দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর: অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনাকবলিত ঘটনাস্থল সুন্দরবনের শেলা নদীর মৃগা এলাকার নদী-খালে তেমন একটা তেল নেই দাবী করে ওই এলাকা থেকে তেল সংগ্রহের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বনবিভাগ৷ তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বনের গভীরের আন্ধারমানিক ও তাম্বুলবুনিয়া এলাকায় তেল সংগ্রহের কাজ শুরম্ন করেছে বনবিভাগের নিয়োজিত শ্রমিকেরা৷ প্রায় ৫০/৬০ জন শ্রমিক ওই এলাকার গাছ, লতাপাতা, ঘাস ও মাটিতে লেগে থাকা তেল সংগ্রহ করছে বলে জানান চাদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন অফিসার আবুল কালাম আজাদ৷
এদিকে, সুন্দরবনের শ্যাল্যা নদীতে অয়েল ট্যাংকার ( তেলবাহী জাহাজ) ডুবির ঘটনায় গঠিত সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের (ডস) তদন্ত কমিটি এখনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি৷ প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেয়া হলেও কেটে গেছে ৯ দিন৷১০ ডিসেম্বর বুধবার ওই কমিটি গঠন করা হয় বলে ওইদিনই সাংবাদিকদের জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান৷ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের (ডস) তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়৷ দুর্ঘটনা তদন্তে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের (ডস) মহাপরিচালক অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ (আইএসও)- ১৯৭৬ এর ক্ষমতা বলে ডসের নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এঙ্ামিনার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন৷ কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- ডসের নির্বাহী হাকিম গোলাম মাঈনুউদ্দিন হাসান ও একই সংস্থার অভ্যন্তরীণ পরিদর্শনায়, খুলনার পরিদর্শক আবু জাফর মিয়া৷ তদন্ত কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়৷ তবে গত ৯ দিনে কমিটির আহ্বায়ক দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননিঅভিযোগ উঠেছে, দুর্ঘটনাকবলিত নৌযান ক্রুটিপূর্ণ ছিল৷ বিষয়টি ইতিমধ্যে পড্রচার হলেও সেগুলোর বার্ষিক সার্ভে (ফিটনেস সনদ) সনদ প্রদানের সঙ্গে যুক্ত কোনো শিপ সার্ভেয়ারকে (জাহাজ জরিপকার) আইনের আওতায় আনা হয়নি৷ অভিযুক্তদের রক্ষায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানে কালক্ষেপন করা হচ্ছে৷গত ৯ ডিসেম্বর ভোরে মংলা বন্দরের অদূরে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের মৃগমারি এলাকায় শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজ এমটি টোটাল এর ধাক্কায় ডুবে যায় তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল ভর্তি (জ্বালানি তেল) জাহাজ ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’৷ নিমজ্জিত জাহাজের তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত সুন্দরবন৷অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সর্বশেষ ডকিং করা (ডকইয়ার্ডে সংস্কার) ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ জাহাজটিকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ডসের বরিশাল কার্যালয় থেকে বার্ষিক সার্ভে দেয়া হয়৷ প্রতি পাঁচ বছর পর ডকিংয়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটিকে চলাচলের এই সুযোগ করে দেন বরিশাল কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মুঈনউদ্দিন জুলফিকার৷
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তেলবাহী জাহাজডুবিতে সুন্দরবন মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে৷ বিপর্যস্ত সুন্দরবন রক্ষায় দেশ-বিদেশ থেকে সরকারের ওপর নৈতিক চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে৷ নিমজ্জিত জাহাজটির ‘ফিটনেস’ নিয়েও নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও তত্পর হয়েছেন৷ কিন্তু এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এতোদিনেও সেখানে না যাওয়ায় মনে হচ্ছে তিনি ফিটনেস প্রদানকারী কর্মকর্তাসহ প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষার অপতত্পরতায় লিপ্ত রয়েছেন৷এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিনের দুটি মোবাইল ফোনে গত ১২ ডিসেম্বর বেশ কয়েকবার এবং গত বুধবার একটি মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি৷ জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরীক্ষক প্রকৌশলী ড. এএসএম নাজমুল হক বলেন, দুর্ঘটনা দুটির পরপরই দেশের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে এবং দেশে ফেরার পর ব্যস্ত থাকায় তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে পারেননি৷ এজন্য তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছেন৷ তবে দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত কিংবা দায়ী কাউকে রক্ষার মানসিকতা তার নেই বলে দাবি করেন তিনি৷