দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর: সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনায় ক্ষতি থেকে দ্রুত উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মনিটরিং আরো জোরদার করতে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ একই সঙ্গে সুন্দরবন রক্ষায় মংলা-ঘসিয়াখালী চ্যানেলটি চালু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি৷সোমবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশ দেন৷সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ কক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন৷
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর গোপালগঞ্জ ও যশোরের জেলার প্রশাসক এবং ঢাকা ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন৷
গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবন এলাকায় শ্যালা নদীতে সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েলসহ তেলবাহী ট্যাঙ্কার ‘ওটি সাউদার্ন স্টার ৭’ ডুবে যায়৷ এতে সুন্দরবন এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ে৷ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে৷ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে বলেন, সুন্দরবনের বিষয়টা আরো ভালোভাবে মনিটরিং করা দরকার৷ এ তেল সরানোর পাশাপাশি এখানে যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টা দেখতে হবে৷
ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুট ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগের বন্ধ হয়ে যাওয়া পথ ঘষিয়াখালী চ্যানেল উদ্ধারে ওই খালের মুখে থাকা চিংড়ি ঘেরগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
সেইসঙ্গে ট্যাংকার দুর্ঘটনায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল সরাতে এবং ক্ষতি যাতে আর না বাড়ে- তা নিশ্চিত করতে বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি৷গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শেলা নদীতে সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ নামের ওই ট্যাংকারডুবির পর এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কোনো সরাসরি নির্দেশনা গণমাধ্যমে এলো৷ সুন্দরবনের নদী ও খালে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে গত তিনদিন ধরে স্থানীয় গ্রামবাসী, জেলে ও শ্রমিকদের নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন৷ তবে সেখানে কাজ চলছে হাঁড়ি-পাতিল ও চটের বস্তা নিয়ে স্থানীয় পদ্ধতিতে৷
প্রথমে রাসায়নিক ব্যবহার করে তেল দূষণ কমানোর কথা ভাবা হলেও পরে সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কায় তা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ৷ মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বৈঠক থেকে খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী তেল অপসারণে স্থানীয়দের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন৷তিনি বলেন, এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে এই তেল সরিয়ে নিচ্ছে৷ এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই৷
তবে এরই মধ্যে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় তেল ছড়িয়ে পড়ায় ইরাবতী ডলফিনের (শুশুক নামে পরিচিত) সবচেয়ে বড় এই অভয়াশ্রম মারাত্মক ঝুঁকির মখে পড়েছে বলে প্রতিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷এছাড়া শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের গাছপালা ও জলজ সম্পদেরও মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে তাদের আশঙ্কা৷
এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের বিষয়টি ভালো করে মনিটরিং করা দরকার, তেল সরানো এবং আর ক্ষতি যাতে না হয়৷ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷মংলা বন্দরের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঘষিয়াখালী খাল অনেকদিন ড্রেজিং করা হয়নি৷ সিলড হয়ে গিয়েছিল৷বিএনপির সময় মংলা বন্দরের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ সেজন্য এই দিকটায় কেউ আর খেয়াল করে নাই৷ ঘষিয়াখালীর যে শাখা খালগুলো ছিল, তার মুখে চিংড়ি ঘের করে পানি আসার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ এই ঘেরগুলো বন্ধ করে দিতে হবে৷
মংলার নালা ও রামপালের কুমার নদী ভরাট হয়ে ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুট ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগ পথ হিসেবে ব্যবহৃত ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে৷ তখন থেকে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শেলা নদীকে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডবি্লউটিএ৷ পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকির কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এই নৌপথ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে দাবি এসেছে৷ শেলা নদীর ঘটনার পর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ও ওই পথে নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধের সুপারিশ করেছে৷ তবে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান তা নাকচ করেছেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে এই ঘষিয়াখালী খাল চালুর কথা বলেছি৷এর মুখ থেকে চিংড়ি ঘের সরিয়ে দিতে হবে, যাতে খালগুলো বন্ধ না হয়৷দুই জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে সম্মেলন আয়োজনের প্রশংসা করেন৷ গত ২০ নভেম্বর ওই সম্মেলন হয়৷ শেখ হাসিনা বলেন, ডিসি-ডিএম সম্মেলন একটি ভালো উদ্যোগ৷ মাদক, চোলাচালান, নারী ও শিশু পাচার বন্ধে একটি ভালো উদ্যোগ৷ কারো একার পক্ষে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব না৷ এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগ দরকার৷দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এ ধরনের সম্মেলন করা যায় কি না সে ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান৷
এদিকে, গোপালগঞ্জ ও যশোর জেলার প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময়কালে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ আমাদেরই আপনজন৷ আমরা এই আপনজনের সেবায়ই বদ্ধপরিকর৷ আপনাদের (দুই জেলা প্রশাসক) ও সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো৷
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এলে মানুষের জীবন যাপনের মান বাড়ে৷ আপনাদেরও বাড়ে৷ এবারও বেড়েছে৷ আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি৷ ২০২১ সালের মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা ছাড়াও আমাদের দেশের জন্য অনেক কাজ করতে হবে৷নিজের বক্তব্য শেষে দুই জেলা প্রশাসকের মতামতও মনোযোগ দিয়ে শোনেন প্রধানমন্ত্রী৷
