাও লেখা নাই৷ আমরা জনসভা করব, এটা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত৷ তবে আমাদের কর্মকান্ড চালাতে গিয়ে ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ৷ তাদের পেন্ডিং মামলায় হয়রানি করে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন না করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷ তিনি আরও বলেন, গাজীপুর রাজনৈতিক সহাবস্থানের এলাকা৷ তবে এটার যদি ব্যতিক্রম ঘটে তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে৷
সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপি সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল উপস্থিত ছিলেন৷এদিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের দাবি, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রত্যাহার না হলে আগামী ২৭ ডিসেম্বর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে তারা এবং যে কোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার জনসভা প্রতিহত করা হবে৷
এ বিষয়ে যুবলীগ সভাপতি আলতাব হোসেন দৈনিকবার্তাকে বলেন, জনসভা প্রতিহতের জন্য ছাত্রলীগ যে কর্মসূচি দিয়েছে তার সাথে জেলা যুবলীগ একাত্মতা প্রকাশ করছে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত তারেক জিয়া তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করবে অথবা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভাওয়াল কলেজ মাঠে খালেদা জিয়াকে জনসভা করতে দেয়া হবে না৷জনসভা প্রতিহতের ডাক দিয়ে ইতোমধ্যে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে৷ এতে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি, সহ সম্পাদক সেলিম আজাদ প্রমুখ৷
এছাড়া তারেক রহমানের কটুক্তির প্রতিবাদে তার বিরুদ্ধে বুধবার সকালে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তওহীদুল ইসলাম দীপ বাদী হয়ে গাজীপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন৷ মামলার শুনানি শেষে আদালতের বিচারক চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা বেগম তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন৷
মামলার বাদী মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তওহীদুল ইসলাম দীপ জানান, তারেক রহমানের কটুক্তির কারণে বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষের ন্যায় ছাত্রলীগও আহত হয়েছে৷ তাই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে৷ এ সময় আদালতে মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, হারিস উদ্দিন, আমানত হোসেন খানসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন৷
এদিকে রাজনৈতিক মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসুচিতে স্বস্তিতে নেই সাধারণ মানুষ৷ শহর জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে জনসভার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা৷তবে এঘটনায় উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বুধবাবর সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে৷ এ অবস্থায় পুলিশ বলছে, কর্মসূচি ঘিরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানুষের জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন তারা৷ এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ, পিপিএম বার জানান, দুই দলের নেতাকর্মীরা আজকে মাঠে মিছিল করার চেষ্টা করেছে৷ তবে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়৷ দুই দলের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান না করে কাউকে কলেজ মাঠে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেয়া হবে না৷