দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) যুগ্ম সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার৷ বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে৷বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কযেকজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈঠক করার সময় এই কর্মকর্তাও ছিলেন বলে কোনো কোনো গণমাধ্যমে বলা হয়৷
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, এ কে এম জাহাঙ্গীরের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকার জনস্বার্থে তাঁকে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া প্রয়োজন বলে বিবেচনা করছে৷ এ জন্য সরকারি কর্মচারী (অবসর) আইনের ক্ষমতাবলে সরকার তাঁকে চাকরি থেকে অবসর দিয়েছে৷
গত বৃহস্পতিবার গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একদল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈঠক করেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়৷ যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এই বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হয়েছ৷ ঘটনার পর গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বৈঠককারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বৈঠককারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীরকে সরকার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে, যিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবর৷ বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, জাহাঙ্গীরের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার জনস্বার্থে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে৷ তিনি বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সুবিধা পাবেন৷বিগত বিএনপি সরকারের সময় জাহাঙ্গীর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (অ্যাপয়নমেন্ট, পোস্টিং, ডেপুটেশন) অনুবিভাগে ছিলেন৷ এই বিভাগ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়টি দেখা হয়৷
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়৷
যেসব নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন তাদের প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হবে৷ নোটিসের জবাব পাওয়র পর তাদের চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবে৷গত ৪ ডিসেম্বর রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একদল সরকারি কর্মকর্তার বৈঠকের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও একে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয় বিএনপি৷ তবে ওই ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়া হবে না জানিয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগেই বলেছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক৷
গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সনাক্ত করার কথা গত রোববার তিনি সাংবাদিকদের জানান৷গত ৪ ডিসেম্বর রাতে কয়েকটি টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদপত্রে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে একটি বৈঠক চলার খবর প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়, যাতে প্রশাসনের একদল কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানানো হয়৷
এরপর রাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই খবরটি আদৌ সত্য নয়, এর কোনো সত্যতা নেই৷সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই সংবাদটি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার করা হচ্ছে৷এই সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও দাবি করা হয় বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমানের স্বাক্ষরে পাঠানো ওই বিবৃতিতে৷
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক কয়েকজন আমলাকে রাতে তার কার্যালয়ে দেখা যায়৷ তবে তারা সবাই অবসরপ্রাপ্ত সরকরি কর্মকর্তা৷ওই দিন খালেদা জিয়া রাত সোয়া ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গুলশানের ওই কার্যালয়ে ছিলেন৷ওই কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় ফখরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তাই বৈঠকে ছিলেন না৷ এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই সাবেক সচিব৷
গত ৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদিক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈঠকের ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার৷ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে সচিবালয়ের সাবেক ও বর্তমান আমলা এবং কর্মচারীরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে গোপনে দেখা করেন৷ অভিযোগ রয়েছে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে ওএসডি কর্মকর্তারা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন৷
ওইদিন রাতেই বিষয়টি ফাঁস হলে প্রশাসনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে৷দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটির রোববার প্রথম অফিস চলাকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদিক৷বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় দেখেছি৷ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে এবং যোগাযোগ করতে পারেন না৷ রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে না৷ ঘটনা তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যাচাই বাছাই করছি৷
ইসমাত আরা সাংবাদিকদের বলেন, ওই ঘটনায়এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি৷ তবে কমিটি গঠনের আগে যেসব প্রাথমিক কাজ করা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে৷সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়৷ তারা শৃঙ্খলা ভাঙতে পারেন না৷ তাই সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে কোন কোন সরকারি কর্মকর্তা অংশ নিয়েছিলেন এবং ঘটনাটি কতটুকু সত্য তাও যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ইসমাত আরা৷তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা এভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে এবং যোগাযোগ করতে পারেন না৷ রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্তও হতে পারেন না৷গত শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আইন তার আপন গতিতে চলবে৷ কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রামণ হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
প্রতিমন্ত্রী জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি৷ কমিটি গঠনের আগে যেসব প্রাথমিক কাজ করা প্রয়োজন তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করছে৷ তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়৷ তাঁরা শৃঙ্খলা ভাঙতে পারেন না৷ তাই সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, কারা সেখানে গিয়েছিলেন এবং ঘটনার সত্যতা কতটুকুতা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে৷সূত্র জানায়, সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ২৫-৩০ জন কর্মকর্তা বৈঠকে অংশ নেন৷ তাঁদের সঙ্গে রাত সাড়ে নয়টা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা বৈঠক করেন খালেদা জিয়া৷