সুজন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর: সুজনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, সরকারের অঙ্গীকার ছিল একদিনও অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকবে না৷ অথচ সিটি নির্বাচনসহ জেলা পরিষদ নির্বাচন এখনও দেয়নি৷ তবে জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনে নির্বাচন হতে পারে৷ তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন কেন হবে না৷ আসলে সরকার না চাইলে কখনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব না৷

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) আয়োজিত ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন৷ বৈঠকে বক্তব্য দেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, সাবেক কমিশনার ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ৷

রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যেই সরকার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান৷ এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সরকার না চাইলে কখনো ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্ভব নয়৷ এই নির্বাচন না দেওয়ার কারণে দেশে এক প্রকার নৈরাজ্য বিরাজ করছে৷ বর্তমান সরকার অঙ্গীকার করেছিল একদিনও অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকবে না৷ অথচ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদের নির্বাচন এখনও হয়নি৷

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে যদি ৩০০ আসনে নির্বাচন হতে পারে তবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন কেন হবে না? আসলে সরকার না চাইলে কখনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব না৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে এখানে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য জড়িত৷তিনি আরো বলেন, আমরা চাই নির্বাচন হোক৷ কিন্তু কার কাছে নির্বাচনের কথা বলব৷ কেউ যদি চোখ কান বন্ধ করে রাখে তাহলে তাকে বলার কিছু নেই৷ এ বিষয়ে আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে৷

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে’ মন্তব্য করে সুজন’র সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গলায় বিধে যাওয়া কাটার মতো আটকে গেছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন৷ ক্ষমতাসীনেরা হারতে চায় না বলেই হচ্ছে না এই নির্বাচন৷ জনগণের মতামতের কোনো সুযোগই রাখছে না সরকার৷

জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে স্থানীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ থাকলেও দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই জেলা পরিষদ নির্বাচন দেয়নি৷ এতে স্থানীয় পর্যায়ে অনির্বাচিত শাসকের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারণে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে৷

তিনি বলেন, রাষ্ট্র কি উদ্দেশ্যে এবং কার স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না৷ নাগরিকের স্বার্থে নাকি অন্য কোনো ব্যক্তির স্বার্থে সেটাও স্পষ্ট নয়৷ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিরোধীদলহীন এ সরকার নির্বাচন চায় না এবং নির্বাচন হওয়া দরকার এমন কথাও তারা ভাবে না৷ হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই আটকে আছে এসব নির্বাচন৷তিনি বলেন, রাষ্ট্র কি উদ্দেশ্যে কার স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না৷ আসলে নাগরিকের স্বার্থে নাকি অন্য কোন ব্যক্তির স্বার্থে সেটা স্পষ্ট নয়৷ স্থানীয় পর্যায়ে অনির্বাচিত শাসকের দ্বারা শাসন পরিচালিত হওয়ার কারণে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে৷ সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে স্থানীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচন দেয়নি৷

বর্তমান সরকারের নির্বাচনভীতি রয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ৫ জানুয়ারির একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বর্তমান সরকার৷তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যে ঢাকা সিটির নির্বাচন দিচ্ছেন না এটা সংবিধান ও মানবতা বিরোধী৷ কারণ সংবিধানে উল্লেখ আছে নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা প্রকাশ করার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে৷ যা আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে করে থাকি৷ কিন্তু বর্তমান সরকার সেই অধিকার থেকে জনগণকে বিরত রাখছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ঢাকা সিটির নির্বাচন না দেওয়া সংবিধান এবং মৌলিক অধিকার বিরোধী৷ জনগণের সবচেয়ে বড় বাক স্বাধীনতা হলো ভোটধিকার৷ সেখানে নির্বাচন না দিয়ে সরকার সরাসরি মানবধিকার লঙ্ঘন করেছে৷৫ জানুরির নির্বাচনের পর থেকে জনসাধারণের মধ্যে নির্বাচনভীতি কাজ করছে উল্লেখ করে ড. আসিফ বলেন, জনগণ মনে করেছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার একটা নির্বাচন খেলা করবে৷ সেটাই করেছে৷ এখন তারা নির্বাচন দিলেও যা, না দিলেও তা৷ তেমন কোন পরিবর্তন হবে না৷

তিনি বলেন, সরকার জনগনের রায়ে বিশ্বাস করে না৷তারা প্রশাসনের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকাকেই বেছে নিয়েছে৷যে কারণে ঢাকার কোথাও বিরোধী দলকে দাড়াতে দিচ্ছে না৷যে কোন মূল্যে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছে৷ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, সরকার যে ঢাকা সিটির নির্বাচন দিচ্ছেন না এটা সংবিধান বিরোধী ও মানবতা বিরোধী৷ কারণ সংবিধানে উল্লেখ আছে নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা প্রকাশ করার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে৷যা আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা করে থাকি৷কিন্তু বর্তমান সরকার সেই অধিকার থেকে জনগণকে বিরত রাখছে৷

সাবেক সাংসদ এস এম আকরাম বলেন, ‘সংসদের কাজ আইন প্রণয়ন করা৷ সংসদ সদস্যদের তা করতে দিতে হবে৷ তা না হলে স্থানীয় সরকার সমস্যা দূর হবে না৷ অস্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং পরিবারকেন্দ্রীক রাজনীতির কারণে স্থানীয় সরকার কার্যকর হচ্ছে না৷গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ৷