দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর: বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলন জোয়ার-ভাটার মতো চলছে৷ এদেশের মানুষ আইয়ুব খান,বৃটিশ ও স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে জয়ী হয়েছে৷ এবারো জনগণের ইটের টুকরা ও লাঠির কাছে সরকারের বন্দুক, গুলি পরাজিত হবে৷ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত ‘৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যা: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন৷আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি না৷ সে জন্য অনেক সময় আমাদের পালিয়ে যেতে হয়৷ তবে সরকারের পতনের আন্দোলন চলছে৷ ইতিহাসে আইয়ুব খান, ব্রিটিশ ও স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে জয়ী হয়েছে জনগণ৷ এবারও জনগণের প্রতিরোধে এ অবৈধ সরকারের পতন নিশ্চিত হবে৷ তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি দিনটি এদেশের মানুষ কালো দিবস মনে করে৷ কারণ এদিন জনগণকে ভোট দিতে না দিয়ে সরকার তার নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে৷ এটা নির্বাচনের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে যে সরকার ও সংসদ গঠিত হয়েছে তা অবৈধ৷অন্তবতর্ীকালীন সরকার দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনে উত্থান-পতন চললেও এর সফলতার ব্যাপারে আশাবাদী আবদুল্লাহ আল নোমান৷ দেশের পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে জনগণ আর চুপ করে বসে থাকবে না বলেও মনে করছেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান৷তিনি বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি জনগণের ইচ্ছায় নির্বাচন হয়নি৷ ওই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যায়নি৷ অবৈধভাবে সংসদ ও সরকার গঠন করে দেশ পরিচালিত হচ্ছে৷ বর্তমানে গণতন্ত্র লেশ মাত্র নেই৷এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে৷ দেশ যেভাবে এগোচ্ছে, জনগণ আর চুপ করে বসে থাকবে না৷ সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দাবি করে নোমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অস্ত্রধারীরা নিয়ে তারা ঘুরছেন, চলছেন৷ প্রতিটি আন্দোলনে নিরস্ত্র জনগণ ইটের টুকরা ও বাঁশের লাঠি নিয়ে অস্ত্রধারীদের সঙ্গে লড়াই করে বিজয় হয়েছে৷ এবারও তারা ওইসব অস্ত্রধারীদের পরাজিত করবে৷সরকার হটানোর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তবতর্ীকালীন সরকারের দাবিতে জনগণ লড়াই করছে৷ এই আন্দোলনের জোয়ার-ভাটা হচ্ছে৷ এতে সফলতা আসবেই৷ ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালনের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা নোমান বলেন, এই দিনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি, এজন্য এই দিনটিকে আমরা কালো দিবস হিসেবে পালন করব৷ গোটা জাতি এই দিনকে কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নোমান বলেন, পাকিস্তানিরা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে৷ দেশের স্বাধীনতার পর এখন যেভাবে গুম-গুপ্ত হত্যা করে মানুষ খুন করা হচ্ছে তা একাত্তরকেও ছাড়িয়ে গেছে৷বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেন নোমান৷ তিনি বলেন, একাত্তর সালে অনেকে অনেক ঘোষণা দিয়েছেন৷ তবে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন মেজর জিয়াউর রহমান৷ জিয়া আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলে দেশ স্বাধীন হত না৷ গৃহযুদ্ধের দিকে দেশ চলে যেত৷মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিব বাহিনী গঠনের সমালোচনা করে নোমান বলেন, মুজিব বাহিনী গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই দ্বন্দ্ব হয়েছিল৷ প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদও এ্ই বাহিনীর বিপক্ষে ছিলেন৷ এজন্য ওই সময়ে তিনি দিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন৷ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখার পর থেকে তাজউদ্দিন সাহেব আর মুজিব বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি৷ কারণ ওই মুজিব বাহিনীর শক্তি ছিল দিল্লী৷সংগঠনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান দুদু, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সা্ইদুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য দেন৷