দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর: আবাসন খাতে টাকা কোথায় থেকে এলো তা জানতে চাইবে না সরকার৷এ জন্য একটি নীতিমালাও তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন৷ তিনি বলেন, আমরা এমন একটা নীতিমালা করতে যাচ্ছি যে, যাতে কেউ এখানে বিনিয়োগ করলে তার টাকা কোথায় থেকে এলো এ নিয়ে কেউ কথা বলতে না পারে৷ কারণ বাইরের দেশে এ খাতে কেউ টাকা দিলে তাদেরকে সে দেশের সরকার কিছুই জিজ্ঞাস করে না৷ মালয়েশিয়ার সঙ্গে ৮ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী৷
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৫ দিনব্যাপী রিহ্যাবের শীতকালীন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান৷ দেশের আবাসন খাত বিকাশে ২০ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি৷ আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসবেন৷ তখন তাকে এটা অবহিত করবো৷
বস্তিবাসীর আবাসন সমস্যায় সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে বাসস্থান একটি৷ বস্তিবাসী ঘর ভাড়া নিয়ে যে টাকা পরিশোধ করে, তাতে দেখা গেছে ২০ বছরে ওই টাকা দিয়ে সে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারে৷ বিষয়টি চিন্তা করে আমরা এরই মধ্যে রাজধানীর মিরপুর ও খুলনায় স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি৷ এর মধ্যমে তারা প্রতিদিন ১৭৫ টাকা করে জমা দিয়ে ২০ বছরে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবে৷মন্ত্রী বলেন, রিহ্যাব বলছে তাদের ১০ হাজার ফ্ল্যাট এখনো অবিক্রিত৷ এটা আসলে কিছুই না৷ আমরা আগামী চার বছরে এক লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণ করবো৷ এরই মধ্যে ১৮ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে৷ এ ফ্ল্যাটগুলোও তো আমরা বিক্রি করবো৷
সারা দেশে আবাসন শিল্পের বিকাশে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ডের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন৷
তিনি আরো বলেন, ২৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মন্ত্রণালয়ে আসবেন৷ তখন উনাকে এই বিষয়ে অবহিত করা হবে৷ আবাসন শিল্পের বিকাশে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে৷ মৌলিক চাহিদার মধ্যে বাসস্থানও অন্যতম৷ আমরা বস্তিবাসীর জন্যও স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি৷ পাইলট প্রকল্প হিসেবে নগরীর মিরপুর ও খুলনায় তা চালু করতে যাচ্ছি৷ যাতে করে বস্তিবাসীরা প্রতিদিন ১৭৫ টাকা করে জমা দিয়ে ২০ বছরে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারেন৷আবাসন ব্যবসায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিন থেকে চার শতাংশের উপরে সুদ নেওয়া হয় না৷ আমরা এই খাতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসবো বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি৷
ডেভলপার কোম্পানি প্রসঙ্গে বলেন, আমরা কারোর কাজকে বাধা দেব না৷তারা যদি খেলার, মাঠ ও মুক্ত পরিবেশ রেখে এই ব্যবসা পরিচালনা করে যায়৷
মন্ত্রী আরো জানান, নগরীর মিরপুরে ১৮৭ একর জমির ওপরে ৪০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে৷ আমরা একটা আইন করতে যায় যেখানে কেউ ফ্ল্যাট কিনলে যাতে পরবর্তী পর্যায়ে কোনো জবাবদিহিতা না করতে হয়৷ বিশ্বের উন্নত দেশেও ফ্ল্যাট ক্রেতার জবাব দিতে হয় না যে, ফ্ল্যাট কেনার টাকা কিভাবে এসেছে৷তিনি আরও জানান, সরকার এরইমধেই একলাখ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে৷ এর মধ্যে উত্তরায় ১৮ হাজার, ঝিলমিল প্রকল্পে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ও পূর্বাচলে প্রায় আট হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা আছে৷
বিদু্যত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, রিহ্যাবের প্রায় ১০ হাজার ফ্ল্যাট অবিক্রিত রয়েছে যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা৷ এই ফ্ল্যাট বিক্রি না হলে রিহ্যাবের সদস্যরা বাঁচতে পারবে না৷নসরুল হামিদ আরো বলেন, পর্ায়ক্রমে সব ফ্ল্যাটে বিদু্যত্ সংযোগ দেওয়া হবে৷ আমরা এখন সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত্ উত্পাদনের ক্ষমতা রাখি৷
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বিপু বলেন, আপনি সমপ্রতি কেরাণীগঞ্জে গিয়েছিলেন৷ সেখানের প্রায় ৭৫ ভাগ এলাকা ড্যাপের আওতায় আছে বলে জানিয়েছেন এটা মেনে নেওয়া যায় না৷ কারণ ঢাকার পরে কিছু চিন্তা করলে সেটা হবে কেরানীগঞ্জে৷
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন এখানে তৈরি হবে বড় কারাগার৷ এছাড়া বন্দর থেকে শুরু করে এখানে বিদু্যতের উন্নয়ন হচ্ছে সুতরাং ৭৫ ভাগ ড্যাপের কথা বললে উন্নয়ন কাজ হবে না৷
রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্ত্বে বক্তব্য রাখেন অন্যদের মধ্যে সংগঠনের সহ-সভাপতি রবিউল হক প্রমূখ৷ রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামছুল আল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদু্যত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ তিমন্ত্রী নসরুল হামিদ৷ আরো ছিলেন রিহ্যাব সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভুঁইয়া, রবিউল হক, কামাল চৌধুরী প্রমুখ৷এদিকে গত ২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব জানায়, তাদের এবারের শীতকালীন মেলায় ১৫০টি স্টল থাকছে৷ পাশাপাশি কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান৷ রিহ্যাব ফেয়ারে প্রবেশমূল্য সিঙ্গেল ৫০ ও মাল্টিপল এন্ট্রি ১০০ টাকা৷ প্রবেশ টিকিটে থাকবে র্যাফেল ড্র এবং ৪২ ইঞ্চি এলইডি টিভিসহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন পুরস্কার৷ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে৷