দৈনিকবার্তা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ২২ ডিসেম্বর: শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন তাদের (সরকার) বংশবদ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। বিচার বিভাগে ন্যায় বিচার পাওয়া যায় না।এখন এমন বিচার বিভাগ যা পুলিশ বাহিনী থেকেও ভয়ংকর। এই বিচার বিভাগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৮ হাজার মামলা খারিজ করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের নামে এরকম প্রহসন জনগন সহ্য করবে না।’’ একই সঙ্গে আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীকে বাদ দিয়ে রাস্তায় নামার জন্য ক্ষমতাসীন দলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে দলটি।
সোমবার বিকালে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা বি এন পি সম্মেলনের উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘ সরকারের মন্ত্রীরা আন্দোলনের নামে রাস্তায় নামলে হাত-ভেঙে দেয়া হবে, গায়ের চামড়া তুলে নেয়া হবে ইত্যাদি কথা বলছেন।’’ ‘‘ আমরা তাদের স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, পুলিশ ছাড়া রাস্তায় নামুন। দেখা যাবে গায়ের চামড়া কিংবা হাত-পা কারা ভাঙবে, জনগন তা বলবে।’’
জেলার পৌর মু্ক্তিমঞ্চে এই সম্মেলন শুরু হয়। দীর্ঘ ৬ বছর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় পতাকা উত্তোলন ও কবুতর ও বেলূন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান হারুন আল রশিদ। জেলার ৮ টি উপজেলার ৫ পৌরসভার ১৩টি ইউনিটের অর্ধশতাধিক কাউন্সিলর এবং সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী এই সম্মেলন অংশ নেন।
সম্মেলনে হাফিজুর রহমান মোল্লা কচিকে সভাপতি জহিরুল হক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক এবং প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলকে সিনিয়র সহসভাপতি করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সরকারের দমনপীড়নের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগনের সকল অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। ৫ জানুয়ারি মানুষজনকে তারা ভোট দিতে দেয়নি।’’
‘‘ জোর করে ক্ষমতায় বসে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সরকার ভেবেছে, এভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মামলা দিয়ে তারা (সরকার) বিএনপির নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখবে।’’।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ দেশকে সরকার এক চরম অন্ধকারে দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হবে। সরকার এসব কানে তুলছে না। তাদের কথা শুনলে মনে হবে তারা এদেশের মালিক-মোক্তার হয়ে গেছে। তারা তালুকদারি পেয়েছে।’’
জাতীয় পে-কমিশন ঘোষনায় মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘‘ পত্রিকায় দেখলাম সরকারি কর্মকর্তাদের ১০০ ভাগ বেতন বাড়ানো হয়েছে। খুব ভালো কথা। আমরা চাই, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি হউক। যাতে তাদের আর যেন ঘুষ খেতে না হয়।’’ কিন্তু বাকী মানুষদের কি হবে।
এদেশের কৃষক ও মধ্যবিত্তর মানুষজনের কি হবে। চালের দাম বেড়েছে, নিত্য প্রয়োজনী জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে।তাদের কি হবে।’’
‘‘ সরকারকে বলব, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। নমরুদ, হিটলার ও আইয়ুব খানের পরিণতি দেখেছি। বাংলাদেশেও অনেকের পরিণতি দেখেছি।স্বৈরাচার এরশাদকেও কীভাবে চলে যেতে হয়েছে, তা দেখেছি।’’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ ভোট ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা যেতে দেয়া হবে না। আমাদের নেত্রী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ইনশাল্লাহ আন্দোলন হবে। নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে এদেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’’
জেলার আহবায়ক হাফিজুর রহমান মোল্লা কচির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জহিরুল হক খোকনের পরিচালনায় জেলা সম্মেলনে ভাইস চেয়ারম্যান হারুন আল রশিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মুশফিকুর রহমান, উকিল আবদুস সাত্তার, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, সাবেক সাংসদ কাজী আনোয়ার হোসেন, এম এ খালেক, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম, তকদির হোসেন মো. জসিম, রফিক শিকাদার, স্থানীয় নেতাদের প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব, আবু আসিফ আহমেদ, এম এ হান্নান, মো. ইলিয়াস, আবদুর রহমান, বাহার মিয়া, আবদুল মান্নান, মো. আজিম, ইয়াসীন মাহমুদ, শামীম মোল্লা, ইসমত আরা, মনির হোসেন, হেবজুল বারী, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, আনিসুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য্ রাখেন।
সম্মেলনে মুসলিম লীগের আজিজুর রহমান লিটন, হেফাজতে ইসলামের মুফতি এনামসহ ২০ দলীয় জোটের জেলা নেতারাও ছিলেন।