শেখ-হাসিনা-৬_33335_9900

দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ২১ ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভৌগোলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং নৌবাহিনীর সুনাম ও ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু না করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী নতুন কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ক্যাডেটদের জাতির ভবিষ্যত নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তারা দেশের স্বার্থকে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊধের্্ব স্থান দেবেন৷

রোববার সকালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একাডেমিতে মিডশিপম্যান-২০১৩-এর একটি ব্যাচ এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার্স (ডিইও) ২০১৪-এর বি-ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন৷এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জীপে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন৷ এ সময় নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী একাডেমির কমান্ডেন্ট কমোডর নাজমুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন৷

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধানগণ, কূটনীতিক, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং মিডশিপম্যানদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে নৌবাহিনীর সুনাম ও ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয়৷ প্রধানমন্ত্রী নৈতিক গুণাবলীসহ মানবিক হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের দৰ অফিসার হিসেবে গড়ে তোলার জন্যও ক্যাডেটদের প্রতি আহবান জানান৷তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনারা জাতিকে সেবা দিতে যাচ্ছেন৷ তাই আপনাদের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্যের স্বার্থে একজন দক্ষ অফিসার হিসেবে গড়ে উঠতে হবে৷

শেখ হাসিনা প্রিয় মাতৃভূমির জন্য জীবন উত্‍সর্গকারী পূর্বসূরিদের ত্যাগ ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করার জন্যও ক্যাডেটদের উপদেশ দেন৷বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ফোর্স গোল-২০৩০-এর আওতায় এ বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক একটি কার্যকর বাহিনীতে পরিণত করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷তিনি বলেন, আমাদের সরকারের মেয়াদে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ১৬টি জাহাজ অনত্মভর্ুক্ত করা হয়েছে৷ দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি সামুদ্রিক টহল এয়ারক্র্যাফট যুক্ত করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী নতুন যুগে প্রবেশ করেছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, দুটি সাবমেরিন নৌবাহিনীতে অনত্মভর্ুক্ত করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চূড়ানত্ম হয়েছে৷ ২০১৬ সালের মধ্যে সাবমেরিনগুলো নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে বলে আমরা আশা করছি৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশ স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে৷ খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মিত হচ্ছে৷ নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এগুলোতে প্রকৌশল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে৷

তিনি বলেন, পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় বিমান ওঠা-নামা সুবিধাসহ এক্িট বিশাল নৌঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশায়ালস্নাহ৷সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর উন্নয়নেও তাঁর সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷

শেখ হাসিনা বলেন,জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অপরিহার্য৷ আর এ ৰেত্রে নৌবাহিনীর সদস্যদের বিরাট দায়দায়িত্ব রয়েছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম হয়েছে৷ কিন্তু দেশের নিজস্ব সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগরে বিপুল সম্পদের সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সেখানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার মেরিটাইম জোন্্স এ্যাক্ট ১৯৭৪ প্রণয়ন করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৭৫ সালে তাঁর বর্বরোচিত হত্যাকা-ের পর বঙ্গোপসাগরে সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি আর বাসত্মবায়িত হয়নি৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ৰমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে৷ এর ফলে আনত্মর্জাতিক সালিশ আদালতের রায়ের মাধ্যমে আমরা বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর আমাদের স্বার্বভৌমত্ব অর্জিত হয়৷

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ৰমতা গ্রহণের পর তাঁর সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করতে এবং অপারেশন ৰমতা বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়ন ও যুদ্ধজাহাজ ক্রয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে৷ তিনি বলেন, তাঁর সরকারের বিগত মেয়াদে নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক ফ্রিগেট বিএনএস বঙ্গবন্ধু যুক্ত করা হয়৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময়ের বিবর্তনে নৌবাহিনী একটি মর্যাদাশীল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে৷ জাতিসংঘ শানত্মিরক্ষী বাহিনীসহ আনত্মর্জাতিক পর্যায়ে এ বাহিনী সুখ্যাতি অর্জন করেছে৷শেখ হাসিনা আজকের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের মাধ্যমে যারা বাংলদেশ নৌবাহিনীকে কমিশন পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ত্যাগ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তারা বিশ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন৷