দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বড় ছেলে হাসান জামিল বলেছেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে আসামির রিভিউ আবেদনের সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগ না দিয়ে তাকে (কাদের মোল্লা) হত্যা করা হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে কাদের মোল্লার পরিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন৷ সংবাদ সম্মেলনে কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ার জাহান, দুই আইনজীবী ফরিদ উদ্দিন খান ও সাইফুর রহমান উপস্থিত ছিলেন৷হাসান জামিল আরো বলেন, আদালত থেকে রায় প্রকাশের ৩৪৮ দিন পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়৷ এর ১৫ দিন পর রিভিউ আবেদনের সুযোগ আছে৷ কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি৷ এমনকি তার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি এবং তার মুখও দেখতে দেওয়া হয়নি৷
লিখিত বক্তব্যে কাদের মোল্লাকে শহীদ কাদের মোল্লা নামেও কয়েকবার অভিহিত করে দেশবাসীকে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ডাক দেন জামিল৷তিনি বলেন, আমার পিতাকে হত্যার ৩৪৮দিন পর আপিল বিভাগ থেক আমার বাবার দায়ের করা রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়৷ এই রায়ে রিভিউ মেইনটেইনেবল বলে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেন৷ সেখানে বলা হয়, রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যাবে৷ অথচ রায় প্রকাশের সাত দিনের মাথায় তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়৷আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের শুনানির পর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত৷
কাদের মোল্লার ছেলে বলেন, আমার বাবা দুনিয়া থেকে বিদায়ের আগে জানতেই পারল না, সংবিধান অনুসারে তার রিভিউ করার অধিকার আছে কি না৷ যখন আইনের পূর্ণাঙ্গ আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়, তখন সেটা হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছু নয়৷
এই সরকার আমার পিতাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করেছে৷ এমনকি এই জালেম সরকার আমার পরিবারের সদস্যদের জানাজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়নি৷ আমার বাবার মৃতদেহ শেষবারের মতো একবার দেখার সুযোগও দেওয়া হয়নি৷ওই রাতে আমাদের পরিবারের ওপর হামলা হল, জেলে নেওয়া হল৷ এটা এতোবড় জুলুম যা অবশ্যই দেশবাসী বিচার করবেন৷বক্তব্যের শেষে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী ও সহানুভূতি প্রকাশকারী দেশ ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাসান জামিল৷ বাবার গায়েবানা জানাজা আদায়কারীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি৷
গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলার প্রথম রায়ে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃতু্যদণ্ডের রায় দেওয়া হয়৷ রায় প্রকাশের পর ১০ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকরে উদ্যোগ নিলে কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনে চেম্বার বিচারপতি দণ্ড কার্যকর স্থগিত করে দেন৷ কাদের মোল্লাকে বাঁচাতে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গ্রহণের আর্জি জানানো হয়৷ দ্বিতীয় আবেদনে রায় পুনর্বিবেচনা করে কাদের মোল্লার খালাসের আবেদন করা হয়৷পরে দুই দিন কাদের মোল্লার রিভিউ নিয়ে দুটি আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর খারিজ করে দিলে ওই রাতেই কার্যকর করা হয় ফাঁসির দণ্ড৷