1418925009

দৈনিকবার্তা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২২ ডিসেম্বর: আওয়ামী লীগকে পুলিশ-র্যাব ছেড়ে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা বলছেন গায়ের চামড়া তুলে নেবে৷পুলিশ-র্যাব ছেড়ে তারা মাঠে নামুক, এরপর দেখবো কে কার চামড়া তুলে নেয়৷ সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন৷

স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠে আয়োজিত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট হারুন আল রশীদসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি৷

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সারাদেশ এক অস্বস্তিকর কারাগারে পরিণত হয়েছে৷ তারেক জিয়া লন্ডনে বসে বইপত্রের আলোকে কিছু কথা বলেছেন, তাতেই আওয়ামী লীগের গায়ে আগুন ধরে গেছে৷ তারেক ভুল বলে থাকলে বইপত্র নিয়ে এসে তারা প্রমাণ করুক৷তিনি বলেন, এটিকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যাচ্ছে তাই কথা বলছে আওয়ামী লীগ৷

ক্ষমতাসীন সরকারকে পুলিশ র্যাব ব্যতীত ক্ষমতা ছেড়ে বিএনপিকে রাজপথে মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷তিনি বলেন; অতীতে গুম, খুন, হামলা, মামলা, গ্রেফতার করে ক্ষমতায় আসলেও বেশিদিন কেউ টিকতে পারেনি৷ আওয়ামী লীগও ভোট ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতায় টিকতে পারবে না৷ টিকতে দেয়া হবে না৷ আন্দোলনের মাধ্যমে শিগগিরই পতন ঘটানো হবে৷

সমপ্রতি আওয়ামী লীগ নেতাদের দেয়া বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আগামী দিনে রাজপথের আন্দোলনে কে কার গায়ের চামড়া তুলে ফেলবে আর কে কার পা ভেঙ্গে দেবে তা নির্ধারণ করবে এ দেশের জনগণ৷ রাজপথে আসেন দেখা হবে৷বিএনপিকে ভাঙ্গতে বারবার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল৷ যিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বসে থাকেনি রণাঙ্গণে লড়াই করেছেন৷ তাই বিএনপিকে শত চেষ্টা করেও ভাঙ্গা যাবে না, নির্মূল করা যাবে না৷

বেতন বাড়ানোর উদ্যোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বেতন বাড়ানো হোক বিএনপিও চায়৷ যাতে করে কাউকে ঘুষ খেতে না হয়৷ পাশাপাশি অবৈধ সরকার যেভাবে প্রতিনিয়ত বিদু্যত্‍, গ্যাসের মূল্য বাড়াচ্ছে তাতে করে সাধারণ মানুষের বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ একাত্তরের মতোই এখনো দেশে গুম-খুন, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে এ অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর নতুন করে চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনা ধ্বংস করতে বুদ্ধিজীবী হত্যার মতোই এখন দেশে গুম-খুন করা হচ্ছে৷ফখরুল বলেন, দেশের সংস্কৃতি ও মনন ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানিরা তাদের দোসরদের দিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল৷ একইভাবে যারা বাংলাদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধ করতে চেয়েছিল, আওয়ামী লীগের ভিন্নমতালম্বী মুক্তিযোদ্ধা, তাদের নিধনের জন্য গঠন করা হয়েছিল একটি আলাদা বাহিনী, মুজিব বাহিনী৷

ফখরুল অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর আবার নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে৷ এখন গুম-খুনের মাধ্যমে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ভিন্নমতের লোকদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হচ্ছে৷আওয়ামী লীগ নিজেকে ছাড়া আর কাউকে চেনে না, এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এটাই তাদের চরিত্র৷ যারাই তাদের বিপক্ষে কথা বলে বা ভিন্নমত পোষণ করে, তাদের পাকিস্তানের চর বা দোসর বলা হয়৷ জানি না শহীদ বুদ্ধিজীবীরা এখন বেঁচে থাকলে তাদের কী শুনতে হতো৷

আওয়ামী লীগ কত দিন মুক্তিযুদ্ধ করেছে তা হিসাব করে বলে দেয়া যাবে বলে দাবি করেন ফখরুল৷ তিনি বলেন, এটা প্রমাণিত যে তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হোক তা চাননি৷ এই হীনম্মন্যতা থেকে আওয়ামী লীগ তাদের ভিন্নমতাম্বলীদের দমন-পীড়ন, গুম-খুন করছে৷

৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক নির্বাচন দাবি করে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ হলো লজ্জা, শরম ও হায়াহীন৷ তারা এখন চড়া গলায় গণতন্ত্রের কথা বলছে৷ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে নানা কথা বলছে, বিভিন্ন রকমের কর্মকৌশল করছে৷ কিন্তু এতে কাজ হবে না৷ বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আমাদের আন্দোলন, আমরা একটি নির্বাচন চাই, যে নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে৷ এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সকল ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করা হবে৷

জেলার ৮টি উপজেলা,৫টি পৌরসভা এবং ১৩ টি ইউনিটের প্রায় অর্ধ শতাধিক কাউন্সিলর ও পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী এ সম্মেলনে অংশ নেয়৷ তিনি বলেন,শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের লোকজন ভালবেসে গণতন্ত্রের মানস কন্যা বলেন৷ অথচ এই শেখ হাসিনা দেশের গণতন্ত্রকে একদলীয় বাকশালে বন্দি করার পায়তারা করছে৷ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জোর করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতায় বসে আছেন৷ সত্য কথা বললে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেন৷ এই ধরনের গণতন্ত্রের মানস কন্যাকে বাংলাদেশের মানুষ চায় না৷

তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিচার বিভাগকে পুলিশের চেয়ে ভয়ংকর করে দিয়েছে৷ দেশকে কারাগারে পরিণত করে গত ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে যে নির্বাচন দেশের জনগণ ও বিশ্বে কোনো গণতান্ত্রিক দল গ্রহণ করেননি৷ আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান সত্য বলায় গায়ে জালা ধরেছে৷ তারেক রহমান তথ্য ভিত্তিক বক্তব্যে রেখেছেন যদি ভুল বলে থাকেন তাহলে সাহস থাকলে মোকাবেলা করুন৷

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্বৈরচার ও নব্য বাকশালীদের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে খালেদা জিয়া আগামী দিনে আন্দোলনের যে ডাক দিবেন৷ আপনারা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে শরীক হবেন৷

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আনোয়ার হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ খালেক এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহাবুব শ্যামল৷ জেলা বিএনপির আহবায়ক হাফিজুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এডভোকেট হারুণ আল রশিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার, ড. মুশফিকুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, নির্বাহী কমিটির সদস্য খুরশেদ আলম ও তকদির হোসেন জসিম৷সম্মেলন পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জহিরুল হক৷