index

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমাদের দেশে কিছু রাজনীতিক বেয়াদব রয়েছেন, তারা কিছু বড় বড় পদের এমপি-মন্ত্রী৷ তারা দেশের সম্মানিত ব্যক্তিদের অসম্মান করেন৷ অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসিয়া তাহারা রাজনৈতিক বেয়াদবি করছেন৷মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি ৷

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বিজয় দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন৷নজরুল ইসলাম বলেন, রাজনীতিতে কথা বলার অধিকার সবারই আছে, তবে তাতে যুক্তি থাকতে হবে৷ আর যখন যুক্তি-তর্ক না থাকে তাহলে তারা গালিগালাজ করে৷ এমনটাই করছে সরকার৷ যুক্তি ছাড়াই সম্মানিত ব্যক্তিদের অসম্মান করছে৷ তারেক রহমাকে গালাগাল করছে, এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীদেরও রাজাকার বলছে৷

জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব কেড়ে নেয়া দরকার খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের এমন কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের খেতাব রাষ্ট্রপক্ষে থেকে দেয়া হয়েছে, আর তিনি বলেন তার খেতাব কেড়ে নেয়া দরকার৷ কত বড় বেয়াদব হলে এত বড় বেয়াদবি করতে পারেন তিনি (কামরুল)৷ তিনি তো মুক্তিযুদ্ধের ধারে কাছেই ছিলেন না, আর বীর অধম হওয়ার যোগ্যতাও তো তার নেই৷এক মুহূর্তের জন্যও রাজপথে নামতে দেব না স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের এমন বক্তব্যে পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আপনি তো বলেন আপনারা গণতান্ত্রিক সরকার৷ তাহলে আপনার মুখে তো বাকশালের গন্ধ৷

এসময় ‘রাজনৈতিক বেয়াদবি করছেন তাদের বেয়াদবি বন্ধ করার জন্য অনুরোধও করেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা৷নিরদলীয় নিরেপেক্ষ সরকাররে অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, নির্বাচনে শুধু আমারই থাকব না আওয়ামী লীগও থাকবে৷ একটা প্রতিন্দ্বদ্বীমূলক নির্বাচন হবে৷ এমন নির্বাচনই তো আমারা চাই৷ কিন্তু এই সরকার নির্বাচনকে ভয় পায়, তাই তারা নির্বাচন এমনভাবে করতে চায় যেখানে বিরোধীরা না থাকে৷

সরকারকে হুঁশিয়ারি করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য জম্মেছি আবার গণতন্ত্রের জন্যই জীবনও দেবো৷ একই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, লড়াই সংগ্রামের জন্য আমরা কারো হুকুমের তোয়াক্কা করিনি৷ ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা জানজুয়া বাঙালি সেনা অফিসারদের নিরস্ত্র করতে গেলে গাজীপুরের জয়দেবপুরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম৷ তখন কারো হুকুমের অপেক্ষায় থাকিনি৷

জিয়াউর রহমান নেতা হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সময় তাকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলো৷ জিয়াউর রহমান সেই সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন৷ সে কারণেই বাংলাদেশের মানুষ এখনো তাকে নেতা হিসেবে জানে, শ্রদ্ধা করে৷

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া ঘোষিত মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বিএনপির অনেককেই নেতা হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলো৷ কিন্তু তারা কেউ সেই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেনি৷ সুযোগ গ্রহণ করলে আজ অনেকেই মন্ত্রী এমপি হতে পারতেন- বলেন নজরুল ইসলাম খান৷

তিনি বলেন, আবার সামনে লড়াই আসছে৷ সেই লড়াই অনেককেই নেতা হওয়ার সুযোগ করে দেবে৷ যারা লড়াইয়ে থাকবে না তারা বাদ পড়বেন৷ আর যারা লড়াইয়ে থাকবে তারা নেতা হবেন৷

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাজনীতিতে সমালোচনা থাকবে৷ তবে সেগুলো হবে যুক্তিসঙ্গত ও মার্জিত৷ খুব সম্ভত তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্য যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করতে না পেরেই তাকে এখন গালিগালাজ করা হচ্ছে৷নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, গণতন্ত্রের দাবি ন্যায্য৷ এ দাবি আদায়ে লড়াইও ন্যায্য৷ সুতরাং লড়াই করছি গণতন্ত্রের জন্য, জীবনও দেব গণতন্ত্রের জন্য৷

একমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্যই সরকার গুম-খুন করছে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস- চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “সরকার পদ্মা সেতু টাকা লুট করা যায় এর জন্যই মানুষের ভোট অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, সংবিধান পরিবর্তন করছে৷

বিএনপির সিনিয়র ভাইস- চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গালিগালাজ ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় সরকারের সমালোচনা করে নোমান বলেন, এসব কথা কোনো রাজনৈতিক বিচিছন্ন ঘটনা নয়, বিএনপিকে রাজনীতি থেকে বিচিছন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগ এসব কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছে৷

নোমান বলেন, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরো অনেক নেতা ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যে আন্দোলন করেছেন সেটি ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের জুলুম ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের আন্দোলন৷ এটি স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের কোনো আন্দোলন ছিলো না৷মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে৷সেখানে মরহুম শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই৷ কারণ, সে সময় তারা আত্মসমর্পণ করেছিলেন, অথবা পালিয়ে গিয়েছিলেন৷

তিনি আরও বলেন, ২৫ মার্চ ক্রাকডাউনের পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রধান মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের যে দায়িত্ব ছিলো সেটি তিনি পালন করেননি৷ একজন মেজর হয়েও সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন জিয়াউর রহমান৷

নোমানের দাবি, সেই দিন (২৬ মার্চ) মেজর জিয়াউর রহমান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন, তাহলে বাংলাদেশের সশস্ত্র সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃতি পেত না৷ সেটি হতো বাংলাদেশের ভেতরে থাকা জামায়াত, বিহারী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে স্বাধীনতাকামীদের গৃহযুদ্ধ৷

তিনি বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা ভাসানীসহ অনেকেই স্বাধীনতার কথা বলেছেন৷ সেগুলোকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলা যায় না৷ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা জিয়াউর রহমানই দিয়েছিলেন৷ সুতরাং আজ তাকে (জিয়া) যতই রাজাকার, আইএসআই’র এজেন্ট, চর বলা হোক না কেন তাতে কোনো লাভ হবে না৷তিনি আরো বলেন, সে সময়ের নেতৃত্ব হাইওয়ে দিয়ে পার্লামেন্টের দিকে গেছে৷ আর জনগণ বাইপাস সড়ক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দিকে এগিয়েছে৷ সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ কোনো দলের নেতৃত্বে হয়নি৷ জনগণই সে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে৷

ড্যাবের সহ সভাপতি ডা. রফিকুল কবীর লাবুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, ড্যাব নেতা ডা. আব্দুল মান্নান, ডা. সিরাজউদ্দীন, ডা. আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ৷