মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার শুধু হুমকির মুখেই নয়, ধ্বংসপ্রাপ্ত৷ রাষ্ট্র স্বয়ং মানবাধিকার হরণ করছে৷বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মানবাধিকার দিবস সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল এ অভিযোগ করেন৷ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে দুদক আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন৷ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনি ব্যঙ্গ করে দুদককে দুর্নীতি কমিশন, দায়মুক্তি কমিশন বলছেন৷ এ ধরনের কথা বলার আগে বিএনপির চেয়ারপারসনকে আয়নায় নিজের চেহারা দেখার পরামর্শ দেন সাহাবুদ্দিন৷ ভৈরব সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতির কথা উল্লেখ করে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা বলেন, দুদক দায়মুক্তি দিচ্ছে৷ কিন্তু ভৈরব সেতুর দুর্নীতি থেকে আপনাকে যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেটা তো উল্লেখ করেন না৷ এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাহাবুদ্দিন যে উক্তি করেছেন সেটি দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য৷ সাংবিধানিক পদধারীর পক্ষে এ ধরনের বক্তব্য শোভন নয়৷ তিনি রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বলেছেন৷ সাংবিধানিক পদে থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তির মতো কথা বলেননি৷ সাহাবুদ্দিন ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন৷ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি৷ গ্যাস, বিদু্যত্‍ এবং তেলের দাম বাড়ানো হলে আবারও লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির হুমকি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ ফখরুল বলেন, সরকার যদি বিদু্যত্‍, গ্যাস ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে,তবে জনগণ, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর৷একই সঙ্গে বিদু্যত্‍, গ্যাস ও তেল খাতের সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷ মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি সরকার গ্যাস, বিদ্যুত্‍ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পায়তারা করছে৷ দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ খবর শোনার পর সাধারণ নাগরিকের মতো আমারাও উদ্বিগ্ন৷ তাই একটি দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না৷সুতরাং ফের বিদু্যত্‍, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়নো হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে৷ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের আমলে গ্যাস-বিদু্যত্‍-তেল অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যেত দাবি করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, চার দলীয় জোট সরকারের আমলের তুলনায় বিদু্যতের গ্রাহক পর্যায়ের দাম বেড়েছে ৭৬.৪২ থেকে ১৮২.৭১ শতাংশ৷ ২০০৬ সালে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদু্যতের মূল্য ছিলো ২.২৫ টাকা থেকে ৩.৫০ টাকা৷ বর্তমানে এর মূল্য ৩.৭৪ টাকা থেকে ৯.৯৩ টাকা৷তিনি আরো বলেন, ২০০৭ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে লোকসান হতো ০.৪৯ টাকা এবং বিদু্যত্‍ খাতে বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ ছিলো ৮২৩ কোটি টাকা৷ বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদু্যতে লোকসান ২.৫৭ টাকা এবং বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা৷ ফখরুলের অভিযোগ এসব অর্থ রেন্টাল- কুইক রেন্টালের নামে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও দলীয় ব্যবসায়ীরা লুটপাট করেছে৷তিনি বলেন, তিন মাস আগেও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিলো ১০০ মার্কিন ডলারের ওপরে৷ বর্তমানে সেটির দাম ৭০ মার্কিন ডলারে নেমেছে৷ অথচ সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের দাম কমায়নি৷ বরং বাড়ানোর পায়তারা করছে৷ ফখরুল বলেন, ২০০৯ সালে ১২.৫ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ছিলো ৮৫০ টাকা৷ এখন তা বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়৷গ্যাস-বিদু্যত্‍-জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে সরকার নির্বাচিত নয়, জনগণ যাদের ভোট দেয়নি, দমন-পীড়ন ও বন্দুকের নলের ওপর নিভর্র করে যারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায় তাদের কাছে ইনসাফ বা ন্যায় বিচার টওত্যাশা করা বাতুলতা মাত্র৷ ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিত্‍সা ও ভোটের অধিকারগুলোই মানবাধিকারের মধ্যে পড়ে৷ পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এই মানবাধিকার রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছে৷কিন্তু বাংলাদেশ এর ব্যাতিক্রম৷তিনি বলেন, এ সরকার কেবল মানবাধিকার ক্ষুণ্নই করেনি, একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছে৷ দেশে আজ মানবাধিকার বলতে কিছু নেই৷ গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে৷ মানহানীর একটি মামলা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল৷ তিনি বলেন, জনগণ যখন এ অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক সেই সময় জনগণের এই আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেল না করে আদালতের মাধ্যমে মোকাবেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার৷ এরই অংশ হিসেবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দায়ের ও রেগ্রফতারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে৷কিন্তু আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, এভাবে জনগণের আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না৷ জনগণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদের দাবি আদায় করে নেবে৷ সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লা-আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল, সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম