আন্তর্জাতিক অপরাধ

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর: জামায়াতকে নিষিদ্ধে নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধী সংগঠন হিসেবে দলটির বিচারের জন্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবু্যনালস) আইনের’১৯৭৩ সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি৷ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে এলে কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেনকে এসব কথা জানান আইনমন্ত্রী৷ এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, চলতি ডিসেম্বর অথবা আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজনৈতিক দলের বিচারের বিধি সম্বলিত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবু্যনালস) আইন’১৯৭৩ পরিবর্তনের সংশোধনী মন্ত্রিসভায় উঠবে৷ নতুন বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরই আইনটি পাস হবে বলেও জানান তিনি৷ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস)- আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধনের প্রস্তাবনা শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে৷প্রসঙ্গত, বিদ্যমান আইনে রাজনৈতিক দলকে সাজা দেয়ার বিধান না থাকায় এ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়৷ মন্ত্রী আরো বলেন, আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনকারী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে৷ উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল রায়ে জামায়াতকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ জামায়াতের আমির গোলাম আযমের রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইবু্যনাল বলেছিলেন, দালিলিক প্রমাণ ও পারিপাশ্বর্িক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি অপরাধী সংগঠনের মতো কাজ করেছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়৷ তারও আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের দেয়া পাঁচটি রায়ের মধ্যে চারটিতেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামিকে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী বাহিনী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর এ সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের দল বলে অভিযুক্ত জামায়াত ও তার সকল অঙ্গ সংগঠন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী বাহিনীগুলোর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হবে৷ একাত্তরে জামায়াতের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষে অনেক আগেই তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন তদন্ত সংস্থা৷ এর ভিত্তিতে প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করে ট্রাইবু্যনালে দাখিল করার পর জামায়াতের বিচার শুরু হবে৷ তবে ব্যক্তির পাশাপাশি দলের বিচারের বিধি সম্বলিত ট্রাইবু্যনাল আইনের সংশোধনী পাসের অপেক্ষায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করতে পারেননি প্রসিকিউশন৷ এ আইন চূড়ান্ত হলে তারা এটি তৈরি করে দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটররা৷ বিএনপিকে ভালো মন্দ কোনো বিষয়েই জিজ্ঞাসা করা যায় না বলে কানাডার হাইকমিশনারকে জানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে কানাডার হাইকমিশনারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী৷ এ সময় আইনমন্ত্রী হিদার ক্রুডেনকে বলেন, যে রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না এবং আইনের শাসন মানে না সেই বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না৷কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী৷ কানাডার দূতের সঙ্গে কি কথা হলো সাংবাদিকদের টওশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, উনি (হাই কমিশনার) বলেছেন একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিএনপিকে সমর্থন করে এবং এক সময় ভোট দিয়েছিল৷ তাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করা উচিত বলে তিনি প্রস্তাব দেন৷ আমি বলেছি, উন্নয়নের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করতে চাই৷ কিন্তু যে রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, যে রাজনৈতিক দলের নেত্রী আইনকে তোয়াক্কা করেন না তার সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না৷খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় আদালতে ৪৮ বারের মধ্যে ৪০ বারই হাজির হননি জানিয়ে মন্ত্রী এ সময় বলেন, এই যাদের অ্যাটিচু্যড, তাদের সঙ্গে সংলাপ তো দূরের কথা, ভালমন্দও জিজ্ঞাসা করা যায় না৷