দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর: ময়মনসিংহের ভালুকায় সপরিবারে শ্রমিকদলের নেতা হত্যাকান্ডের খুনিরা ভাড়াটে ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে৷ এবং খুনের আসল রহস্য উদঘাটন করতেও সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ৷ ঘটনার সাথে জড়িত একাধিক খুনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এখনো কিছু আলামত উদ্ধার ও মুলহোতাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছেন৷ তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ বিস্তারিত কিছুই বলতে রাজি হননি৷ যদিও একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, আজকের (বুধবার) মধ্যেই খুনিরা গ্রেপ্তার হবে৷অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবু আহাম্মদ আল মামুন মামলার তদারকি করছেন৷ তিনি আটককৃতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন৷ তিনি জানান, তদন্তের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক৷ আটককৃতদের মধ্যে ২/১ জন হত্যাকারিও রয়েছে৷ তবে মুলহোতাকে চিহি্ণত করা সম্ভব হয়েছে৷ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে৷ আশা করছি আজকের মধ্যেই পুরো রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে৷ ডিবির ওসি মাজেদুর রহমান জানান, ঘটনার সাথে রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র নেই৷ তবে ভাড়াটে খুনি দিয়ে ঘটনা ঘটানো হয়েছে৷ খুনিরা কত টাকা পেয়েছে, কীভাবে খুনের পরিকল্পনা ও খুন সংঘটিত করা হয়েছে তা জানাননি তিনি৷
সূত্র মতে, এ পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে দুইজনকে সীডস্টোর থেকে আর একজনকে পূর্বধলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এছাড়াও ভালুকা থেকে আরো দুইজনকে আটক করা হয়েছে৷ ডিবি পুলিশ জানায়, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে তনুর স্ত্রী হুসনা, শ্যালিকা জোসনা, ভায়রা রফিকুল ইসলাম, হাফিজ উদ্দিন, আব্দুল বাতেনকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ মামলার মূল আসামিদের সঙ্গে এদের যোগাযোগ রয়েছে বলেও সূত্র জানায়৷ সোমবার দিবাগত রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি সংলগ্ন লবনকুঠা গ্রামে দুর্বৃত্তরা হবিরবাড়ি ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু (৩৫) ও তার স্ত্রী শেফালী আক্তার পারুলকে (২৮) কুপিয়ে এবং তাদের এক বছরের শিশুকন্যা হোসনা আরা রিভা ও ছয় বছরের শিশুকন্যা জিনিয়াকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে৷
নিহত রফিকুল ইসলামের পিতা মো. ওয়ারেছ আলী (৬০) জানান, তিনি পাড়াগাঁওয়ে বসবাস করলেও তার ছেলে রফিকুল ইসলাম বাচ্চু লবনকুঠা গ্রামে জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ করে পরিবারসহ বসবাস করতেন৷ তার ছেলেকে আগেও সিডস্টোর বাজারে মারধর করা হয়৷ ওই ঘটনায় থানায় মামলা রয়েছে৷ পাড়াগাঁও মৌজার ২১ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে সালাউদ্দিন ও হানিফের বিবাদ রয়েছে৷ তারা ওই জমিটি জোর করে দখল করতে চায়৷ তিনি অভিযোগ করেন, বাচ্চু শিখা পরিবহন নামে একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-জ-৪৫১৬) রয়েছে৷ সে নিজেই চালক ও মালিক হিসেবে স্থানীয় টিএম টেঙ্টাইল ফ্যাক্টরির শ্রমিক আনা নেওয়া করতেন৷ তার বাসের হেলপার ছিল তনু (৩০) নামের এক যুবক৷ সে যশোহর জেলার বাসিন্দা৷ সমপ্রতি তনুর সাথে রফিকুলের কিছু একটা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় এবং ৪/৫ দিন তনুকে এলাকায় দেখা যায়নি৷ সোমবার রফিকুলের বাড়িতে তনুকে দেখা গেছে কিন্তু ঘটনার পর থেকে তনুকে আর দেখা যাচ্ছে না৷ এদিকে পুলিশ তনুকে ভাড়াটে খুনি হিসেবে চিহি্ণত করেছে৷ তাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছে বলেও নিভর্রযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন৷ বুধবার বিকেলেও ডিবির ওসি মাজেদুর রহমান জানিয়েছেন, মুলহোতাকে খুব কম সময়ের মধ্যেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে পুলিশ৷
এব্যাপারে নিহত শ্রমিকদলের নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর বাবা মো. ওয়ারেছ আলী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে ভালুকা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন৷ মামলাটি ময়মনসিংহের ডিবি পুলিশ তদন্ত করছেন৷ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছেন এসআই মনিরুজ্জামান৷ এরআগে ঘটনার তদন্ত করতে সিআইডি, ডিবি ও র্যাবসহ আইন প্রয়োগকারি সংস্থার বিশেষজ্ঞদলসহ ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবু আহাম্মদ আল মামুন ও ভালুকা মডেল থানার ওসি গোলাম সারোয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷বুধবার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় দেখা যায়৷ তবে নিহত বাচ্চুর বাড়িতে কেউ না থাকায় লোকজন এসে দেখে চলে যাচ্ছেন৷ কেউ কিছু বলছেন না৷ আশপাশের বাড়িঘরেও নিরবতা বিরাজ করছে৷ আজো গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান কিন্তু গণমাধ্যমের কাছে কেউ কোনো কথা বলছেন না৷ নিহত বাচ্চুর স্বজনরা এখন বাচ্চুর বাবার বাড়ি উপজেলার পাড়াগাঁও গ্রামে চলে গেছেন৷ ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সীডস্টোর বাজার এলাকা থেকে তনুর সহযোগী সোহেল নামে এক যুবককে আটক করা হয়েছে৷ তাকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ তিনি জানান, লাশগুলোর ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে৷এদিকে শ্রমিকদলের নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু সপরিবারে খুনের ঘটনায় বিএনপি ভালুকা উপজেলায় শোক পালন করছে৷ দলীয় নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করেছেন৷