দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার বলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি জাতির কাছে ক্ষমা না চান তবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর বিএনপিকে গাজীপুরে সমাবেশ করতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগ৷
ছাত্রলীগ বলছে, গাজীপুরের ওই সমাবেশ প্রতিহত করবে তারা এবং উল্টো নিজেরাই সেখানে সমাবেশ করবে৷ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে এক মানববন্ধনে এসব বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ৷ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি তারেক রহমানের দ্রুত বিচারের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্রলীগ৷
সোহাগ বলেন, জাতির পিতাকে নিয়ে তারেক রহমান যে কটূক্তি করেছেন, জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে কোনোভাবেই তাদের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না৷বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে অবমনাকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে বাংলার ছাত্র সমাজ তা কোনদিনও মেনে নেবে না৷ বিএনপি যেখানে সমাবেশ করবে সেখানে ছাত্র সমাবেশ করার জন্য আবেদন করেছে ছাত্রলীগ৷ সেখানে আমরা সমাবেশ করবো৷
দেশের ৪৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে গত ১৫ ডিসেম্বর ইস্ট লন্ডনের দ্যা অট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সভায় তারেক বলেন, আওয়ামী লীগ দাবি করে তাদের দল নাকি মুক্তিযুদ্ধের দল অথচ চোরের দল চাটার দল আখ্যা দিয়ে শেখ মুজিব নিজেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন৷ এমন একটি কাজ করার জন্য তাহলে তো শেখ মুজিবই বড় রাজাকার৷
বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকালীন দল বটে তবে মুক্তিযুদ্ধের দল নয়৷ এ দলের অধিকাংশ নেতাই মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশ নেননি৷
ওই বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন আদালতে তারেক রহমানের মানে ডজনেরও বেশি মানহানির মামলা করেছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা৷ এসব মামলার বেশকটিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এই ছেলের নামে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা৷
১৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের ওই বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কুপুত্রকে জিভ সামলে কথা বলতে বলেন৷’ এর জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন উল্টো প্রধানমন্ত্রীকেই জিভ সামলানোর পরামর্শ দেন৷
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে বক্তব্য দিলেও ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে জাতীয় নেতা হিসেবে মর্যাদা দিয়ে সব বিতর্কের ঊধের্্ব রাখা উচিত্৷
তবে ওই সমাবেশের পরই এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর কাতারে আনতে চান, যা চরম রাজনৈতিক ধৃষ্টতাপূর্ণ৷
আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের যে মাঠে খালেদা জিয়ার জনসভার কর্মসূচি রয়েছে, সেদিন সেস্থানে সমাবেশ করতে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি চেয়েছে ছাত্রলীগ৷বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলার জন্য তারেক রহমান ক্ষমা না চাইলে খালেদার জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দেওয়ার পর এই পদক্ষেপ নিল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটি৷
ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ মঙ্গলবার বলেছেন, গাজীপুরে সমাবেশ করতে নিয়ম-কানুন অনুসারে আবেদন করেছি৷ সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে৷ যে কোনো মূল্যে সমাবেশ করতে চাই এবং করবই৷
ছাত্রলীগকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের জনসভা সফল করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছে৷ ফলে এই সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ সাধারণত এক স্থানে দুই পক্ষ সমাবেশ ডাকলে স্থানীয় প্রশাসন গোলযোগ এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা বন্ধ করে দেয়৷
নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন জেলায় জনসভা করে যাচ্ছেন খালেদা৷ এরই অংশ হিসেবে ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে জনসভার কর্মসূচি দেয় ২০ দলীয় জোট৷
এর মধ্যেই গত ১৫ ডিসেম্বর খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক লন্ডনে এক সভায় বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলে বক্তব্য রাখেন৷এই বক্তব্যের পরপরই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ এর মধ্যেই খালেদার সমাবেশ ঠেকানোর হুমকি দেয় ছাত্রলীগ৷
২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেকের বিচার দ্রুত করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মানববন্ধনে সোহাগ বলেন, জাতির পিতাকে অবমাননা করায় গাজীপুরের ছাত্রসমাজ এবং শ্রমজীবী মানুষ মেনে নিতে পারেনি৷ তাই প্রতিবাদ জানিয়েছে, সমাবেশ করতে তারা দেবে না৷তারেক রহমানের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে বদরে আলম কলেজ মাঠে ছাত্রলীগ সমাবেশ করবে বলে জানান সোহাগ৷
গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দিপ ইতোমধ্যে বলেছেন, ২৭ তারিখের আগে যদি তারেক রহমান জাতির কাছে ক্ষমা না চান, তাহলে কোনো প্রকারেই খালেদা জিয়াকে গাজীপুরে জনসভা করতে দেওয়া হবে না৷
ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ ও টঙ্গী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও তারেকের কুশপুতুল দাহ করছে৷এদিকে জনসভাস্থল কলেজ মাঠ শনিবার ঘুরে দেখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি মেয়র এমএ মান্নান, কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল৷