দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর: দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম৷মঙ্গলবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন৷এ সময় মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সবগুলো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলেছে৷ বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়েছে৷
তিনি বলেন,এখানে একটি পয়সাও তসরুফ বা আত্মসাতের কোনো অভিযোগ নেই, অথচ এ দুটি মামলা আইন সম্মত নয়, অনৈতিক-অবৈধ সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদনের জন্যই চালানো হচ্ছে৷আর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রতিনিয়ত জনগণের সামনে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এতিমের টাকা মেরে খাওয়া হয়েছে৷ এখানে তসরুফের কোনো অভিযোগই নেই৷খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কার কথা বলে মামলা দুটি প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছে দলটি৷
মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,দেশনেত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে সরকার৷ আমরা অবিলম্বে এই মামলা দুটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি৷
সোয়া ৫ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা এ দুটি মামলা বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে৷ এ দুই মামলা বিচারের দায়িত্বে থাকা ঢাকার বিশেষ জজ-৩ বাসুদেব রায়কে সমপ্রতি পটুয়াখালীতে বদলি করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবু আহমেদ জমাদারকে৷২০০৮ ও ২০১০ সালে দায়ের করা এ দুটি মামলায় বিচারক নিয়োগের বৈধতা এবং অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আপিল বিভাগ পর্যন্ত গেলেও সর্বোচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেয়৷
এ মামলার আদালত পরিবর্তনের জন্য খালেদার দুটি আবেদন বর্তমানে হাই কোর্টে রয়েছে৷বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হাই কোর্টে বিচারাধীন একটি বিষয়ের নিষ্পত্তির আগেই সরকারের আইন মন্ত্রণালয় বিশেষ আদালতের বিচারক পরিবর্তন করায় বোঝা যায়, তারা বিচার বিভাগেও প্রভাব বিস্তার করছে৷ এটা বিচার বিভাগের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ ও বিচার বিভাগের নিয়মনীতির পরিপন্থি৷ এর ফলে এটা প্রতীয়মান হয়, এই আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে৷
এর পেছনে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল৷
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ সাজিয়ে দুটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে৷ এখন সরকার দ্রুত মামলার বিচার শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷… আমরা মনে করি এটি সরকারের হীন ষড়যন্ত্রের অংশ৷মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, মামলা দুটি প্রত্যাহারে সরকারের যদি শুভ বুদ্ধির উদয় না হয়, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে যাবে৷
একইসঙ্গে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ফখরুল বলেন, দেশে ন্যায়বিচার থাকলে’ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কখনোই এমন মামলা চলত না৷ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নেই জেনেও আইনমান্যকারী নেত্রী হিসেবে দেশনেত্রী আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতেও প্রতিকার লাভের সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে৷ সেখানকার ভূমিকায় আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি৷
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, তারা একদিকে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবেন, অন্যদিকে রাজপথেও আন্দোলন চালাবেন৷জনগণের গণতান্ত্রিক ও ভোটের অধিকার ও ন্যায়বিচারের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে সরকারের হীন ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে৷
খালেদার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২১ অগাস্টসহ অন্যান্য মামলাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে ফখরুলের দাবি৷তিনি লন্ডনে একটি বক্তব্য রেখেছেন, তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা হয়েছে৷ তাকেও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য এসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে৷
ফখরুলের হিসাবে, তার দলে এমন কোনো নেতা নেই যার নামে অন্তত ৫-৬টি মামলা নেই৷এ পর্যন্ত আমাদের কাছে আসা পরিসংখ্যানে আমাদের বিরুদ্ধে তিন হাজার মামলায় ৫ লাখ আসামি করা হয়েছে৷
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন ফখরুল৷ তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বলছেন৷ তিনি একটি বিশেষ দলের হয়ে কাজ করছেন৷ তিনি গতকাল রংপুরে একই ভাষায় কথা বলেছেন৷ দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দুটি প্রাইভেট ট্রাস্ট সংক্রান্ত৷ এ সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করার এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের নেই৷দুদক কমিশনার চুপ্পু সমপ্রতি বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় কমিশনকে অকার্যকর করে রেখেছিলেন৷দুদক ‘বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা আর মন্ত্রীদের দায়মুক্তি দেয়’- এমন অভিযোগ খালেদা প্রমাণ করতে পারবেন না বলেও তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন৷
এর জবাবে ফখরুল বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫ মামলা প্রত্যাহার করা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপনারা গিয়েছিলেন কি না৷প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে যে ভাষায় কথা বলেন, তাতে বিচার বিভাগ প্রভাবিত না হয়ে পারে না’
আইনমন্ত্রী সমপ্রতি বলেছেন,খালেদা জিয়া যে এখনো বাইরে আছেন, তা সরকারের বদান্যতায়৷ আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, মামলা চলছে আদালতে, এটা সরকারের বদান্যতা হবে কেন? আইনমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তারা বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করছে৷অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, রফিক শিকদার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন৷