619006590724abf96c749ee1136201d9-16

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ আগামী ৭ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে৷ বুধবার বেলা সোয়া একটার দিকে বিচারক আবু মোহাম্মদ জমাদ্দার এই তারিখ ধার্য করেন৷ খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফজলে রাব্বী হলের সামনে সংঘর্ষ হয়৷ এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে৷

পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়৷ বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিচারক প্রথম এজলাসে ওঠেন৷ এ সময় খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মামলার কার্যক্রম পরে শুরু করার আবেদন করেন৷ আদালত সাময়িকভাবে মুলতবি ঘোষণা করে বিচারক এজলাস ছাড়েন৷ বেলা পৌনে একটার দিকে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিচারকাজ শুরু হয়৷ এ সময় তাঁকে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়৷ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ৭ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়৷

গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ নয়ংজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ এর পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী বিচারক নিয়োগ ও মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন৷ উচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেন৷ গত সপ্তাহে বিচারক বাসুদেব রায়কে বদলি করে তাঁর স্থলে আবু আহমেদ জমাদ্দারকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়৷খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফজলে রাব্বী হলের মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে৷ তবে কয়জন আহত হয়েছেন,তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি৷ সংঘর্ষে আহত ১৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্‍সা দেওয়া হয়েছে৷

আওয়ামী লীগ কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর পর তার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন এ মামলার নতুন বিচারক৷খালেদার হাজিরা ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই পুলিশ বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাস ও আশেপাশের সড়কগুলোতে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে৷ যানবাহন ও মানুষ চলাচলের ওপরও আরোপ করা হয় কড়াকড়ি৷অন্যদিকে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বকশীবাজার থেকে ফজলে রাবি্ব হল পর্যন্ত রাস্তা আটকে মিছিল করতে থাকেন৷

c55c596684e13595ed5840095ffbb4fc-15

বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন তার গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হওয়ার পর ১২টার দিকে বকশী বাজার মোড় থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ৷পরে তা নাজিমউদ্দিন রোড, পলাশী মোড়, চান খাঁর পুল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে৷ এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে নিলে পলাশীর মোড় হয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর৷এ সময় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীদের (সিএসএফ) সঙ্গে বিএনপির একদল কর্মীকেও লাঠি হাতে গাড়ির সামনে সোমনে এগোতে দেখা যায়৷ তাকে নিরাপত্তা দিতে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়িও ছিল৷

খালেদা জিয়ার গাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ঢুকে যাওয়ার পর বাইরেও পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়৷হালকা গোলাপী রংয়ের শাড়ি পরিহিত খালেদা গাড়ি থেকে নেমে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের স্লোগানের মধ্যে এজলাসে ঢোকেন৷ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস, শহীদুল্লাহ চৌধুরী এ্যানীসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন৷

খালেদা আসার আগেই এ মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের কথা জানিয়ে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা৷ এ মামলার দায়িত্ব পাওয়া নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ১৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে খালেদার আবেদন মঞ্জুর করেন৷খালেদার আইনজীবীদের একের পর এক আবেদনের মধ্যে মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ চারটি ধার্য তারিখেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে না পারায় এদিন তার বাকি জবানবন্দি শোনার তারিখ ছিল৷ তবে বিচারক শুনানি মুলতবি করে আগামী ৭ জানুয়ারি বাদীর সাক্ষ্য শোনার নতুন তারিখ রাখেন৷

বেলা সোয়া একটার দিকে খালেদা যখন আদালত ত্যাগ করেন ততোক্ষণে আদালতের বাইরের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসে৷ তিনি নির্বিঘ্নেই গুলশানের বাড়িতে ফেরেন৷পরে খালেদার আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মিয়া আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতে বলেছি যে, আইনের ব্যত্যয় করে, অনিয়ম করে দুই মামলায় চার্জ ফ্রেম করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে হাই কোর্টে আমাদের একটি আবেদন বিচারাধীন৷বিচারক আমাদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ৭ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন৷

খালেদার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি, এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা, রাজনৈতিক মামলা৷ ইতিহাসে এই মামলাটি থাকবে, সেখানে আপনাদের নাম যেমন থাকবে, আমাদের নামও পাশাপাশি থাকবে৷ সেই ইতিহাসে যেন দেখা যায় যে, দেশে আইনের শাসন আছে, মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে৷ বাইরে থেকে কে কি বলল, কতটা কি প্রভাব আছে সেদিকে আপনি দৃষ্টি দেবেন না, এটাই আমরা আশা করি৷এর আগে শুনানিতে তিনি আদালতকে বলেন, আপনি এ মামলায় নতুন, সবকিছু এখনো জানেন না৷ আমরাও আপনার সম্পর্কে জানি না৷ এজন্য আমাদের কিছু সময় দিন৷ আপনিও মামলা সম্পর্কে জেনে নিন৷

সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি অভিযোগ গঠনকারী বিচারক ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায়৷ তাকে সরকার সমপ্রতি বদলি করলে খালেদার মামলার দায়িত্ব পান আবু আহমেদ জমাদার৷বাসুদেব রায়কে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি বিচারক বদল নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলে, এটা বিচারের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারের শামিল৷গত ১৯ মার্চ বাসুদেব রায়ের আদালত জিয়া এতিমখানা (অরফ্যানেজ) ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করে৷

এরপর সময়ের আবেদনের কারণে কয়েক দফা তারিখ পিছিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যে খালেদার অনুপস্থিতিতেই এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়৷এ দুটি দুর্নীতি মামলা বাতিলে উচ্চ আদালতে গিয়ে বিফল হওয়ার পর বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টে গিয়েছিলেন খালেদা৷কিন্তু সব আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পরও বিভিন্ন আবেদন করতে থাকেন খালেদার আইনজীবীরা৷জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি৷

মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি৷সালিমুল ও শরফুদ্দিন জামিনে রয়েছেন৷ কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷ এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক৷দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন এই মামলায় খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন৷খালেদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী হারুন-অর-রশিদ৷ এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে৷

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডবি্লউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক৷ তার বিরুদ্ধেগ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে৷