দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর: টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আমানুর রহমান খান ওরফে রানাসহ চারজনকে হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিতই থাকছে৷ হাইকোর্টের দেওয়া ওই আদেশে স্থগিতাদেশ চলমান থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷ বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন৷
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এর ফলে যথাযাথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাঁদের গ্রেপ্তারে বাধা নেই৷সাংসদ আমানুরকে পুলিশ খুঁজছে২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাসার কাছ থেকে ফারুকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এরপর ২১ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়৷ তদন্তের একপর্যায়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত আগস্টে আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে ওেগ্রপ্তার করে৷ তাঁরা সাংসদ আমানুরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত৷
গত ২৭ আগস্ট আনিসুল ইসলাম ও ৫ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন৷ ওই জবানবন্দিতে সাংসদ ও তাঁর চার ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাঁকন ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পার জড়িত থাকার বিষযটি উঠে আসে৷ জবানবন্দির পরপরই আত্মগোপনে চলে যান জাহিদুর ও সানিয়াত৷
১৭সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আমানুর, জাহিদুর ও বাপ্পা এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছানোয়ার হোসেনের পক্ষে একটি রিট আবেদন করা হয়৷ আদালত রিটের শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এই চারজনকে গ্রোরে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন৷ তবে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করলে হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করা হয়৷ আজ এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয় বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল৷
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদকে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজ পাড়ার বাসার সামনে গুলি করে হত্যা করে দুবর্ৃত্তরা৷ওই ঘটনায় ২১ জানুয়ারি ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন৷
এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে হত্যায় সাংসদ, মেয়রের হাত!\’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে হাই কোর্টে আসেন সাংসদ আমানুর রহমান ও তার তিন ভাই৷
১৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট আমানুর রহমান ও তার তিন ভাইকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ দেয়৷ রাষ্ট্রপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে চেম্বার বিচারপতি হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়৷ পরে তা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে৷
প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ বুধবার শুনানি করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে দেয়৷ পাশাপাশি রুল নিষ্পত্তি না হওয়ার পর্যন্ত হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত রাখার আদেশ দেয়৷অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পরে সাংবাদিকদের বলেন, এই আদেশের ফলে সাংসদ আমানুর ও তার তিন ভাইকে গেপ্তারে কোনো আইনি বাধা রইল না৷
এজাহারে নাম না থাকার পরও তাদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ কেন আসছে- এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটাইতো বিষয়৷ গ্রেপ্তারের বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে তদন্তকারী কর্মকর্তার উপর নির্ভর করে৷ কাকে গ্রেপ্তার করবেন আর কাকে করবেন না- সেটা তার বিষয়৷তবে যেহেতু আমানুর ও তার ভাইয়েরা গ্রেপ্তার এড়াতে হাই কোর্টে এসেছেন, তাই ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’ বিষয়টা সামনে চলে আসে৷
আমানুরের তিন ভাইয়ের মধ্যে সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক; জাহিদুর রহমান খান কাঁকন টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং সানিয়াত খান বাপ্পা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা৷