দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর: যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করে না এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজীনা৷ তিনি বলেন, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনা যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নয়৷ বাংলাদেশে কোন দল ক্ষমতায় আসবে এবং দেশ শাসন করবে তা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ৷
শনিবার আমেরিকান সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন৷ শনিবার সকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন৷ ঢাকায় দায়িত্ব পালনকালে তার ভূমিকার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছেন, বিশেষ কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করে না যুক্তরাষ্ট্র৷ এটা বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে৷ তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ড্যান মজিনা বলেন, কোনো মানদণ্ডেই বাংলাদেশ এখন আর গরিব দেশ নয়৷ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এখন সবচেয়ে ভালো সময় পার করছে৷
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের সময় আমি আমার কাজে খুশি৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে কাজ করে সফলতা পেয়েছি৷ বর্তমান সময়ের মতো বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এর আগে কখনো এত ভালো ছিল না৷ এ সমর্্পককে আমি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছি৷তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক শক্তিশালী দেশ৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, টওযুক্তি এবং ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় উন্নয়ন করেছে৷ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ৷ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে৷ মাতৃ মৃতু্যহার কমেছে৷ বাংলাদেশের মতো এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বের কোথাও নেই৷ জেনেরিক ফার্মাসিউটিকেলস খাতে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে৷ সামনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি দল বাংলাদেশের ওষুধ খাত পরিদর্শন করবে৷ দলটির পরিদর্শনে এই খাতে মান নিশ্চিত হলে সামনের ৪-৫ বছরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের ওষুধ ব্যাপক হারে পাওয়া যাবে৷
রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজিনা বলেন, বাংলাদেশ আমার হৃদয় ছুঁয়েছে৷ সম্ভব হলে এ দেশেই থেকে যেতাম৷ এ দেশের মানুষ, প্রাকৃতিক রূপ ও কৃষকদের দক্ষতা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই৷ কৃষিতে বাংলাদেশ বিপ্লব ঘটিয়েছে৷ আমি আমেরিকায় গিয়ে প্রথম তিন বছর নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের গল্প করব৷
রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মজিনা বলেন, আমেরিকানরা বাংলাদেশকে শতভাগ চেনে না৷ তারা রানা প্লাজার মতো কিছু অনাকাঙি্ক্ষত ঘটনা দিয়ে বাংলাদেশকে চেনে৷ আমেরিকানরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এ দেশের মানুষের আতিথেয়তা সম্পর্কে জানে না৷ তাই তাদের বাংলাদেশ সম্পর্কে জানাব৷
দায়িত্ব পালনকালে নিজের অর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন৷ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের সম্পর্ক এখন অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গভীর এবং দৃঢ়৷
বাংলাদেশের নানা সম্ভাবনার কথা কথা উল্লেখ করে মজীনা বলেন, কোনো মানদণ্ডেই বাংলাদেশ এখন আর গরীব রাষ্ট্র নয়৷ তবে অবকাঠামো গড়ে তোলা, দুর্নীতি দমন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং পোশাক খাতের অবস্থান ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷বাংলাদেশের উন্নয়নে শিক্ষা বিপ্লব দরকার, মানসম্মত শিক্ষাই দেশকে আরও এগিয়ে দেবে বলেও মন্তব্য করেন মজীনা৷মজীনা বলেন, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনা যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নয় এ দেশ কোন দল কখন ক্ষমতায় আসবে এবং দেশ শাসন করবে তা নির্ধারণ করবে এ দেশের জনগণ৷
মজীনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনও কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করেনি, করবেও না৷ বাংলাদেশে সরকার কোন দল গঠন করবে তা দেশের জনগণই নির্ধারণ করে, করবে৷\’ কোন দল সরকার গঠন করবে বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে\’
দীর্ঘ ৩৭ মাস রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের অর্জন সম্পর্কে মজীনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পকের্র প্রাতিষ্ঠানিকরণই তার বড় অর্জন৷ অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এই সম্পর্ক সবচেয়ে দৃঢ় ও গভীর৷ ভবিষ্যতে তা আরো বাড়তেই থাকবে৷
মজীনা বলেন, চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে৷ এ সম্পর্কের লক্ষ্য ছিল এ দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও জনগণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও জনগণের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করা৷
৬৪টি জেলা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন মজীনা বলেন, বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনাময় দেশ৷ এই দেশ গরীব কোনো রাষ্ট্র নয় তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্নীতি বন্ধ করলে ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে অচিরেই এশিয়ার সুপার পাওয়ার হয়ে উঠবে বাংলাদেশ৷ গরীব নয়,বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে একে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের\’ সঙ্গে তুলনা করেন তিনি৷
ড্যান মজীনা বলেন, এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চারটি পা৷ প্রথম পাটি গার্মেন্ট শিল্প৷ এ শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে৷ দ্বিতীয় পা হল চামড়া শিল্প৷ চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বের যেকোনো দেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
ওযুধ শিল্পকে তৃতীয় পা উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, \’অল্প কিছু দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক রপ্তানি হবে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ৷ \’আর চতুর্থ পা হলো তথ্যপ্রযুক্তি খাত৷ বিশেষ করে এ দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা সফটওয়ার তৈরি করে সারাবিশ্বে সুনাম অর্জন করেছে৷রোববার বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী এই রাষ্ট্রদূত৷
বিদায়ের আগে রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদ,বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ,বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন তিনি৷